বাংলাদেশ অনলাইন : | রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ। ছবি : সংগৃহীত
আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে দিনটি এক গভীর শোক ও বেদনার স্মারক। ১৯৭১ সালের এই দিনে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের—শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিকসহ নানা পেশার বুদ্ধিজীবীদের। জাতিকে মেধাশূন্য করার সেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ আজও ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ভিড় করেন সর্বস্তরের মানুষ। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে দলবদ্ধভাবে ব্যানার ও পতাকা হাতে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়। স্মৃতিসৌধ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানেও দেখা গেছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক প্রাক্কালে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। আত্মসমর্পণের মাত্র দুদিন আগে তালিকা ধরে ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন মিরপুর ও রায়েরবাজারের ডোবা-নালা ও ইটখোলায় পাওয়া যায় তাঁদের নিথর দেহ। অনেকের শরীরে ছিল গুলির চিহ্ন, কারও দেহ ছিল নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত। হাত পেছনে বাঁধা অবস্থায় বেয়নেট দিয়ে হত্যা করার নির্মম আলামতও মিলেছিল।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক নথি ও গবেষণা অনুযায়ী, এই হত্যাযজ্ঞে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়জুড়ে এই বুদ্ধিজীবীরাই তাঁদের মেধা, মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছিলেন। সেই কারণেই স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের কাছে তাঁরা হয়ে উঠেছিলেন প্রধান লক্ষ্য।
ইতিহাসবিদদের মতে, বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয় মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই। কয়েক দিন ধরে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের একে একে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়, যার চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৪ ডিসেম্বর রাতে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে রাজধানীর মিরপুরে এবং রায়েরবাজারে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিসৌধ। প্রতিবছর এই দিনে শোকের আবহে দিনটি পালিত হয়। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়, উত্তোলন করা হয় কালো পতাকা। দেশজুড়ে আয়োজন করা হয় পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ৭টা ৬ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরবর্তীতে স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস শুধু শোকের নয়, এটি জাতির বিবেককে জাগ্রত করার দিন—যে দিন স্মরণ করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা রক্ষায় বুদ্ধি ও বিবেকের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
Posted ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh