বাংলাদেশ অনলাইন : | সোমবার, ২৯ আগস্ট ২০২২
আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে চীনের উৎকণ্ঠা দীর্ঘদিনের। ১৯৯০-এর দশকে তালেবানের প্রথম শাসনের সময় উইঘুর মুসলিমদের সম্ভাব্য সশস্ত্র উত্থান নিয়ে বেইজিং চিন্তিত ছিল। বেইজিং আশঙ্কা করত আফগানিস্তানের ভূমি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে উইঘুররা চীনে হামলা চালাতে পারে। তালেবানের ক্ষমতায় যাওয়ার অনেক আগে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের পর থেকেই দেশটিতে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছিল। তাই আফগানিস্তান নিয়ে চীনের নিরাপত্তা উদ্বেগ নতুন কিছু নয়। গত বছর আগস্টে তালেবান নতুন করে ক্ষমতায় আসার পর এই উদ্বেগে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
চীন মধ্য এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক না গলানোর নীতি অনুসরণ করে থাকে। তবে সম্পর্ক যে একদম রাখে না, তা নয়। প্রত্যক্ষ হোক অথবা পরোক্ষ একটি কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলে বেইজিং। তালেবান ক্ষমতার থাকার সময় পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা রেখেছিল চীন। প্রখ্যাত মধ্য এশিয়া বিশ্লেষক ঝাও হুয়াসেং সেরকমই মনে করেন।
২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কাবুলে ক্ষমতার হাল ধরেন হামিদ কারজাই। তখন থেকে চীনের নীতিনির্ধারক মহলের বিবেচনায় এ বিষয়টি ছিল যে দেশটিকে মার্কিন প্রশাসন বা তার মিত্রদের হাতে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১২ সালে আফগানিস্তান থেকে তার দেশের সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ওবামা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন না হলেও সৈন্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা হয়। শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালের আগস্টে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন কাজটি সমাধা করে। যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল তারচেয়েও দ্রুত গতিতে ক্ষমতা দখল করে তালেবান।
তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানে চীনের ভূমিকা আগের তুলনায় বাড়ে। তবে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিবাদ নিরসনে বেইজিং কোনো সক্রিয় ভূমিকা পালন থেকে সযত্নে দূরে থাকে। চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের জন্য একটি স্থিতিশীল আফগানিস্তান প্রয়োজন। উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত ১০ বছরে চীনের অনেক উচ্চ পর্যায় সরকারি প্রতিনিধিদল কাবুল সফর করেছে। অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় ১৯৬৬ সালে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির পলিটবুর্যোর সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল আফগানিস্তান সফরের পর ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে পলিটবুর্যো সদস্য এবং নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ঝাও ইয়ংকাং কাবুল সফর করেন।
এরপর গত ১০ বছরে এ রকম কয়েকটি সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেইজিংয়ে আয়োজিত হয় পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও চীনের অংশগ্রহণে প্রথম ত্রিপক্ষীয় নিরাপত্তা সম্মেলন। চীন তখন থেকেই আফগানিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। আফগানিস্তান থেকেও গত ১০ বছরে অনেক উচ্চ পর্যায় প্রতিনিধিদল বেইজিং সফর করেছে। কারণ চীনের বিবেচনায় এটি ছিল যে যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী আফগানিস্তানে তারা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা সহযোগী হতে পারে।
Posted ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৯ আগস্ট ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh