বাংলাদেশ অনলাইন : | বুধবার, ২২ মে ২০২৪
ছবি : সংগৃহীত
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় গত ২০ মে প্রাণ হারিয়েছেন। একই সঙ্গে মৃত্যু ঘটেছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান এবং হেলিকপ্টারের পাইলটসহ ৯ আরোহী। রাইসি নিহত হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটির সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ গার্ডিয়ান কাউন্সিল এ পদে ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারের নামও ঘোষণা করেছে। যার দায়িত্ব থাকবে নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করার ৫০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। ইতোমধ্যে আগামী ২৮ জুন দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থীরা আগামী ৩০ মে থেকে নিবন্ধন করতে পারবেন- যা গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মাধ্যমে যাচাই করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট পদে আগামীতে কে আসবেন? তবে ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ বলছেন, দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি, এই পদে এমন একজনকেই চাইবেন যিনি রাইসির মতো যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মতো দেশগুলোকে কঠোর মানসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবেন। যদিও, সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচনে, গার্ডিয়ান কাউন্সিল সংস্কারপন্থিদের নির্বাচনে দাঁড়ানোর বিষয়টি কঠিন করে তুলেছে।
ইব্রাহিম রাইসি-পরবর্তী পাঁচ সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম নিয়েই চলছে জোর আলোচনা।
মোহাম্মদ মোখবার
১৯৫৫ সালে জন্ম নেওয়া মোহাম্মদ মোখবারকে রাইসির মতোই আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে তার নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। ২০২১ সালে মোখবার প্রথমবারের মতো ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। গত অক্টোবরে ইরানি কর্মকর্তাদের মস্কো সফরে অংশ নেন তিনি। যেখানে রাশিয়ার সঙ্গে ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সরবরাহ চুক্তি করা হয়। এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পক্ষ থেকে করা একটি বিনিয়োগ তহবিলেরও প্রধান ছিলেন তিনি। ২০১০ সালে ইইউ থেকে মোখবারের ওপর ‘পারমাণবিক বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কার্যকলাপে’ জড়িত থাকার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। যদিও দুই বছর পর তা উঠিয়ে নেওয়া হয়।
মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ
এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছেন ১৯৬১ সালে জন্ম নেওয়া মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ। তিনি ২০২০ সাল থেকে ইরানের সংসদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়াও ২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তেহরানের মেয়রও ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ইরানের পুলিশপ্রধান এবং ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বিপ্লবী গার্ডের বিমানবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। এর আগেও তিনি তিনবার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করেছেন। পুলিশপ্রধান থাকা অবস্থায় ইরানে ছাত্রবিপ্লব দমনের মতো বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গালিবাফ। যে কারণে ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি হাসান রুহানির কাছে পরাজিত হন এবং ২০১৭ সালে যদিও তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়ে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান।
আলী লারিজানি
প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইয়ে আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন আলী লারিজানি। ১৯৫৭ সালে জন্ম নেওয়া লারিজানি ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ইরানের সংসদের স্পিকার ছিলেন। ২০০৫ সালের নির্বাচনে তিনি অংশ নিয়ে ষষ্ঠ স্থান লাভ করেন। সেবার মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। লারিজানি কাজ করেছেন ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রাক্তন কমান্ডার হিসেবেও। এ ছাড়াও এর আগে সংস্কৃতি ও ইসলামিক দিকনির্দেশনা মন্ত্রী এবং ইরানের প্রধান রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী হিসেবে দায়িত্বও পালন করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের অধীনে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি হিসেবেও দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও পশ্চিমাদের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচক হিসেবে কাজ করেছেন।
মোহাম্মাদ জাভেদ জারিফ
২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা মোহাম্মাদ জাভেদ জারিফও আছেন প্রেসিডেন্টের দৌড়ে। ১৯৬০ সালে জন্ম নেওয়া জাভেদের লেখাপড়া আমেরিকায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার সময়কালকে পশ্চিমাদের সঙ্গে ইরানের যোগাযোগ রক্ষায় সফল সময় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তিনি ইরানের প্রতি পশ্চিমাদের মনোভাবের একজন কট্টোর সমালোচকও। সম্প্রতি তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলায় জাভেদের প্রকাশিত নতুন একটি বইকে ঘিরে তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নতুন আলোচনার জন্ম দেয়। রাইসির মৃত্যুর পর তিনি এই দুর্ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করে কঠোর বক্তব্যও দেন।
সায়েদ জালিলী
রাইসি-পরবর্তী ইরানের প্রেসিডেন্টের তালিকায় শোনা যাচ্ছে সায়েদ জালিলীর নামও। ১৯৬৫ সালে জন্ম নেওয়া জালিলী বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন সফলতার সঙ্গে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডিধারী জালিলী কয়েক দশক ধরে ইরানের পররাষ্ট্রনীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইরানের প্রধান পারমাণবিক আলোচক হিসেবে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। জাতীয় স্বার্থরক্ষায় তার বিভিন্ন বক্তব্যের জন্যও তিনি বেশ সুনাম অর্জন করেন। ২০২১ সালেও তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক ছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত মূল লড়াই থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ান। বর্তমানে তিনি ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল এবং সংসদ সদস্যদের সঙ্গে মতপার্থক্য দূরীকরণে বিশেষ একটি দলের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।
Posted ৯:১০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২২ মে ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh