শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪ | ১৬ কার্তিক ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

ওবায়দুল কাদের ‘পালাব না’ বলে কোথায় গেলেন, জানেন না আ. লীগ নেতারাও

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

ওবায়দুল কাদের ‘পালাব না’ বলে কোথায় গেলেন, জানেন না আ. লীগ নেতারাও

ছবি : সংগৃহীত

‘আমরা এই দেশে জন্মেছি, এই দেশে মরব, পালাব না। কোথায় পালাব! পালাব না, প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠব’—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে গত বছর ২৯ জানুয়ারি এ কথা বলেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত আওয়ামী লীগের এক জনসভায় অংশ নিয়ে ওবায়দুল কাদের যখন এ বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দেড় বছরে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় অনেক পানি গড়িয়েছে। বিএনপির আন্দোলন নস্যাৎ করে গত ৭ জানুয়ারি একতরফা ভোট করে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ওবায়দুল কাদের কোথায়, তার কোনো হদিস নেই। শারীরিকভাবে আত্মগোপনে। নেই ভার্চ্যুয়াল দুনিয়াতেও। সরকার পতনের আগে যিনি প্রায় প্রতিদিন বক্তব্য-বিবৃতি দিতেন, গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য গত ২ মাস ১০ দিন ধরে তাঁর কোনো বক্তব্য-বিবৃতি নেই।

এর মধ্যে ওবায়দুল কাদেরের ‘পালাব না’ বক্তব্য নিয়ে গান তৈরি হয়েছে, যা ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ ছাড়া তাঁর নানা বক্তব্য নিয়ে ‘মিম’ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাঁর বক্তব্যের ভিডিও নিয়ে ‘প্যারোডিও’ হচ্ছে। সরকার পতনের পর শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতা দেশ ছেড়েছেন। তাঁদের বড় অংশই ভারতে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। শুধু শীর্ষ নেতা নন, মাঝারি এবং সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাও ভারতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। অনেক নেতা বিদেশে থেকে গণমাধ্যমকর্মী, দেশে-বিদেশে থাকা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কমবেশি যোগাযোগ রাখছেন। গত প্রায় আড়াই মাসে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তাঁদের কেউ ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এমনকি ওবায়দুল কাদের কোনো নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, এমন তথ্যও নেই কারও কাছে।

‘খেলা হবে’ বলে নিজেই লোকচক্ষুর আড়ালে

ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা কথা প্রচলিত আছে। কেউ কেউ বলছেন, তিনি ৫ আগস্টেই যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে গেছেন। কারও কারও মতে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। আবার কেউ কেউ ধারণা করছেন, তিনি দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে আছেন। ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে কারও যোগাযোগ হয়েছে, এমন তথ্য নেই।

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশে ও বিদেশে থাকা অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন, এমন বেশ কিছু অডিও প্রকাশ পেয়েছে। দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ওবায়দুল কাদের কারও সঙ্গে কথা বলেছেন, এমন তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। ৫ আগস্টের আগেও প্রায় প্রতিদিন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধীদের আন্দোলনের সময় তিনি পাল্টা সভা-সমাবেশে নিয়ে মাঠে থেকে বক্তব্য দিয়েছেন। ‘খেলা হবে’ বলে আলোচনা-সমালোচনায় এসেছেন। কিন্তু তিনি নিজেই চলে গেলেন লোকচক্ষুর আড়ালে, এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

দলে কাদেরকে নিয়ে বিস্ময়

ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, ছাত্রজীবন থেকেই ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য দিতে পারদর্শী ছিলেন। এক–এগারোর আগে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় বঙ্গভবনের অক্সিজেন বন্ধ করে দেওয়ার বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। তখন তিনি আওয়ামী লীগের ভুঁইফোড় নানা সংগঠনের ব্যানারে আলোচনা সভা ও গোলটেবিলে অংশ নিয়ে নিয়মিত বক্তব্য দিয়েছেন। তখন দলের অনেকেই তাঁকে ‘জাতির বিবেক’ বলে টিপ্পনী কাটতেন। ২০১১ সালের শেষ দিকে ওবায়দুল কাদেরকে সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। দলের ভেতরে আলোচনা আছে যে ভুঁইফোড় সংগঠনের কর্মসূচিতে গিয়ে সরকারের নানা সমালোচনা করার পর তাঁকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়। মন্ত্রী হওয়ার পর সারা দেশ চষে বেড়িয়েছেন, গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে বক্তব্য দিয়েছেন। ২০১৬ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পর ওবায়দুল কাদেরের গণমাধ্যমে উপস্থিতি আরও বেড়ে যায়। এরপর তিনি টানা তিন মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। সেই ওবায়দুল কাদের সরকারের পটপরিবর্তনের পর নিখোঁজ হয়ে গেলেন! এটা দলের নেতা-কর্মীদের কাছে যেমন বিস্ময়ের, আবার ক্ষোভেরও জন্ম দিয়েছে। ভারতে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর দলের অন্য নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতেন না। এখন সুযোগ না পাওয়া নেতারা সরব হওয়ার চেষ্টা করছেন। ওবায়দুল কাদের পুরোপুরি নীরব আছেন।

ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিন নিজ মন্ত্রণালয় কিংবা দলের কর্মসূচিতে অংশ নিতেন এবং গণমাধ্যমে সেই বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। কোনো কর্মসূচি না থাকলে গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য বিবৃতি পাঠাতেন। করোনা মহামারির সময় সরকারি বাসভবন থেকে নিয়মিত ভিডিও ব্রিফিং করতেন। ২০১৯ সালের মার্চে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় তিন মাস দেশে ও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই সময়ের পর এবারই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতি নেই গণমাধ্যমে। আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ওবায়দুল কাদের যেকোনোভাবে গণমাধ্যমের প্রচারের আলোয় থাকতে পছন্দ করতেন। কী পরিস্থিতিতে তিনি গত আড়াই মাস গণমাধ্যম ও নেতা-কর্মীদের থেকে দূরে আছেন, তা তিনিই ভালো জানেন।

ক্ষুব্ধ দলের কর্মীরা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ যখন উত্তাল, সেই সময় ৩১ জুলাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। বরাবরের মতো অন্যদের সুযোগ না দিয়ে নিজে বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করতে চেয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। ওই দিন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েন ওবায়দুল কাদের। এ সময় সাবেক ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ ‘ভুয়া ভুয়া’ বলেও স্লোগান দেন। একপর্যায়ে মিলনায়তন ছেড়ে তড়িঘড়ি চলে যান তিনি।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকে সেদিন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, দল বিপদে পড়ার পর সাবেক ছাত্রনেতাদের ডাকা হয়েছে। অথচ অন্য সময় তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন দলের সাধারণ সম্পাদক। মুষ্টিমেয় কিছু ‘চাটুকার’ নিয়ে চলতেন তিনি। এ জন্যই তাঁরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ছাত্র আন্দোলনে দল ও সরকারের ব্যর্থতা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ বেড়েছে বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন। আর এই দোষারোপের কেন্দ্রবিন্দুতে ওবায়দুল কাদেরকেও রাখছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এমনকি ওবায়দুল কাদের প্রকাশ্যে এলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছেন কোনো কোনো নেতা।

ওবায়দুল কাদেরের সশরীর এবং গণমাধ্যমে অনুপস্থিতির সময়টাতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দলের ‘ভেরিফায়েড’ ফেসবুক পেজে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তবে তাঁদের এসব বক্তব্য নিয়েও দেশে থাকা দলের কোনো কোনো নেতা-কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, বিদেশে থেকে সরকারকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে বক্তব্য দেওয়ার কারণে দেশে থাকা নেতা-কর্মীদের বিপদ বাড়ছে।

ফেসবুকেও ছবি আসছে না কাদেরের

ওবায়দুল কাদের তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সর্বশেষ পোস্ট দেন গত ৫ জুলাই। ওই দিন তিনি পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্ভিস এরিয়া-১ নামের এলাকায় নানা ভঙ্গিমায় নিজের ১২টি ছবি পোস্ট করেন। এই পোস্টে এক লাখের বেশি লাইক, লাভ, হা হা রিয়েক্ট হয়। এর মধ্যে ৫২ হাজারের মতো হা হা রিয়েক্ট। কমেন্ট করেন ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ। শেয়ার হয় সাড়ে সাত হাজারের বেশি। এরপর আর কোনো পোস্ট নেই ওই ফেসবুক পেজে।

এর আগে নিয়মিত বিরতিতে নিজের বাসার সামনে, অফিসকক্ষে, পদ্মা সেতু এলাকায় নানা ভঙ্গিতে দাঁড়ানো ও বসা ছবি পোস্ট করেছেন ওবায়দুল কাদের। কখনো কখনো বিদেশি রাষ্ট্রদূত কিংবা অতিথির সঙ্গে বৈঠকের ছবিও দিতেন। তবে দলীয় কর্মসূচির ছবি দিতে খুব একটা দেখা যায়নি।

 

Posted ৬:২৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1569 বার পঠিত)

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: weeklybangladesh@yahoo.com

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.