বাংলাদেশ অনলাইন : | সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
বক্তব্য রাখছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত
ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর শিববাড়ী চত্বরে (বাবরী চত্বর) জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনসহ ৫দফা দাবিতে ইসলামপন্থী ৮ দলের খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জামায়াত আমির বলেন, ‘ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন। প্রশাসনিক ক্যু করার চেষ্টা করছে। আগামী নির্বাচনে ছলেবলে কৌশলে কেউ কেউ বিভিন্ন জায়গায় বসে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। জনগণ ভোট দিক বা না দিক ক্ষমতায় আমাদের যেতেই হবে। কিন্তু বেলা শেষ, দিনও শেষ ওই সূর্যও ডুবে গেছে। এ দেশে এটা আর হবে না। এটা আর আমরা হতে দেব না ইনশাল্লাহ। আজ চাঁদাবাজদের দৌরাত্মে সমাজজীবন অতিষ্ট, তটস্থ, ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বিনিয়োগকারী শিল্পপতি ব্যবসায়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কেউ শান্তিতে নাই। আগের চেয়ে চাঁদার রেট বেড়ে গেছে বলে সবাই বিষাক্ত নিশ্বাস ফেলে।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটা দেশকে সভ্য দেশ হতে হলে সেই দেশটাকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হয়। আজ কিছু দল এবং ব্যক্তি বাংলাদেশকে দফায় দফায় তারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করে বিশ্বের দরবারে অপমানিত করেছে। এদেশের সবার অতীতের রেকর্ড বাংলাদেশের জনগণের হাতে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দু:খের বিষয় সব ফ্যাসিবাদ, দুর্নীতি, বৈষম্য, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের বিপ্লব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই বিপ্লবের পরের দিন থেকেই একটি গোষ্ঠী নিজেদের কপাল কিসমত গড়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে। তারা বলেন, আগেও ভালো ছিলাম না, এখন আরও খারাপ। কোনো ইসলামী দলের নামে চাঁদাবাজি তাদের কপালে জুড়ে দেওয়া হয়নি। কোনো দেশপ্রেমিক দল ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজ হয়ে আবির্ভূত হয়নি। যারা আবির্ভূত হয়েছিলেন দায় ও দরদ নিয়ে তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। তাদেরকে বলেছিলাম, এটি শহিদদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। এটা বন্ধ করতে হবে। যদি বন্ধ করা না হয়, বিপ্লবী জনগণ, তরুণ জনতা, ফুলের মতো বাচ্চা নিয়ে ওই মায়েরা যারা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন তারা আমাদের ক্ষমা করবে না। বন্ধ করা হয়নি চাঁদাবাজি, চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে।’
জামায়াত আমির তরুণ-যুবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা তরুণ যুবকদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই যাদের বয়স ৩৫ বা তার নিচে একটা ভোট দিতে পারো নাই। আগামীতে ভোট নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলুক, কেউ চুরি করুক, কেউ ভোট হাইজ্যাক করুক, তোমরা কি তা বরদাস্ত করবে? আমরা তোমাদেরকে কথা দিচ্ছি, তোমাদের ভোটের পাহারাদারি করার জন্য আমরা যুবক হয়ে সেদিন তোমাদের সঙ্গে একইভাবে লড়ব ইনশাল্লাহ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন থেকে আমরা সারাদেশে জনগণের ব্যাপক ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি। এই ভালোবাসায় ঈর্ষান্বিত হয়ে মনের জ্বালায় কেউ আমাদের ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড, পোস্টারগুলো ছিঁড়ে খান খান করে ফেলছে। বন্ধুগণ টের পান নাই, জনগণ আজকাল পোস্টার, লাইট পোস্টার, রাস্তায় টানানো পোস্টার দেখে সিদ্ধান্ত নেয় না। আজকে তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যাদেরকে তারা ভালোবেসেছে, তাদের বুকের ভেতরে তার পোস্টার স্থায়ীভাবে স্থাপন করেছে। রাস্তার পোস্টার ছিঁড়তে পারবা, বুকের পোস্টার ছিড়তে পারবা না। অতএব ওই পোস্টার ছেঁড়াছিঁড়ি করে কোনো লাভ নেই।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘দিশাহারা হয়ে, হতাশ হয়ে ক্ষব্ধ হয়ে চোরাগলিতে কেউ যদি হাঁটার চিন্তা করেন, তাহলে প্রয়োজনে আরেকটা ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে ইনশাল্লাহ। যেই ৫ আগস্ট সন্ত্রাসকে, ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, সেই ৫ আগস্ট প্রয়োজনে রুখে দেবে ইনশাল্লাহ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন থেকে ছাত্র-জনতা, শ্রমিক জনতা, ব্যবসায়ী জনতা, আপামর জনতা, শিশু থেকে বৃদ্ধ সমস্ত মানবতার ঐক্য আমাদেরকে গড়ে তুলতে হবে ইনশাল্লাহ। এই ঐক্যই আগামী দিনের জাতীয় সংসদে যাবে বিজীয়র বেশে ইনশাল্লাহ। এই বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। কারণ আমরা আছি মজলুমের পক্ষে, আমরা আছি অপশাসনের বিরুদ্ধে, আমরা আছি বৈষম্যের বিরুদ্ধে, আমরা আছি ন্যায়ের পক্ষে, আমরা আছি কোরআনের বিধানের পক্ষে। এ বিজয় আমাদের হবেই ইনশাল্লাহ।’
জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ‘কেউ কেউ জাতির মধ্যে হিংসা সৃষ্টি করে জাতিকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করতে চায়, চিংড়ি মাছের মতো কেউ কেউ পেছনে দৌড়াতে চান, আপনারা চিংড়ির মাছের চাষের অঞ্চলের মানুষ, চিংড়ি যখন দৌড়ায় সামনের দিকে পথ খুঁজে পায় না। শুধু পেছন দিকে যায়। কেউ কেউ ৭২’র সংবিধান নিয়ে কামড় দিয়ে পড়ে থাকতে চান, আমাদের বন্ধুদের নিয়ে দীর্ঘদিন একসঙ্গে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম লড়াই করেছি তাদের কাউকে কাউকে সে কথা বলতে শুনি। মনে রাখবেন, বাংলাদেশে প্রথম দুঃশাসনের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ওই সংবিধানের আমূল পরিবর্তন করেছিলেন। এখন যদি কেউ ৭২’র সংবিধানের পক্ষে কথা বলেন, কার্যত তিনি শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন। ৭২’র সংবিধানের কথা আজ যিনি সংকটজনক অবস্থায় আছেন, জাতির এক শ্রদ্ধার কেন্দ্রবিন্দুতে যার অবস্থান সেই খালেদা জিয়াও ৭২’র সংবিধানের পক্ষে কথা বলেননি। আমরা আশা করব, যারা এই দুইজনকে ভালোবাসেন তারা ভুলেও আর ৭২’র ফ্যাসিবাদী সংবিধানের কথা বলবেন না।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা ৮ দলের বিজয় চাই না, আমরা ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই, আমরা কোনো দল বিশেষের বিজয় চাই না আমরা মজলুম জনগণের বিজয় চাই। আমরা আল্লাহর কোরআনের বিজয় চাই। সেই বিজয়ের মিছিলে আপনার সবাই লড়াই করে যেতে রাজি আছেন। আমরা যে ৫ দফার লড়াই করছি, সেই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।’
দুপুর ১২ টায় অর্থসহ পবিত্র কুরআন তেল্ওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও পির সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীম। এ ছাড়া খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মসজিলেসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ড. হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামীর আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হাক্কানি বক্তব্য দেন।
এ সময় জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহানগরী সহ-সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিনের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন খেলাফত আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন, মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানি, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, জামায়াতে ইসলামীর খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি মোস্তফা কামাল, খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, খুলনা জেলা আমির মাওলানা মুহা. এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমির উপাধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম মুকুল, বাগেরহাট জেলা আমীর মাওলানা মো. রেজাউল করিম প্রমুখ।
Posted ১০:১৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh