বাংলাদেশ অনলাইন : | শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত সময়েই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের যে তারিখ ইসি দিয়েছে, সেখান থেকে পিছিয়ে যাওয়ার মত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে তিনি মনে করেন না। ১৮ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন জামায়াতের আমির।
ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক সংসদীয় আন্ডার-সেক্রেটারি অফ স্টেট সীমা মালহোত্রার আমন্ত্রণে তিনি একদিনের সফরে লন্ডনে যান।
নির্বাচন নিয়ে নিয়ে শফিকুর বলেন, “নিবার্চন হবে, নিবার্চনের পরে যদি আমরা বিরোধী দলে বসি, সরকারি দলে যারা যাবে তাদেরকে সঙ্গত সকল ব্যাপারে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করবে, তাদের চাইতে হবে না। আমাদের যদি জনগণ তাদের ভালোবাসা দিয়ে নির্বাচিত করেন, আমরা বলেছি আমরা ভিন্ন চিন্তা করছি।”
পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় সরকারের ভাবনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের চিন্তা হচ্ছে অন্ততপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য আমাদের একটি জাতীয় সরকার হওয়া উচিত। নিবার্চনে যারাই অংশগ্রহণ করবেন সকল স্টেকহোল্ডারদের আহ্বান জানাবে। তবে শর্ত দুটো, তা মানতেই হবে, প্রথমত তারা নিজেরা দুনীতি করবেন না এবং দুনীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না। দুই নম্বর শর্ত হচ্ছে বিচার সবার জন্য এবং এখানে কেউ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। এই শর্ত যারা মানবেন তাদেরকে সাদর আমন্ত্রণ জানাব।”
বৃহস্পতিবার সীমা মালহোত্রার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে শফিকুর রহমান বলেন, আগামীতে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের মজবুত ভিত্তি পাওয়া, আইনের শাসন এবং সুবিচার সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, দেশকে দুনীর্তিমুক্ত করা, পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানো এবং এর পাশাপাশি আঞ্চলিক এবং দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, “অনেক বিষয়ই আমরা আলোচনা করেছি, তিনি খুবই আন্তরিক ছিলেন এবং তাদের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নিবার্চনের জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।
“তারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন, তোমাদের জাতি এখন একটা পরিবর্তন চায়।”
শফিকুর রহমান বলেন, “এর মানে হচ্ছে বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষের মতই আমাদের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার ও বন্ধুরাও আশা করে বাংলাদেশে একটা পরিবর্তন খুবই প্রয়োজনীয়।”
আন্ডার-সেক্রেটারির সঙ্গে বৈঠকের পর পূর্ব লন্ডনের একটি হলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে এক মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে মিলিত হন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সেখানে তিনি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির আত্মার মাগফেরাত ও পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া জুলাই বিপ্লবীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরাকরের কাছে দাবি জানান।
হাদির হত্যাকারীর ‘পালিয়ে যাওয়া’ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে শফিকুর রহমান বলেন, “সবাই বলে ভারত আমাদের বন্ধু দেশ। আমরাও চাই বন্ধু হিসাবে ভারত তাদের দায়িত্ব পালন করুক। ভারতের উচিত হবে বাংলাদেশের চিহ্নিত, পলাতক, সাজাপ্রাপ্ত যতগুলা মানুষ আছে, সবগুলোকে সসম্মানে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া। এটাই হবে বন্ধুত্বের কাজ।”
এক প্রশ্নের উত্তরে শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা এখন গ্লোবাল ভিলেজের গ্লোবাল সিটিজেন। ভিন্ন ভিন্ন দেশের সাথে আমাদের পারস্পরিক আগ্রহ থাকা খুবই জরুরি, এবং তাদের এই আগ্রহকে আমরা অন্যায় মনে করি না। তবে এই আগ্রহটি যদি কোনো ধরনের চাপের আকারে আসে, তা আমরা সঠিক মনে করি না। আগ্রহ দেখাতে গিয়ে কোন দেশ যদি নিজের মতে করে আমাদের দেশে সরকার ব্যবস্থা বানাতে চায় এটাও আমরা চাই না।”
ক্ষমতায় এলে জামায়াত প্রথমে ‘মানুষের হাত কাটবে নাকি মৌলিক সমস্যার সমাধান করবে’-এমন প্রশ্নে শফিকুর রহমান বলেন, “এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, হাততো কাটবোই না, যে অভাবের তাড়নায় হাতটা চুরির দিকে বাড়িয়েছে, তার হাতে আগে খাদ্য তুলে দেব ইনশাল্লাহ। তার প্রয়োজনটা আগে পূরণ করা হবে। সামাজিক ভারসাম্য আনা হবে, সুবিচার কায়েম করা হবে।
“তারপরেও যদি কেউ লোভের বশবর্তী হয়ে এটা করে তাহলে তাকে দুভার্গ্যবান বলতে হবে। আর আমরা চাই না একটা হাতও কাটা পড়ুক। আমরা চাই সবগুলো হাত ইনট্যাক্ট থাকুক, সবগুলো হাত ভালো থাকুক।”
শফিকুর রহমান বলেন, কূটনীতিকরা জানতে চেয়েছেন নির্বাচনে জামায়াত জয় পেলে কোন মডেলের সরকার হবে-আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান না সৌদি আরবের মডেলে?
“ক্ষমতায় গেলে মদীনা মডেলের সরকার হবে। মদীনা মডেলটি ছিল সবার মিলে মিশে এক সাথে চলার। সব ধর্মকে হযরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনা চাটার্রের মাধ্যমে স্থান করে দিয়েছিলেন। এটাই দুনিয়ার প্রথম লিখিত সংবিধান ছিল। এরপরে এখান থেকে অন্যান্য সংবিধান ডেভেলপ করেছে।”
Posted ৪:৩৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh