রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫ | ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

রজনীশের আশ্রমে শৈশবে ৫০ বার ধর্ষিত হওয়ার স্মৃতিচারণ করলেন ব্রিটিশ নারী

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪

রজনীশের আশ্রমে শৈশবে ৫০ বার ধর্ষিত হওয়ার স্মৃতিচারণ করলেন ব্রিটিশ নারী

যৌন নির্যাতনের বিষয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন প্রেম সারগাম। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের তথাকথিত দার্শনিক রজনীশের আশ্রমে ‘সন্ন্যাসী সংস্কৃতিতে’ বেড়ে ওঠা এক ব্রিটিশ নারী শৈশবে অন্তত ৫০ বার ধর্ষিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। দ্য টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৫৪ বছর বয়সী প্রেম সরগাম (আশ্রমে দেওয়া নাম) জানান, ছয় বছর বয়স থেকেই তিনি সন্ন্যাসী সম্প্রদায় বা ‘আশ্রম’-এ ব্যাপক যৌন নির্যাতন সহ্য করেছেন।

প্রেম সরগম বিস্তারিত বর্ণনা করছিলেন, শৈশবেই তাকে এমন একটি দর্শন গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়, যে দর্শন মনে করে—শিশুদের নিয়মিত যৌনতা দেখা উচিত এবং বয়ঃসন্ধির মধ্য দিয়ে যাওয়া মেয়েদের যৌনযাত্রা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, এই দর্শনে শিশুদের যৌনতার সংস্পর্শে আসা ভালো বলে মনে করা হতো। বড়দের যৌন মিলন দেখা তার জন্য নিয়মিত ঘটনা ছিল।

রজনীশ ১৯৭০ সালে মুম্বাইয়ের কাছে পুনেতে একটি আধ্যাত্মিক আন্দোলন ও কমিউন প্রতিষ্ঠা করেন। আশ্রমে থাকাকালীন সারগাম ছয় বছর বয়সেই যৌনতার প্রকাশ্য প্রদর্শনগুলো প্রত্যক্ষ করতে শুরু করেছিলেন। তিনি জানান, তার বাবা চাকরিজীবন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। পরে ভারতের তথাকথিত দার্শনিক রজনীশের কাছ থেকে জ্ঞান চেয়েছিলেন – যিনি একজন দাড়িওয়ালা গুরু এবং রহস্যবাদী। এই সন্ন্যাসী দর্শন এটাও বিশ্বাস করে, শিশুরা তাদের পিতা-মাতার যৌনযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দর্শনের বিশ্বাসে সরগমকে তার মা-বাবা থেকে দূরে শিশুদের আশ্রমে রাখা হয়।

মাত্র সাত বছর বয়সে সরগমকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ লালন-পালন শুরু করেছিলেন। যিনি তাকে ‘ছোট কুকুরের মতো’ অনুসরণ করতেন এবং তাকে সুইস চকোলেট দিয়ে প্রলোভন দেখাতেন। সারগাম বলেন, মাত্র ১৬ বছর বয়সেই আমি বুঝতে পারি কী ঘটছিল!

রজনীশের আশ্রমে শিশুদের উপর ঘৃণ্য যৌন নির্যাতনের বিষয়টি আসন্ন ‘চিলড্রেন অফ দ্য কাল্ট’ ডকুমেন্টারিতে অন্বেষণ করা হয়েছে। সারগামসহ তিনজন ব্রিটিশ নারীর গল্প নিয়ে নির্মিত হবে ছবিটি। যারা আশ্রম থেকে পালিয়ে এসেছিল।

ডকুমেন্টারিটিতে তাকে সাহসের সাথে তার নির্যাতনের বিষয়ে কথা বলতে দেখা যাবে। সারগাম তিন বছর আগে ফেসবুকে তার অতীত সম্পর্কে মুখ খুলেছিলেন, যখন তিনি তার নির্যাতনকারীকে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন।

রজনীশের গ্লোবাল কমিউনগুলোতে শত শত ছোট বাচ্চা নির্যাতনের শিকার হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এটি সম্পর্কে খুব কমই খবরে এসেছে। দ্য টাইমসের মতে, রজনীশপুরম সম্পর্কে মার্কিন শিশু সুরক্ষা পরিষেবাগুলো কেবলমাত্র একটি তদন্ত করেছিল। এমনকি নেটফ্লিক্স যখন ২০১৮ সালে রজনীশপুরম’র একটি শাখা সম্পর্কে একটি ব্যাপক ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছিল, তখনও শিশুদের নির্যাতনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেনি।

যদিও রজনীশের অপ্রচলিত ধ্যান কৌশল ব্রিটিশ সাংবাদিক বার্নার্ড লেভিন এবং লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী চলচ্চিত্র তারকা টেরেন্স স্ট্যাম্পের মতো সেলিব্রিটিসহ বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার অনুগামীদের আকর্ষণ করেছিল।

রজনীশ নামের একজন দর্শনের প্রভাষক ১৯৭০ সালে মুম্বাইয়ের নিকটবর্তী পুনেতে একটি আধ্যাত্মিক আন্দোলন এবং আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রজনীশের শিক্ষাগুলো ছিল- পপ মনোবিজ্ঞান, প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান, পুঁজিবাদ, যৌন অনুমতিদান এবং নোংরা রসিকতার এক উদ্ভট মিশ্রণ।

রজনীশ যুক্তি দিয়েছিলেন যে, একগামী বিবাহ অপ্রাকৃতিক। ১৪ বছর বয়স থেকেই অংশীদার অদলবদলসহ অবাধ যৌনতার পক্ষে ছিলেন তিনি।

ভারতে তিনি ‘সেক্স গুরু’ নামে পরিচিত ছিলেন। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ‘রোলস রয়েস গুরু’ নামে পরিচিত ছিলেন, কারণ তিনি ৯৩টি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক ছিলেন। কেউ কেউ তাদের স্ত্রী-সন্তান রজনীশের আশ্রমে রেখে গেছেন। আবার কেউ কেউ তাদের সর্বস্ব এই আশ্রমে দান করেছেন।

কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য ওরেগনের এক প্রত্যন্ত এলাকায় ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি ইউটোপিয়ান শহর গড়ে তোলার প্রচেষ্টাই আশির দশকে রজনীশের দর্শন দলের পতন ঘটায়। ১৯৮১ সালে অভিবাসন জালিয়াতি, কর ফাঁকি এবং মাদক চোরাচালানের বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তদন্তের কারণে রজনীশ ওরেগনে চলে যান। এই দলটি অ্যান্টেলোপের ছোট্ট বসতির কাছে ৬৪ হাজার একর খামার কিনেছিল এবং ৭ হাজার শিষ্য সেখানে সেখানে চলে গিয়েছিল।

সেখানে বাসিন্দার জন্য একটি স্বনির্ভর ‘রজনীশ শহর’র নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। অসংখ্য বাড়ি, দোকান, রেস্তোঁরা- এমনকি একটি বিমানবন্দরও নির্মিত হয়েছিল। তবে তিনি স্থানীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন, যারা বিশ্বাস করতেন যে, রজনীশ একটি বিপজ্জনক সংস্কৃতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

১৯৮৫ সালে রাজনীশ মার্কিন কাউন্টি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে একটি গণ খাদ্য-বিষক্রিয়া আক্রমণ চালান। আমেরিকান আইনজীবী চার্লস এইচ টার্নারের উপর একটি ব্যর্থ হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। পরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ রাজনীশের ব্যক্তিগত সচিব মা আনন্দ শীলা এবং তার সমর্থকদের বিষয়ে তদন্ত করতে বলেছিলেন। আনন্দ শীলা বিরুদ্ধে ৫৫ মিলিয়ন ডলার তহবিল তছরুপের অভিযোগও ছিল।

এফবিআই সে সময়ে রাজনীশের গণ-সাহায্য সংগ্রহ কার্যক্রম থেকে অনিবন্ধিত বন্দুকের একটি অস্ত্রাগার পেয়েছিলেন। তার শিষ্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে এফবিআই আরও ‘শয়তানী ষড়যন্ত্র’ আবিষ্কার করে।

পরে রাজনীশের ব্যক্তিগত সচিব মা আনন্দ শীলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আরও তিন শিষ্যকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে রজনীশকে ভারতের পুনে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। যেখানে তিনি ১৯৯৮ সালে ৫৮ বছর বয়সে ‘বিরল রোগে’ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে রজনীশী ভক্তের সংখ্যা খুব কম।

তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল

Posted ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.