শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

মেক্সিকোতে এক লাখ মানুষ গুম

বাংলাদেশ রিপোর্ট :   |   বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১

মেক্সিকোতে এক লাখ মানুষ গুম

ছবি : সংগৃহীত

মেক্সিকোর প্রায় এক লাখ মানুষ গুম হয়েছে। বিগত ৫৭ বছরে এমন ভয়ানক ঘটনায় স্বজন হারানোর দু:খ লাঘব হওয়ার আগে সাম্প্রতিক সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার প্রিয় মানুষের সন্ধান করেছে মরুভূমিতে, আবর্জনার ভাগাড়ে। গুম হওয়া মানুষগুলো মরুভূমি জুড়ে অজ্ঞাত কবরে শুয়ে আছে, কোনো গতে একাধিক মৃতের সঙ্গে গাদাগাদি হয়ে পঁচেছে, ধারাল অস্ত্রের আঘাতে টুকরো টুকরো দেহখন্ড পাহাড়ের পাদদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোথাও পড়ে আছে রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন জামাকাপড়। সমগ্র মেক্সিকো জুড়ে গুম হওয়া সন্তানের দেহাবশেষ সন্ধান করে; সূর্যের খরতাপে দগ্ধ হয়ে মাটি খুঁড়ে এবং মাটি শুঁকে পঁচা মাংসের গন্ধ আঁচ করার চেষ্টা করে। কোনো না কোনো আলামত পেয়ে নিশ্চিত হতে চায় যে, সেখানেই পুতে রাখা হয়েছে তাদের গুম হওয়া পুত্র বা কন্যা।

কিন্তু অধিকাংশের ক্ষেত্রেই কোনো উত্তর আসে না। গত ৪ অক্টোবর সোমবার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে যুক্তরাষ্ট্রের পাশের দেশ মেক্সিকোর গুম হওয়া মানুষ সম্পর্কে স্পর্শকাতর তথ্য প্রকাশ করেছে। দেশটির চিহুয়াহুয়া রাজ্যে অনুসন্ধানকালে টাইমস ফটোগ্রাফার অস্কার লোপেজ তদন্তকারীদের সংরক্ষিত বেশ কিছু জামাকাপড়ের ছবি তুলেছেন, যেগুলো মৃতের পরনে ছিল। নোয়েমি পাদিলা আলদাজের ২০ বছর বয়সী পুত্র হুয়ান কার্লোস গুম হওয়ার পর তিনি দুই বছর পর্যন্ত পুত্রের সন্ধান করেও কোন হদিস পাননি। তিনি বলেন, “আমি যদি জানতে পারি যে সে মারা গেছে, তাহলে আমি জানবো যে সে কোনো দুর্ভোগের মধ্যে নেই। কিন্তু আমরা যে তার সম্পর্কে কিছুই জানি না, সেটি আমাদের জন্য প্রচণ্ড যন্ত্রণা। আমরা শুধু নিশ্চিত হতে চাই।”


গুম মানুষের সংখ্যা সংরক্ষণের জন্য মেক্সিকোর সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সার্চ কমিশন রয়েছে। তাদের রেকর্ডে ১৯৬৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা ১০০,০০০ এর কাছাকাছি পৌঁছেছে। মেক্সিকো মাদক যুদ্ধের জন্য খ্যাত একটি দেশ, যেখানে হতাহতের ঘটনা ব্যাপক। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বার্ষিক ৩০ হাজারের বেশি মানুষ হত্যাকান্ডের শিকার হয়, এবং যা বেড়ে চলেছে। সেতুতে ঝুলিয়ে রাখা মৃতদেহ অথবা রাস্তার পাশে নিক্ষেপ করা মৃতদেহ নিত্যনৈমিত্তিক দৃশ্য। নির্যাতনের কৌশলগুলো মানুষের মুখে আলোচিত হয়।

কিন্তু গুম হওয়া নিষ্ঠুরতম আঘাত হিসেবে আসে। পরিবারগুলো মৃতদেহ সামনে রেখে শোক জ্ঞাপন করা থেকেও বঞ্চিত হয়। কারণ তারা নিশ্চিত হতে পারে না যে তাদের পরিবারের অনুপস্থিত সদস্যের ভাগ্যে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে। মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কেউ গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারকে সান্তনাও দিতে পারে না। গুম মানুষ মেক্সিকোর সম্মিলিত স্মৃতি, যা রক্তক্ষয় বন্ধ ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে সরকারের অক্ষমতার দু:খজনক দৃষ্টান্ত। ল্যাটিন আমেরিকার সহিংসতা বিষয়ক এক্সপার্ট ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর অ্যাঞ্জেলিকা ডুরান-মার্টিনেজ এ সম্পর্কে বলেছেন, “কাউকে গুম করা সম্ভবত সংশ্লিষ্টদের স্বজনদের ভোগান্তির চরম রূপ।” তিনি আরো বলেন, “মেক্সিকোতে গুম হওয়ার সংকট প্রমাণ করে যে দেশটিতে অপরাধ শুধু যে সংগঠিত আকারে সংঘটিত হয়, তাই নয়, নিরাপত্তা রক্ষীদেরও সহিংসতায় জড়িত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি করে।


গুম হওয়া মানুষের মুখগুলো তাদের জীবনের চেয়েও মনে হয় ব্যাপ্তি পায়, মেক্সিকো জুড়ে প্রকাশ্য স্থানে টানানো ব্যানারে ও পোস্টারে, গুম ব্যক্তির ভাগ্য সম্পর্কে জানার জন্য স্বজনদের আকুতিপূর্ণ বার্তায়। কিন্তু যখন কোনো দেহাবশেষ পাওয়া যায়, তখন মৃতকে শণাক্ত করা আরো কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে তদন্তকারীরা মাসের পর মাস সময় নেয় গর্ত খুঁড়তে, ছোট্ট একটি অস্থি পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই এসব দিয়ে শনাক্ত করা হয় না।

সাম্প্রতিকালে গুম হওয়ার সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটেছিল ২০১৪ সালে, যখন আয়োটজিনাপা শহরের এক পল্লী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে ৪৩ জন ছাত্র গুম হয়। ওই সময়ের প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে তদন্তে স্থানীয় ড্রাগ কার্টেল ও মিউনিসিপ্যাল পুলিশকে দায়ী করা হয়। কিন্তু এই ব্যাখ্যার সমালোচনা করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ তারা দেখতে পায় যে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারীরা নিপীড়নের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ধারণা করা হয় যে গুম হওয়া ছাত্রদের কেউ আর জীবিত নেই। কিন্তু কেউ জানে না তাদের মৃতদেহ কোথায় এবং কে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ঘটনাটির পুন:তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধের বিচার না হবে, এ ধরনের অপরাধ বার বার ঘটা প্রতিহত করাও সম্ভব হবে না। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০ সালে সেপ্টেম্বর এবং চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে আরো ৬,৪৫৩ জন গুম হয়েছে বা নিখোঁজ রয়েছে। মেক্সিকোর সবচেয়ে অপরাধ প্রবণ ও সহিংস রাজ্য চিহুয়াহুয়া’র এটর্নি জেনারেল সিজার পেনিচে এসপেজেল বলেন, দেশজুড়ে প্রতিদিন মানুষ গুম হচ্ছে। ফেডারেল সরকার এই ভয়াবহ অপরাধ দমন করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।

advertisement

Posted ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.