বাংলাদেশ অনলাইন : | মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
তারুণ্যের আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছে বিএনপি। ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা এবং জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বয়ে ইতিমধ্যে ইশতেহারের সকল কাজ সুবিন্যস্ত করে রাখা হয়েছে। এখন একটা নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করবে দলটি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আরও পরিবর্তন, সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে ইশতেহার চূড়ান্ত করা হবে।
তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার ঘোষণা করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ইশতেহার তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষি কার্ড, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, পরিবেশ, খতিব-ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মাসিক সম্মানী ইশতেহারে প্রাধান্য পাবে। এ ছাড়া ইশতেহারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, মানবাধিকার সুরক্ষা, বাক-স্বাধীনতা, স্বচ্ছ প্রশাসন ও জাতীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ওদিকে জুলাই সনদের আলোকে মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা দেয়ার কর্মপরিকল্পনা ইশতেহারে থাকবে।
বিএনপি’র নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক নেতা জানান, দেশ গড়ার পরিকল্পনার যে কর্মসূচি বিএনপি করছে সেখানে পলিসি দেয়া হয়েছে, সেগুলো মূলত ইশতেহার থেকে এসেছে। এবার ইশতেহারে মূলত তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করা, এটাই মূল প্রাধান্য পাবে। এর মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, ফ্যামিলি কার্ড, পরিবেশ- এগুলো মূল প্রাধান্য পাচ্ছে। এর বাইরে সুশাসন, রাষ্ট্র কাঠামো, জবাবদিহিতা গুরুত্ব দেয়া হবে। সূত্রটি জানায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠন, মানবাধিকার রক্ষা, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ এবং দুর্নীতিবিরোধী কাঠামো শক্তিশালীকরণ ইশতেহারের মূল বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বিএনপি’র নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে। এখন আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে কৃষি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য প্রাধান্য পাবে। অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় ইশতেহারে থাকবে। এ ছাড়া যুবকদের চাকরিও ইশতেহারে প্রাধান্য পাবে।
ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে বলা হয়েছে প্রতি মাসে ২০০০-২৫০০ টাকার আর্থিক সহায়তা অথবা খাদ্য সুবিধা চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেয়া হবে। কৃষকের জন্য নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য কৃষক কার্ড নিয়ে বলা হয়- ন্যায্যমূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, সরকারি ভর্তুকি ও প্রণোদনা, স্বল্প মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সুবিধা, স্বল্প ব্যয়ে সেচ সুবিধা, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ, কৃষি বীমা সুবিধা, ন্যায্যমূল্যে কৃষি পণ্য বিক্রয়ের সুবিধা, কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ, মোবাইলে আবহাওয়া ও বাজার তথ্য, মোবাইলে ফসলের চিকিৎসা সুবিধা, মৎস্যচাষী ও প্রাণিসম্পদ খামারিরাও কৃষক কার্ডের সুবিধা পাবেন। সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ গঠনে বিএনপি’র পরিকল্পনায় বলা হয়েছে- দেশের প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা হবে, দেশ জুড়ে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নতুন করে প্রায় এক লাখ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, যার ৮০ ভাগ হবেন নারী, পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি মহানগর ও জেলা শহরে বসবাসকারী সকল নাগরিকের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।
আনন্দময় শিক্ষা, দক্ষ জনশক্তি ও আধুনিক বাংলাদেশ নিয়ে বলা হয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আধুনিক ও সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা অর্জনসহ সার্বিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্যাবলেট কম্পিউটার প্রদান হবে, শিক্ষামূলক ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্টারি ও অনলাইন কনটেন্টের মাধ্যমে কারিকুলাম ও নৈতিক শিক্ষার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হবে, ক্লাস সিক্স থেকে টিম-ওয়ার্ক, পার্সোনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট, পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলা হবে, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ তৈরিতে বাংলা-ইংরেজির পাশাপাশি আরবি, জাপানিজ, কোরিয়ান, ইতালিয়ান, ম্যান্ডারিন ইত্যাদি তৃতীয় ভাষা শিক্ষা মাধ্যমিক পর্যায় থেকে চালু করা হবে, আত্মকর্মসংস্থান ও বহির্বিশ্বে চাকরির সুযোগ তৈরিতে শিক্ষার্থীদের দক্ষ এবং যোগ্য করে গড়ে তুলতে মাধ্যমিক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে, মননশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের ফুটবল, ক্রিকেট, সাঁতার ইত্যাদি খেলা এবং সংগীত, নৃত্য, নাটক ইত্যাদি সাংস্কৃতিক বিষয় পাঠ্যক্রমে যুক্তকরণ করা হবে।
সুস্বাস্থ্য ও খাদ্যে অগ্রাধিকার নিয়ে বলা হয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী সবার জন্য পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নির্মাণ এবং সারা দেশে পর্যায়ক্রমে প্রান্তিক ও দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মিড-ডে মিল’ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, তৃতীয় ভাষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, আইটি ও কারিগরিসহ সকল বিষয়ে মেধাবী তরুণদের শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী করে গড়ে তুলে বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং বিদ্যমান সকল ক্যাডার ও নন-ক্যাডার শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে, খেলাধুলাকে পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে, জাতীয় শিক্ষাক্রমে ৪র্থ শ্রেণি থেকে খেলাধুলাকে বাধ্যতামূলক করা করা হবে, ‘নতুন কুঁড়ি স্পোর্টস’ কর্মসূচির মাধ্যমে ১২-১৪ বছরের প্রতিভাবান ক্রীড়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা হবে, ৬৪ জেলায় ইনডোর সুবিধাসম্পন্ন স্পোর্টস ভিলেজ নির্মাণ করা হবে, দেশের সব উপজেলায় ক্রীড়া অফিসার ও ক্রীড়া শিক্ষক নিয়োগ করা হবে, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে বিষয়ভিত্তিক ক্রীড়া শিক্ষক নিয়োগ করা হবে, প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে বিকেএসপি’র শাখা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
সারা দেশে অন্তত ২০ হাজার কিলোমিটার খাল ও নদী খনন-পুনঃখনন করে পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরণ করা হবে, তিস্তা ব্যারেজ উন্নয়ন ও পদ্মা ব্যারেজের মতো প্রকল্প গ্রহণ করা হবে, ২৫ কোটি গাছ ৫ বছরে রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে, সারা দেশে পর্যায়ক্রমে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে।
খতিব, ইমাম-মুয়াজ্জিন সাহেবগণের সামাজিক মর্যাদা ও জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে বলা হয়েছে- খতিব, ইমাম-মুয়াজ্জিন সাহেবগণকে মাসিক সম্মানী প্রদান করা হবে, ধর্মীয় উৎসবে বিশেষ ভাতা দেয়া হবে, দক্ষতা-উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে, অন্যান্য ধর্মের (হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য) উপাসনালয়ের প্রধানদের মাসিক সম্মানী ও উৎসব ভাতা প্রদান করা হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি’র ইশতেহার হবে দেশের মৌলিক গণতান্ত্রিক সংস্কার, গণমানুষ ও অর্থনৈতিক মুক্তিকে লক্ষ্য রেখে। এজন্য সারা দেশে প্রত্যন্তাঞ্চলে জনগণের দোরগোড়ায় যাওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছি। বিএনপি’র ইশতেহার বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ দেশের গণমানুষের অর্থনৈতিক-গণতান্ত্রিক মুক্তি হবে, শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনিমার্ণ হবে, সংসদীয় ব্যবস্থার আমূল বৈপ্লবিক সংস্কার হবে।
এই ইশতেহার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ হবে, গণতন্ত্র শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড়াবে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করবে। সেরকম একটি নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন শেষপর্যায়ে রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর তা প্রকাশ করা হবে।
Posted ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh