বাংলাদেশ অনলাইন ডেস্ক : | শনিবার, ২৫ জুলাই ২০২০
চীনের জিনজিয়াংয়ের অবস্থা বাংলাদেশের মতো হতে চলেছে। সেখানকার (জিনজিয়াং) জনগণ চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার শঙ্কায় রয়েছে। আর এমনটা হলে সেখানে গণতান্ত্রিক সাম্যাবস্থা জনমনের আকুল আকঙ্ক্ষার বিষয় হয়েই বিরাজ করবে। ‘দ্য কূটনীতি’র এক কলামে চীনের অধিকারকর্মী লিলি হার্ডিং এসব কথা বলেন।
মূলত চীনের উইঘুর মুসলমান অধ্যুষিত জিনজিয়াংয়ের প্রতি চীনের আচরণ বোঝাতে তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং সেই সময় এদেশের জনগণের ওপর পাকিস্তানের আগ্রাসন ও হত্যাযজ্ঞের প্রসঙ্গ টানেন। মতামত কলামে হার্ডিং লিখেছেন, জিনজিয়াং পূর্ব তুর্কিস্তান নামেও পরিচিতি। শাংহাইয়ের এই শহরটি কেবল চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এখানকার মানুষের কোনো মূল্য নেই তার সরকারের কাছে।
তিনি আরও বলেন, জিনজিয়াংয়ের ভূখণ্ড এবং মানুষের প্রতি চীনের দৃষ্টিভঙ্গী সত্যিকার কলোনিয়ালিস্টদের মতো। কেবল অর্থনৈতিক বিবেচনায় তাদের দেখা হয়। উইঘুর মুসলমানদের মধ্যে যারা সম্পদশালী চীন সরকার তাদের ধরে শিবিরে পুরছে। তারপর তাদের সম্পদ ও ব্যাংকে থাকা অর্থ কুক্ষিগত করছে। এমনকি আরও পয়সা কামাতে তাদের শরীরটাকেও ছাড় দিচ্ছে না। তাদের পাচার করছে, তাদের চুল আমেরিকানদের কাছে বিক্রি করছে এবং দেহে প্রত্যঙ্গগুলো বিকিয়ে দিচ্ছে ধনী সৌদ আর এর খোঁজে আসা পর্যটকদের কাছে।
পূর্ব তুর্কিস্তান আরেকটি বাংলাদেশের মতোই হতে চলেছে। এখানকার জনগণ সিসিপি’র নিয়ন্ত্রণের শঙ্কায় দিন কাটায় এবং গণতান্ত্রিক সাম্যাবস্থা যেখানে স্বপ্ন হয়েই থাকবে। এটা অবশ্য চীনের চেয়ে আরো ভালো এক প্রতিবেশী দেবে ভারতকে, যোগ করেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হার্ডিং ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাঙালি জনগণের ওপর পাকিস্তানি বাহিনী বর্বর গণহত্যা চালায়। মধ্য এশিয়ার টার্কিক ভাষাভাষি সংখ্যালঘু মুসলমানরা হলো উইঘুর। এরা হান চাইনিজদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক নৃ-গোষ্ঠী। জিনজিয়াংয়ের রাজধানী উরুমচি (সংক্ষিপ্ত আকারে উশি বলা হয়) বেইজিং অপেক্ষা কাবুলের বেশি নিকটবর্তী। ২০০৯ সালে ইতিহাসের কুখ্যাত রায়ট ছড়িয়ে পড়ে উরুমচির রাস্তায় রাস্তায়। সেখানে হান চাইনিজদের বিরুদ্ধে উইঘুর মুসলমানরা রুখে দাঁড়ায়। উরুমচি রায়টের পর চীনের সিসিপি সরকার ওই গোটা অঞ্চলকে খোলা আকাশের নিচে এক জেলখানায় পরিণত করেছে।
লিলি বলতে থাকেন, আমি উরুমচিতে বাস করতাম। সেখানে প্রক্যেকটি পরিবারের কেউ না কেউ নিখোঁজ বা গুম হয়ে গেছেন। যাদের পরিবার উরুমচিতে ছিল না, তাদের অন্তত অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য নিখোঁজ ছিলেন। শহরের প্রতিটা জায়গায় পুলিশের বিচরণ। মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত। পুলিশ মানুষের মোবাইল ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতো। কারো ফোনে যদি ধর্মীয় বা বিদেশি অ্যাপ বা ভিপিএন অথবা এমন কিছু পেতো যা তাদের পছন্দের নয়, তবে পুলিশ এক বা দুই সপ্তাহ পর তাদের বাড়িতে যেতো। আর এর পরই ওই বাড়ির কেউ না কেউ নিখোঁজ হতেন। কোথাও লুকানোর কোনো জায়গা নেই। যত রকম প্রযুক্তিগত সুবিধা তাদের কাছে রয়েছে তার সবই ব্যবহার করা হতো। চীন মানুষের ফোনের জিপিএস ব্যবহার করতো তাদের নজরদারিতে রাখতে। ফোনের সব ধরনের অ্যাপের কার্যক্রমে চোখ রাখতো। মানুষের তথ্য সংগ্রহের কাজে হাজার হাজার কর্মী পোষে চীন সরকার।
হার্ডিং তার এক বন্ধুর প্রসঙ্গও তোলেন, যিনি ২০১৮ সালে নিখোঁজ হয়েছিলেন। বন্ধুর সম্পর্কে বলেন, সে ছিল উইঘুর, তবে সবার কাছে সে নিজেকে খ্রিস্টান বলতো। ওই বছরের পর থেকে আমি তার কোনো খোঁজ পাইনি। তবে সে ছাড়া পেয়েছে খবর পেয়েছি। আমার ধারণা বন্ধুটিকে এখন জোরপূর্বক শ্রমিক বানিয়ে দেয়া হয়েছে।
হার্ডিং তাদের স্বায়ত্ত্বশাসন, মানবাধিকার, সমতা এবং স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামকে স্বীকৃতি দিতে গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেইসাথে পূর্ব তুর্কিস্তানের নির্বাসিত সরকারকে কূটনৈতিকভাবে সমর্থন জানানোর মাধ্যমে সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান। বলেন, পূর্ব তুর্কিস্তানের মানুষ শান্তিতে জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখে। কিন্তু চীনের অর্থনীতির প্রলোভনে এই বিশ্ব তাদের (পূর্ব তুর্কিস্তান) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। একটু ভালো ভবিষ্যত গড়ে দিতে তাদের প্রতি আমাদের সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিত। সূত্র : দ্য কূটনীতি।
Posted ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৫ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh