বাংলাদেশ অনলাইন : | মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট ২০২৪
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, পূজার্চনা ও বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য প্রার্থনার মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব জন্মাষ্টমী উদযাপিত হয়েছে। প্রার্থনায় দেশ ও জাতির শান্তি ও মঙ্গল কামনা করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, কয়েক হাজার বছর আগে পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন দুষ্টের দমন, সৃষ্টের পালন ও সজ্জনদের রক্ষা করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠায় মহাবতার শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল।
২৭ আগস্ট সকাল ৮টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞের মাধ্যমে জন্মাষ্টমীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ উপলক্ষে বিকেল ৩টার দিকে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এর আগে রাজধানীর পলাশীর মোড়ে শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। পলাশী মোড় থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে জগন্নাথ হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মোড়, বঙ্গবাজার, নগর ভবন, গুলিস্তান মোড়, নবাবপুর রোড, রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নিতে ঢাকা মহানগর ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে ভক্তরা আসেন। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও আন্তর্জাতিক
কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘসহ (ইসকন) বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে। এ ছাড়া রাজধানীর রমনা কালীমন্দির, রাজারবাগের বরদেশ^রী কালীমাতা মন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরসহ সারা দেশে মন্দির, পূজামন্ডপ ও ধর্মীয় সংগঠন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শোভাযাত্রাসহ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে।
জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা এমন একটা বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, যেখানে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। সবার সমান অধিকার থাকবে। এই রাষ্ট্রের মালিকানা সবার থাকবে। আমরা একটি পরিবারের মতো থাকব। আমরা যে যার ধর্ম পালন করব, অন্য ধর্মকে আমরা সমানভাবে শ্রদ্ধা করব। অন্য ধর্মের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করব।’
তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্যের বাংলাদেশ মেনে নেওয়া হবে না। দেশের যেকোনো জনগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যদি অনিরাপদ থাকে, তাহলে গোটা বাংলাদেশ অনিরাপদ থাকে। আমরা মনে করি, ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র, সরকার ও সব জনগণের। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাইরের কেউ ষড়যন্ত্র করতে পারবে না।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল প্রমুখ।
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা থেকে জানান, খুলনায় মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি জন্মাষ্টমী উদযাপিত হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে গতকাল খুলনা মহানগর ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র মন্দিরভিত্তিক ধর্মীয় ও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠিত হয় অভিষেক, কৃষ্ণপূজা, আরতী কীর্তনসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান।
দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে শোভাযাত্রা ও বড় ধরনের কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন না করে সেই অর্থ বন্যাদুর্গতদের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূজা উদযাপন কমিটি। গতকাল সকাল থেকে নগরীর মন্দিরে মন্দিরে ভক্তদের ভিড় দেখা যায়। খুলনা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার কুন্ডু বলেন, ‘বড় ধরনের বন্যায় দেশের বহু মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ফলে জন্মাষ্টমীর অন্যতম অনুষ্ঠান শোভাযাত্রাসহ কিছু অনুষ্ঠান আমরা বাদ দিয়েছি। উৎসব ছোট করে আমরা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
Posted ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh