বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
আগামী শনিবার, ভয়াল নাইন ইলেভেনের ২০ বছর পূর্তি। ২০০১ সালের এই দিনে সন্ত্রাসী হামলায় গুড়িয়ে যায় নিউইয়র্ক সিটির গর্ব টুইন টাওয়ার। এদিন পরপর চারটি সন্ত্রাসী হামলায় সবকিছু ওলোট-পালোট হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রে। সেদিন ছিলো মঙ্গলবার। অন্যান্য দিনের সকালের মতো ব্যস্ত হয়ে উঠা ম্যানহাটানের বাণিজ্যিক পাড়া মূহূর্তেই পরিণত হয় ধ্বংস স্তুুপে। পরপর দু’টি বিমান আঘাত হানে আকাশছোঁয়া এ জমজ ভবনে। এ হামলায় প্রাণ হারান ২হাজার ৯৭৭ জন মানুষ। আহত হন ২৫ সহস্রাধিক। আজীবনের মতো শারিরীক ও মানসিকভাবে পঙ্গু হয়ে যান অনেকে। ভয়াবহ এ সন্ত্রাসী হামলায় শুধু স্থাপনার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ বিলিয়ন ডলারের উপর। নাইন ইলেভেন ছিলো ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একটি মারাত্নক সন্ত্রাসী কান্ড। যুক্তরাষ্ট্রের ফায়ার ফাইটার্স ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হতবাক করে দেয়ার মতো একটি ঘটনা। টুইন টাওয়ারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষাভাষী মানুষের সাথে সেদিন প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী আমেরিকান।
ফায়ার সার্ভিসের ৩৪৩ জন কর্মী এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর ৭২জন মারা যান এ ঘটনায়। ১৯ জন সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি বিমান বন্দর থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে ছেড়ে যাওয়া চারটি যাত্রীবাহী বিমান হাইজ্যাক করে সন্ত্রাসী কাজের জন্য। তন্মধ্যে আমেরিকান ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের দু’টো বিমান ব্যবহার করে টুইন টাওয়ারের উত্তর ও দক্ষিণ ভবন ধ্বংসের কাজে। আক্রমনের প্রায় পৌনে দু’ঘন্টার মধ্যে ভবন দু’টি মিশে যায় মাটির সাথে। শুধু টুইন টাওয়ারই নয় আশেপাশের অনেকগুলি ভবনও ধ্বসে পড়ে এই হামলায়। সন্ত্রাসীরা হাইজ্যাককৃত আমেরিকান এয়ারলাইনসের তৃতীয় বিমানটি নিয়ে হামলা চালায় আর্লিংটন-ভার্জিনিয়ার পেন্টাগণ চত্বরে। ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের অপর বিমানটি নিয়ে ওয়াশিংটন যাওয়ার পথে তা বিধ্বস্ত হয় পেনসিলভেনিয়ার স্টোনিক্রিপ টাউনশিপে।
সন্ত্রাসী আক্রমনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে জারি করা হয় জরুরী অবস্থা। নিউইয়র্ক সিটির আকাশ ঢেকে যায় কালো ধোঁয়া ও ছাই ভষ্মে। মানুষের আহাজারি ও প্রাণভয়ে ছুটে পালানোর সে দৃশ্য এখনও ভুলতে পারেনি মানুষ। নাইন ইলেভেনের ভয়াল স্মৃতি প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে ফিরে আসে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার, নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে নিহতদেরকে। ঘটনাস্থলে এখনো সমবেত হন স্বজন হারা পরিবারের সদস্যরা। ফুলে ফুলে ছেঁয়ে যায় স্থানটি। উনিশ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন এ ঘটনা রয়ে গেছে রহস্যাবৃত।
৯/১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারীর বিচার আবার শুরু হচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মোহাম্মদসহ পাঁচজনের বিচার কাজ আবার শুরু হচ্ছে। ২০ বছরেও তাদের বিচার শেষ করা যায়নি। স্থানীয় সময় গত ৭ সেপ্টেম্বর তাদের বিচার শুরু হওয়ার কথা। প্রথম ধাপের বিচার হবে ৭ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় ধাপের বিচার হবে পহেলা নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর। খবর এনবিসি নিউজের ছিনতাই করা যাত্রীবাহী বিমান দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি স্থাপনায় ২০ বছর আগে ভয়াবহ হামলা চালানোর মূল পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয়েছে খালিদ শেখ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে। তিনি আমেরিকার কারাগারে আটক রয়েছেন। সেখানে তার বিচার চলছে। মিলিটারি কমিশনের বিচারে নতুন একজন বিচারক নেতৃত্ব দেবেন। বিচার বেসামরিক না সামরিক আদালতে হবে সেই সিদ্ধান্ত নিতেও দীর্ঘ বিলম্ব হয়। ১১ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ এ সন্ত্রাসী হামলার ২০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। তার আগে এ হামলার বিচার আবার শুরু হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটি কিউবার গুয়ানতানামো বের কারাগারে রয়েছেন খালিদসহ অন্য আসামিরা। প্রায় ১৫ বছর ধরে সেখানে বিনা বিচারে আটক আছেন তারা। সামরিক ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার শুরু হয়েছিল। সবশেষ ২০১৯ সালের শুরুর দিকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এই বিচার প্রায় ১৭ মাস ধরে স্থগিত থাকে। এখন এই বিচার আবার শুরু হচ্ছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালের নতুন বিচারক বিমানবাহিনীর কর্নেল ম্যাথিউ ম্যাককল এ মামলার বিচারকাজ ধীরে শুরু করার ইঙ্গিত দেন। শুনানিতে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা অংশ নেবেন। তারা বিচারককে প্রশ্ন করারও সুযোগ পাবেন। পরে ১৭ মাস আগে বিচারকাজ যেখানে স্থগিত হয়েছিল, সেখান থেকে শুরু হওয়ার কথা।
এফবিআইয়ের নথি প্রকাশ করতে বললেন বাইডেন
টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্ট নথি প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই হামলায় ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন- এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যেন প্রকাশ করা হয়। সেই দাবির প্রেক্ষিতে গত ৩ সেপ্টেম্বর ঘোষণাটি দেন বাইডেন।
প্রসঙ্গত, নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে (টুইন টাওয়ার) হামলায় ধুলিস্যাৎ হয়ে যায় সুউচ্চ ভবন দুটি। এ ঘটনায় প্রাণ হারান প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। এক বিবৃতিতে জো বাইডেন বলেছেন, আমি প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যখন লড়াই করছিলাম, তখন ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার নথি প্রকাশের বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, এখন সেই মর্মান্তিক দিনের ২০তম বার্ষিকীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে আমি সেই অঙ্গীকারকে সম্মান জানাচ্ছি। আমি আজ এফবিআইয়ের ৯/১১ তদন্ত সংক্রান্ত নথি গোপনীয়তামুক্ত করার বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য মার্কিন বিচার বিভাগ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশনা দিয়ে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছি। সেই নির্বাহী আদেশ মোতাবেক, অ্যাটর্নি জেনারেলকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে নথিগুলো প্রকাশ করতে হবে। সূত্র : গার্ডিয়ান।
Posted ৬:২১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh