রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৬ পৌষ ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

বিবিসি বাংলা :   |   মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

মেক্সিকো সীমানা দিয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেন অনেকে। ফাইল ছবি

“এখনও আমার হাতে দাগ, কোমরে দাগ, আমার পুরো শরীরে স্পট হয়ে আছে। বাংলাদেশে বিমানবন্দরে নামার আগে ৭৫ ঘণ্টা আমাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছিল, এমনকি বাথরুমেও যেতে দেয়নি।”

বিবিসি বাংলাকে এভাবেই নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশি নাগরিক ফয়সাল আহমেদ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থাকায় ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে)।

মি. আহমেদ জানান, পাঁচ বছর আগে ভিজিট ভিসায় বলিভিয়ায় গিয়ে আর দেশে ফেরেননি তিনি। সেখান থেকে দালালের মাধ্যমে প্রায় ছয় মাসের চেষ্টায় পেরু, ইকুয়েডর, মেক্সিকো হয়ে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ঢোকেন যুক্তরাষ্ট্রে। পরিচিত জনদের বাসায় আশ্রয় নিয়ে তখন থেকেই বৈধ হওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন।

“ওই সময় পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল। থেকে যাওয়ার প্রক্রিয়াটাও খুব ইজি ছিল। বাইডেনের সময় এটা অনেকেই করেছেন,” বলেন মি. আহমেদ।

যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে গত পাঁচ বছরে সেখানকার বৈধ কাগজপত্র পাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে, রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন কিংবা তিনবার ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করেও কাজ হয়নি।

মি. আহমেদ অভিযোগ করেন, অ্যাটর্নি পরিচয় দিয়ে আইনি সহায়তার নামে সেখানেও বাঙালিদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার একটি চক্র তৈরি হয়েছে।

তার ক্ষেত্রে অবশ্য সংকটের শুরুটা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তনের পর। অবৈধভাবে দেশটিতে থাকা অন্য সবার মতো বিপদে পড়েন মি. আহমেদও।

বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ছয় মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়ের্ক থেকে গ্রেফতার হন মি. আহমেদ। সেখান থেকে তাকে বাফেলোর একটি ডিটেনশন সেন্টারে নেওয়া হয় তাকে। এরপর জায়গা বদলে সে সহ আরো কয়েকজনকে হাতে পায়ে শেকল পরিয়ে নেওয়া হয় লুইসিয়ানার আরেকটি কারাগারে।

“ভাই, আর কারো যেন এভাবে কারাগারে না থাকা লাগে, ছয়ডা মাস ছিলাম, যে খাবার খাইতে দিত, মানুষ পশুপাখিকেও এখন খাবার খাওয়ায় না” এভাবেই কারাগারে থাকার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বলছিলেন তিনি।

এরপর শুরু হয় দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া। সোমবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান মি. আহমেদসহ ৩১ জন। এখানেও বিরূপ অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন তারা।

ওই ফ্লাইটে থাকা আরেকজন বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন,”বাংলাদেশের জন্য বিমানে তুলছে সকাল আটটায় কিন্তু হাতে, গলায় ও কোমরে শেকল পরানো ছিল রাত বারোটা থেকেই। এরপর প্রায় ২৭ থেকে ২৮ ঘণ্টা বিমানে ছিলাম। আমাকে বাথরুমেও যেতে দেওয়া হয়নি।”

সোমবার একই ফ্লাইটে যে ৩১ জন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই নোয়াখালীর বাসিন্দা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদেরই একজন বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “হাতে বেড়ি, পায়ে বেড়ি, কোমরে বেড়ি, আমেরিকা থেকে বিমানে তুলছে ৪০ ঘণ্টা পর গার্বেজের মতো ছুড়ে ফেলে গেছে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে।”

টেলিফোনে কথা হচ্ছিল এই পরিস্থিতির শিকার আরেকজনের বড় ভাইয়ের সঙ্গে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, দুই বছর আগে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বৈধভাবে ব্রাজিল গিয়েছিল তার ভাই। গত নয় মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করতে গিয়ে গ্রেফতার হন। এরপর থেকেই ছিলেন কারাগারে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলছিলেন, “ভাইয়ের জন্য জমি বিক্রি করে টাকার ব্যবস্থা করছিলাম, প্রায় ৩৫ লাখ খরচ হইছে, এখন আমগো কি হইবো।”

ব্র্যাক মাইগ্রেশন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত সাত মাসে এভাবে ফেরত পাঠানো হয়েছে আড়াইশোর বেশি বাংলাদেশিকে। যারা নানাভাবে দেশটিতে ঢুকে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই সেখানে থেকে গিয়েছিলেন।

ফেরত আসা এই কর্মীদের মধ্যে অধিকাংশই নোয়াখালীর। এছাড়া সিলেট, ফেনী, শরিয়তপুর, কুমিল্লা সহ বিভিন্ন জেলার ব্যাক্তিও রয়েছেন। আরও অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছেন, যাদেরকে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন ফেরত আসা কর্মীরা।

ফিরতে পারেন আরও বাংলাদেশি

মার্কিন আইন অনুযায়ী বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারী অভিবাসীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক আদেশে দেশে ফেরত পাঠানো যায়। আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হলে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে।

দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় বসেই কঠোর অভিবাসন বিরোধী নীতির বাস্তবায়ন শুরু করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন থেকেই দেশটিতে অবৈধভাবে থাকা বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের গ্রেফতার ও বিতাড়িত করছে ট্রাম্প প্রশাসন।

সম্প্রতি ফেরত আসা মি. আহমেদ বিবিসি বাংলাকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে দেশটিতে অবৈধভাবে থাকার অভিযোগে গ্রেফতার আরও অনেক বাংলাদেশিকে দেখেছেন তিনি।

তবে এসব বন্দিকে ফেরত পাঠানোর সময় তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এমনকি এই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিবাদও জানিয়েছে কয়েকটি দেশ।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম এর সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় একাধিক দফায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

তার মতে, নথিপত্রহীন কাউকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ফেরত পাঠানোটা স্বাভাবিক কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা হাতকড়া, পায়ে শেকল পরিয়ে রাখার ঘটনা অমানবিক।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “পঞ্চাশ থেকে ষাট ঘণ্টা যতক্ষণ তারা ফ্লাইটে ছিলেন হাতে-গায়ে শেকল পরানো অবস্থায়। এমন পরিস্থিতি আসলে একজন ব্যক্তির মধ্যে ট্রমা হয়ে থাকে, আতঙ্ক হয়ে থাকে।”

মি. হাসান বলছেন, সরকারের উচিৎ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেওয়া। অবৈধভাবে কেউ থাকলে বন্দি করে ফেরত পাঠানো হোক, কিন্তু মানবিক দিকও বিবেচনায় রাখা উচিৎ।

ব্র্যাকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৮শে নভেম্বর একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৩৯ জনকে ফেরত পাঠানো হয়। এর আগে আটই জুন ফেরানো হয় ৪২ বাংলাদেশিকে।

এছাড়া এই বছরের ছয়ই মার্চ থেকে ২১শে এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে আরও অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা ২৫০ ছাড়িয়েছে।

বৈধ ভিসায় গিয়েও অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে

বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে কাজের অনুমতি নিয়ে একদেশে যাওয়ার পর সেখান থেকে অবৈধভাবে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন অনেকে। অতীতেও এমন প্রবণতা দেশের শ্রমবাজার বন্ধের অন্যতম কারণ হয়েছে বলে মনে করেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে যাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই বৈধ কাজের পারমিট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবশেষ দেশে ফেরত আসা ৩১ জনের মধ্যে অন্তত সাতজন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ছাড়পত্র নিয়ে ব্রাজিল গিয়েছিলেন। এরপর সেখান থেকে মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন।

এই প্রবণতা দেশের শ্রমশক্তি রপ্তানির জন্য ভালো খবর নয় বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নতুন করে ব্রাজিলে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার আগে সরকারের সতর্ক হওয়া জরুরি।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম এর সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলছেন, “ব্রাজিলে কাজের নামে যাদেরকে পাঠানো হচ্ছে তাদের অধিকাংশই ব্রাজিল থেকে মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার চেষ্টা করছেন। এজন্য একেকজন ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করছেন কিন্তু ফিরছেন শূন্য হাতে।”

এক্ষেত্রে কর্মী পাঠানোর পরও তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কাজের অনুমতি নিয়ে তিনি ওই দেশে থাকলেন কিনা, সেখানে গিয়ে একজন কর্মী কাজ পেয়েছেন কিনা এসব বিষয়েও খোঁজখবর রাখা জরুরি বলে তিনি বলছেন।

মি. হাসান বলছেন, “যে এজেন্সি তাদের পাঠিয়েছিল এবং যারা এই অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ছিলো তাদেরকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।”

অতীতেও নানা অনিয়মের কারণে মালয়েশিয়া, কাতারসহ বেশ কয়েকটি দেশে শ্রমশক্তি পাঠানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের জন্য।

এমন প্রেক্ষাপটে আফ্রিকা এবং উত্তর আমেরিকার যেসব দেশে বৈধভাবে কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে সেসব জায়গায় নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করে বিশেষজ্ঞরা।

Posted ১০:৩৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1993 বার পঠিত)

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.