বাংলাদেশ অনলাইন : | রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে একদিনে ১৮ জন নিহতের মধ্যে দিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) সবেচেয়ে রক্তাক্ত দিনে পরিণত হয়েছে। পুলিশের স্টান গ্রেনেড, টিয়ার শেল, ফাঁকা গুলি কিছুই তাদের দমাতে পারছে না। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে শেষ পর্যন্ত গুলি ছুড়তে থাকে জান্তা সরকারের সেনাসদস্য ও দাঙ্গা পুলিশেরা। আর হতাহতের রক্তে লাল হয়ে উঠে রাজপথ। আহত রক্তাক্ত অনেককে রাজপথে পড়ে থেকে সহযোগিতার আশায় চিৎকার করতে দেখা যায়। দেশটিতে তুমুল জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন আরও অনেক। গ্রেপ্তার হয়েছেন সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ। মিয়ানমারের ফার্স্ট কার্ডিনাল চার্লস মোং বো বলেন, মিয়ানমার এখন কার্যত যুদ্ধক্ষেত্র। খবর রয়টার্সের।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তরের এশিয়া শাখা জানায়, রবিবারের বিক্ষোভে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। চলমান বিক্ষোভে গণতন্ত্রের জন্য এ পর্যন্ত প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন ২১ জন। রবিবার আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। বিক্ষোভ থেকে সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা দেশটিতে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হচ্ছে, মিয়ানমারের বিভিন্ন শহর থেকে বিক্ষোভে নিহত হওয়ার খবর আসছে। ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়, দাওয়েই শহরে মারা গেছেন অনেকে। মায়েক, বাগো, পুকোকেু শহর থেকেও মৃত্যুর খবর আসছে। সেনাবাহিনী বলছে, একজন পুলিশও বিক্ষোভে নিহত হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা জাতিসংঘকে দ্রুত কার্যকরী প্রদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এক বিক্ষোভকারী টুইটারে লিখেছেন, ‘জাতিসংঘের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আর কত প্রাণ বলিদান দিতে হবে।’
দেশটির রাজনীতিক এবং চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দিকে পাখির মতো গুলি করেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে এর আগে বলা হয়েছিল, রবিবার সকালের দিকে মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ হয়। শিক্ষকদের বিক্ষোভে স্টান গ্রেনেড, গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। বিক্ষোভ দমনে পুলিশের পাশে সেনাবাহিনীও রাজপথে নামে। শুরু হয় গুলিবর্ষণ। রক্তরঞ্জিত হয় রাজপথ। এ শহরে অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বুকে গুলিবিদ্ধ একজনকে হাসপাতালে নেওয়ারে পরপরই মারা যায়। গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া এসব মানুষের মধ্যে একজন শিক্ষকও আছেন।
এদিকে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে অন্তত তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে এক নারী। তার মাথায় গুলি লেগেছিল। শহরটির বাগো এলাকায় প্রাণ হারান এক জন। মান্দালয়ের নিহতদের একজন চোখে গুলিবিদ্ধ হন। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় দাওয়েই শহরে অন্তত চার জন।
এ নিয়ে দেশটিতে গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত মোট ২১ জনের প্রাণহানি ঘটল। এ দিন রাজধানী নেপিদো, ইয়াঙ্গুল ছাড়াও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাসিও এবং দেশটির একবারের দক্ষিণের মায়েক শহরে পুলিশ ব্যাপক দমন-পীড়ন চালায়।
আগের দিন শনিবারও জান্তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। দেশটির দাওয়েই শহরে, বিক্ষোভকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করতে গেলে বাধা দেয় দাঙ্গা পুলিশ। এ ছাড়া দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ম্যান্দালয়ে এদিন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও। এ সময় হাতে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার দিয়ে জান্তা সরকারবিরোধী স্লোগানের পাশাপাশি অবিলম্বে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানের সমালোচনা করে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
Posted ৫:২২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh