বাংলাদেশ অনলাইন : | শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০২০
রোহিঙ্গা সংকটের জরুরি সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে বিপুল ভোটে চতুর্থবারের মতো প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি গত ১৮ নভেম্বর বিপুল ভোটে গৃহীত হয় বলে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এদিকে, প্রস্তাবটিকে ধারাবাহিকভাবে সমর্থন জানানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা। সংবাদসূত্র : বিবিসি তিনি বলেন, ‘১০ লাখের বেশি বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজছে, যা নিহিত রয়েছে বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের মধ্যে।’ জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী এই প্রতিনিধি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের জরুরি সমাধানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানকে এই প্রস্তাবটি জোরদার করবে যে, সংকটের শিকড় সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমারেই নিহিত।’ রাবাব ফাতিমা বলেন, ‘ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যৌথভাবে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। এতে পৃষ্ঠপোষকতা করে ১০৪টি দেশ।
আর এটি মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ অন্যান্য সহিংসতার শিকার নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমান ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বিপুলসংখ্যক জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রের শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও আকুণ্ঠ সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ।’ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৩২টি দেশ। বিপক্ষে ৯টি। আর ভোটদানে বিরত থাকে ৩১টি দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডসহ উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক আন্ত-আঞ্চলিক জোটের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা পায় প্রস্তাবটি। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়া দেশগুলো হলো- রাশিয়া, চীন, মিয়ানমার, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, জিম্বাবুয়ে ও লাওস। ভোট না দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিবেশী ভারত, সার্কভুক্ত দেশ নেপাল ও শ্রীলংকা।
এছাড়া জাপান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভেনেজুয়েলাও প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) অন্তর্র্বর্তী আদেশ অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের তদন্ত শুরু এবং রোহিঙ্গা ও অন্য সংখ্যালঘুদের মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে বঞ্চিত করার মতো নতুন বিষয়গুলো উঠে এসেছে এবারের প্রস্তাবে। এছাড়া প্রস্তাবটিতে মিয়ানমারকে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে। বিষয়গুলো হলো, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ সমস্যাটির মূল কারণ খুঁজে বের করা, প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা, প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। এই প্রস্তাব বাংলাদেশসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে গঠনমূলক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মিয়ানমারকে নতুনভাবে চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
এছাড়া মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চলমান বিচার ব্যবস্থা এবারের রেজু্যলেশনের ফলে আরও বেশি আন্তর্জাতিক সমর্থন পাবে বলেও প্রত্যাশা তার। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে যে অনুকরণীয় মানবিক দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে প্রস্তাবটিতে। এছাড়া কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মতো বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বড় আশ্রয়শিবিরে কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার রোধে বাংলাদেশ সরকারের সফল প্রচেষ্টার স্বীকৃতিও দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবে। বাংলাদেশ গৃহীত মানবিক প্রচেষ্টায় সমর্থন প্রদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছে প্রস্তাবটিতে।
Posted ৭:০২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh