রুমান হাফিজ | রবিবার, ২১ জুন ২০২০
পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব নারী বাধা ডিঙিয়ে বেরিয়ে আসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাতে এশিয়া মহাদেশের সর্বাধিক রাষ্ট্র ভ্রমণকারী প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নাজমুন নাহারের নাম উল্লেখযোগ্য। বিশ্বভ্রমণে এ সময়ের ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাংলাদেশের মেয়ে নাজমুন নাহার। নাজমুন বাংলাদেশ ছাড়িয়ে পৃথিবীর অনেক নারীদেরই অগ্রযাত্রার আইকন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
ইতোমধ্যেই ব্রুনাইতে ১৪০ দেশ ভ্রমণের ইতিহাস গড়েছেন তিনি। মুসলিম বিশ্বের নারীরা এখনও অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষতান্ত্রিকতার বেড়াজালে নিজেদের মুক্ত করতে পারেননি পুরোপুরিভাবে সেখানে নাজমুন নাহার বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব শান্তি, নারীর সমতা ও ক্ষমতায়নসহ সব জাতি, ধর্ম, বর্ণের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন পৃথিবীর পৃতিটি দেশে অভিযাত্রা করবেন বলে। যার পৃতিটি ভ্রমণ একা একা করেছেন তিনি এবং পরবর্তী দেশগুলো একাই অভিযাত্রা করবেন। এই দুর্দান্ত সাহসী নারীটি বেশির ভাগই করেছেন সড়কপথে কম খরচে।
এরই মধ্যে নাজমুন নাহার মহাপর্বত, মহাপ্রলয়, মহাসমুদ্রের বাধা, নগর-বন্দর-শহরের দীর্ঘপথ আর সীমান্তের বাধা, মানবসৃষ্ট অনেক বাধা সব কিছু অতিক্রম করে, সব দুর্গম কঠিন দুয়ার ভেঙে-ভেঙে স্বদেশের পতাকা হাতে দেশে দেশে বিগত ২০ বছর অভিযাত্রা করছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা হাতে এবং ১৪০টি দেশ ভ্রমণ করার রেকর্ড অর্জন করেন। তিনি থেমে নেই, থেমে থাকার মতো নয় তিনি। তার যাত্রা অব্যাহত থাকবে ২০০টি দেশে বাংলাদেশের পতাকাকে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত। এই প্রত্যয়ী নারী এখন পর্যন্ত সর্বাধিক রাষ্ট্র ভ্রমণকারী প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছেন।
২০২০, জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি তিনি ভ্রমণ করেছেন এশিয়ার পাঁচটি দেশ। ২৯ জানুয়ারি ২০২০ নাজমুন নাহার পৌঁছেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র বোর্নিও দ্বীপের উত্তর উপকূলে অবস্থিত ব্রুনাইয়ের রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ান। নাজমুন নাহার ১৪০তম দেশ ভ্রমণের ঐতিহাসিক রেকর্ড অর্জন করেন ব্রুনাইতে।
২০২০ এর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তিনি শুরু করেন এই অভিযাত্রা। নাজমুন নাহার এবারের অভিযাত্রায় ম্যাপ করেছেন এশিয়া মহাদেশের দেশ মিয়ানমার, জাপান, তাইওয়ান, ফিলিপিনস হয়ে ব্রুনাই পর্যন্ত।
প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তিতে ছুটে বেরিয়েছেন দেশ হতে দেশান্তরে। তার ভ্রমণের তালিকায় রয়েছে- পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিটি দেশ। তিনি সড়কপথে ভ্রমণ করেছেন ইউরোপ ও এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে টানা ঘুরেছেন ৩৫ দেশ।
২০১৮ সালে ভ্রমণ করেছেন ৩২ দেশ। আর ২০১৮ নবেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ঘুরেছেন পশ্চিম আফ্রিকার ১৫ দেশ। ২০১৯ এর এপ্রিল থেকে ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঘুরেছেন ১৫ দেশ।
সর্বশেষ ভ্রমণ করেছেন ব্রুনাই। নাজমুন নাহারে স্বপ্ন জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত বিশ্বের প্রতিটি দেশসহ সকল টেরিটোরি দেশে উড়াতে চান লাল-সবুজের পতাকা।
এবারের অভিযাত্রায় নাজমুন মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনসহ অন্যান্য শহরে অভিযাত্রা করেন, তারপর জাপানের হিরোশিমা থেকে শুরু করে তিনি দক্ষিণ জাপানের বিভিন্ন শহর ওতাকে, ইয়ামাগুচি, হফু, শিমনোসেকি, কোগা হয়ে ফুকুওকা পর্যন্ত ভ্রমণ করেন বাংলাদেশের পতাকা হাতে।
বর্তমানে পৃথিবী যখন করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত, ঠিক এই মুহূর্তে এই দুঃসাহসী অভিযাত্রী তার বিরামহীন অভিযাত্রায় এশিয়া মহাদেশের এই দেশগুলো মুখে মাস্ক পরেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা হাতে তিনি চালিয়ে গেছেন তার অভিযাত্রা।
তারপর জাপান থেকে তিনি তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে আসেন। সেখানে ৫০০ সিঁড়ি পার হয়ে তিনি তাইপের বিখ্যাত এলিফ্যান্ট মাউন্টেনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এ ছাড়া তিনি চাইনিজ নিউ ইয়ার সেলিব্রেট করেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সকল পর্যটকদের সঙ্গে তাইপে শহরের নাইট মার্কেট ও তাইপে শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো শহরের আনাচে-কানাচে ঘুরে দেখেন।
পাঁচবার মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন আমাদের নাজমুন নাহার। জীবনের বহু ঝুঁকি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে পৌঁছে দিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়, তারই সঙ্গে পৃথিবীতে শান্তির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। পৃথিবীব্যাপী তার বেশির ভাগ অভিযাত্রা হয়েছিল সড়কপথে একা একা।
পৃথিবীর যেখানেই যান নাজমুন নাহার, সঙ্গে থাকে বাংলাদেশের পতাকা। লাল-সবুজের পতাকা বহনের জন্য জাম্বিয়া সরকারের একজন গভর্নর তাকে ‘ফ্ল্যাগ গাল’ খেতাব দিয়েছেন।
নাজমুনের হাত ধরে বিশ্বজুড়ে চলুক বাংলাদেশের ও বিশ্বমানবতার জয়গান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের খবরের শিরোনাম খাওয়া থেকে শুরু করে তিনি পেয়েছেন বহু সম্মাননা। ২০১৯ যুক্তরাষ্ট্রে তিনি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পিস টর্চ বিয়ারার আওয়ার্ড। নাসাউ কলোসিয়ামের ফোবানা সম্মেলনে নাজমুনকে সম্মানিত করা হয়েছিল ‘মিস আর্থ কুইন অ্যাওয়ার্ড’ ও ইয়ুথ কনফারেন্সে ‘গ্লোব অ্যাওয়ার্ড’ দিয়ে। এ ছাড়া ২০১৯ এ পেয়েছেন অনন্যা শীর্ষ দশ অ্যাওয়ার্ড, অতীশ দীপঙ্কর গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড, জন্টা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, রেড ক্রিসেন্ট মোটিভেশনাল অ্যাওয়ার্ড, উইমেন এম্পাওয়ার্মেন্ট সফল নারী সম্মাননা।
Posted ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২১ জুন ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh