মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ | ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘নিহন হিদানকিও’

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘নিহন হিদানকিও’

ছবি : সংগৃহীত

পরমাণু অস্ত্র যে কতটা ভয়াবহ সেটি এই পৃথিবীর একটি দেশই সাক্ষী হয়ে আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আলাদাভাবে পরমাণু বোমা ফেলেছিলো আমেরিকা। যার ক্ষতচিহ্ন এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে শহর দুটোর লাখো মানুষ। প্রায় ৮০ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন প্রায় শেষের পথে, তখন ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসের ৬ এবং ৯ তারিখে যথাক্রমে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহরে পরমাণু বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বে সেই প্রথম কোন যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল এই গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র। মারা গিয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহরে কত লোক মারা গিয়েছিলো, তা মূলত আনুমানিক হিসেব। ধারণা করা হয় হিরোশিমা শহরের সাড়ে তিন লাখ মানুষের মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ কেবল বোমার বিস্ফোরণেই মারা যায়। আর নাগাসাকিতে মারা যায় ৭৪ হাজার মানুষ। শহর দুটো রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

কিন্তু পরমাণু বোমার তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়ে পরবর্তী সপ্তাহ, মাস এবং বছরগুলিতে আরও বহু মানুষ মারা গিয়েছিল। এই বোমার শিকার হয়েও যারা বেঁচে গিয়েছিলেন, তারা ‘হিবাকুশা’ বলে পরিচিত। তাদের ভয়ংকর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে বাকি জীবন বাঁচতে হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা হামলা ও বিস্ফোরণ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের হিবাকুশদের সংগঠন ‘নিহন হিদানকিও’ চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শুক্রবার এই জাপানি সংস্থাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

নোবেল কমিটি বলেছে, হিবাকুশা নামেও পরিচিত জাপানি সংস্থা হিদানকিওকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচেষ্টা এবং পারমাণবিক অস্ত্র যে আর কখনো ব্যবহার করা উচিত নয়, তা প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য নোবেল পুরস্কার দেয়া হলো। ঘোষণা আকারে দেয়া নোবেল কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৪৫ সালের আগস্টের পারমাণবিক বোমা হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন গড়ে ওঠে, যার সদস্যরা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিপর্যয়মূলক মানবিক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।

ধীরে ধীরে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক ‘রীতি’ গড়ে ওঠে, যা পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারকে নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে কঠোরভাবে নিন্দা করে। এই রীতিটি ‘পরমাণু ট্যাবু’ হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে হিরোশিমা ও নাগাসাকির পরমাণু বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়াদের সাক্ষ্য অনন্য। এই ঐতিহাসিক সাক্ষীরা ব্যক্তিগত গল্পের নিরিখে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষামূলক প্রচারণা তৈরি করে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে জরুরি সতর্কবার্তা জারি করে সারা বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিরোধিতা সৃষ্টি ও একত্রিত করতে সাহায্য করেছে।

হিবাকুশা আমাদেরকে অবর্ণনীয়কে বর্ণনা করতে, অচিন্তনীয়কে চিন্তা করতে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের কারণে সৃষ্ট অবোধ্য যন্ত্রণা ও দুর্ভোগকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে বলে উল্লেখ করেছে নোবেল কমিটি। পারমাণবিক ট্যাবু প্রতিষ্ঠায় হিদানকিওর ব্যাপক অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি তবু একটি উৎসাহজনক সত্য স্বীকার করতে চায়; প্রায় ৮০ বছরে যুদ্ধে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। নিহন হিদানকিও ও হিবাকুশার অন্যান্য প্রতিনিধিদের অসাধারণ প্রচেষ্টা পারমাণবিক ট্যাবু প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রেখেছে। তাই এটি উদ্বেগজনক যে আজ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে এই ট্যাবু চাপে রয়েছে।

পরমাণু অস্ত্রকে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র উল্লেখ করে নোবেল কমিটি বলেছে, পারমাণবিক শক্তিগুলো তাদের অস্ত্রাগার আধুনিকীকরণ ও নবায়ন করেছে; নতুন দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে; এবং চলমান যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মানব ইতিহাসের এই মুহূর্তটি পরমাণু অস্ত্র কী তা নিজেদের মনে করিয়ে দেওয়ার উপযুক্ত সময়।

আগামী বছর হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুই পারমাণবিক বোমা হামলায় আনুমানিক এক লাখ ২০ হাজার বাসিন্দাকে হত্যার ৮০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে নোবেল কমিটি স্মরণ করে যে, পরমাণু হামলার পরবর্তী সময়ে আরো বিপুল সংখ্যক মানুষ পুড়ে ও বিকিরণের ক্রিয়ায় মারা যায়। অনুমান করা হয় যে ছয় লাখ ৫০ হাজার মানুষ আক্রমণ থেকে বেঁচে গেছে। এই জীবিতদের জাপানি ভাষায় হিবাকুশা বলা হয়।

আজকের পারমাণবিক অস্ত্রের অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক শক্তি রয়েছে উল্লেখ করে এগুলোর ভয়াবহতা সম্পর্কে নোবেল কমিটি বলেছে, এগুলো লাখ লাখ মানুষ হত্যা করতে পারে এবং জলবায়ুকে প্রভাবিত করবে। একটি পারমাণবিক যুদ্ধ আমাদের সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। যারা হিরোশিমা-নাগাসাকির ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেঁচে যায়, তাদের ভাগ্য দীর্ঘকাল অন্তরালে ও অবহেলিত ছিল। ১৯৫৬ সালে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার শিকারদের সাথে স্থানীয় হিবাকুশা অ্যাসোসিয়েশনগুলো ‘জাপান কনফেডারেশন অব বম সাফারারস অর্গ্যানাইজেশনস গঠন করে। এই নামটি জাপানি ভাষায় সংক্ষিপ্ত করে নিহন হিনদাকিও করা হয়। পরে এটি জাপানের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী হিবাকুশা সংস্থায় পরিণত হয়।

Posted ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.