বাংলাদেশ অনলাইন : | বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
বাংলাদেশে উন্নয়নের পথে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক খাতের নাজুকতার পাশাপাশি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে এখনো বড় বাধা মনে করে বিশ্বব্যাংক। এসব চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশে অর্থনীতির গতি ধীর করে দিতে পারে- যা ডেকে আনতে পারে মন্দা। এজন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো এক বছর চাপে থাকবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমে ৪ শতাংশ হবে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে।
বিশ্বব্যাংকের এই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত জানিয়েছেন দেশের বিশেষজ্ঞরাও। তাদের মতে, বিশ্বব্যাংক যে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেছে; তাতে দ্বিমতের কোনো কারণ নেই। বিশ্বব্যাংকের চিহ্নিত দুর্বলতার বাইরেও আরো কিছু দুর্বলতা রয়েছে। প্রবৃদ্ধি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে যে রোডম্যাপ দরকার- সেটা দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করেন তারা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্বব্যাংক যা বলছে- দেশের অর্থনীতির চাপের কথা এটার সঙ্গে দ্বিমত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
গত দুবছর ধরে আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি গড়ে ১০ শতাংশের কাছাকাছি অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক স্তরে নামিয়ে আনতে পারিনি। এমনকি সঠিকভাবে এড্রেস করতেও সক্ষম হইনি। বিশ্বব্যাংক অর্থনীতির যে চাপের কথা বলছে এর বাইরেও কিছু চাপ রয়েছে। আমাদের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ- দুই খাতেই স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। দেশে বিনিয়োগ না বাড়লে প্রবৃদ্ধি হবে না। সুতরাং, প্রবৃদ্ধি বাড়াতে কীভাবে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা যায়- এটা একটি অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা যেসব নীতি গ্রহণ করছি, সেটিও এখনো সঠিক পথে হাঁটছে না। ফলে, বিনিয়োগকারীদের কাছে সঠিক ম্যাসেজ যাচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এ মুহূর্তে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বহিস্থ খাতের চাপ, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এসব কারণে প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বাড়বে না। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেননা, এখনো ৮৪ দশমিক ৯ শতাংশ কর্মসংস্থান অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। এটি অত্যন্ত উচ্চ সংখ্যা। ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কর্মসংস্থান কমেছে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ হারে। আর্থিক খাত নিয়ে বলতে গিয়ে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে নানা ধরনের সংকট রয়েছে বিশেষ করে খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। সরকারের অনেক প্রচেষ্টার পরও সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এছাড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদেও হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ গ্রহণ কমেছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্ব ব্যাংকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। এতে ওয়াশিংটন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ধ্রæব শর্মা, অর্থনীতিবিদ নাজমুস খান ও বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে থাকবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, মধ্যবর্তী পয়েন্ট হবে ৪ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংক এপ্রিলে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। চলমান অর্থবছরের বাজেটে সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সেই হিসাবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সরকারি লক্ষ্যের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম হবে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী কমে গেলে তা হবে কোভিড মহামারির পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
Posted ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh