বাংলাদেশ রিপোর্ট : | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট জো বাইডেন আগামী ২০ জানুয়ারী দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর প্রথম কাজ হিসেবে মুসলিম ও আফ্রিকান দেশগুলোর নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে আগমণের উপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসে শপথ গ্রহণের এক সপ্তাহ পর তার প্রথম নির্বাহী আদেশে সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করেন, যা এখন পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে এবং ওই সমস্ত দেশে অবস্থানরত আমেরিকান সিটিজেনদের পরিবার, যারা আইনগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসার অধিকারী তাদের পক্ষেও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়া সম্ভব হয়নি গত চার বছরে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম ট্রাভেল ব্যান’ খ্যাত এই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার বহু আগে থেকেই, এমনকি তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকে বলে আসছিলেন যে, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেবেন এবং ঘোষণা করেন যে, “ইসলাম আমাদের ঘৃণা করে।” ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।
ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের ছড়ানো ইসলামোফোবিয়ার উপর আলোকপাতকারী জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির গবেষনা প্রকল্প ‘দ্য ব্রিজ ইনিশিয়েটিভ’ এর তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ইরানিদের জন্য ভিসা নামঞ্জুর হয়েছে ৭৯ শতাংশ, সোমালিদের ক্ষেত্রে ভিসা আবেদন নাকচ করা হয়েছে ৭৪ শতাংশ, ইয়েমেনিদের ক্ষেত্রে ভিসা আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে ৬৬ শতাংশ। ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে ক্যাটো ইন্সটিটিউট এর এক রিপোর্টে জানা গেছে যে, যেসব মুসলিম ও আফ্রিকান দেশগুলোর নাগরিকদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে, ওইসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের স্বামী-স্ত্রী, সন্তান অথবা বাবা-মা যুক্তরাষ্ট্রে আগমণের বৈধতা সম্পন্ন হওয়া সত্বেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে আসার ভিসা সংগ্রহ করতে পারছেন না এবং এ ধরনের অপেক্ষমান ব্যক্তির সংখ্যা ১৫ হাজারের অধিক। মিশিগানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক একজন ইয়েমেনি আমেরিকান পিতা মাহমুদ সালেম আত্মহত্যা করেছেন। কারণ ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে জিবুতিতে আমেরিকান দূতাবাস তার সাথে যোগ দেয়ার জন্য তার স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানের মধ্যে দু’জন ভিসা আবেদন করলে তাদের ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ল’ সেন্টারের স্টাফ এটর্নি ম্যাক্স ওলসন বলেছেন, যখনই কোন মুসলিম ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নতুন করে চালু করা হয়েছে, সেটিতে একই ধরনের বৈষম্যমূলক উদ্দেশ্য রাখা হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে শুধু ভাষা ও শব্দের এবং প্রশাসন আশা করেছে যে ভুক্তভোগীরা আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করলেও ভাষার মারপ্যাচকে কাজে লাগিয়ে আদালত প্রশাসনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত ট্রাম্পের ট্রাম্পের অতি সাম্প্রতিক ব্যাখ্যায় মূল দেশগুলোর চেয়ে আরো বেশি দেশকে যুক্ত করা হয়েছে এবং সেসব দেশের নাগরিকদের ভিসা প্রদান করার ক্ষেত্রে আরোপিত বিধিনিষেধের মধ্যে মাত্রার পার্থক্য রয়েছে। এর ফলে বর্তমানে ১৩টি দেশের নাগরিকদের উপর সম্পূর্ণ অথবা আংশিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা বলবৎ আছে। দেশগুলো হচ্ছে; ইরান, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন, ভেনিজুয়েলা, উত্তর কোরিয়া, নাইজেরিয়া, মায়ানমার, ইরিত্রিয়া, কিরগিজিস্তান, সুদান ও তাঞ্জানিয়া।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কত মানুষ যে কি পরিস্থিতিতে রয়েছেন সেই বর্ণনার সামান্যই জানা যায়। সম্প্রতি প্রকাশিত এক খবর অনুযায়ী, সোমালি নাগরিক আফনান সালেমের পিতা মালয়েশিয়ায় বাস করছেন এবং ওহাইয়োতে বসবাসরত তার পরিবারের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার আশায় তিন বছর যাবত অপেক্ষা করছেন। ট্রাম্পের পূর্ববর্তী প্রশাসনের সময় তার পক্ষে কোন জটিলতায় না পড়েই ভিসা পাওয়া সম্ভব হতে পারতো। সালেমের ভাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং তিনি পিতার জন্য ভিসার আবেদন করেছেন। কিন্তু ট্রাম্পের মুসলিম ও আফ্রিকান দেশের নাগরিকদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে সব হিসাব পাল্টে গেছে। ভিসা পাওয়া শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব করে তুলেছে।
২০১৮ সালের মে মাসে সালেমের পিতা মালয়েশিয়ায় আমেরিকান দূতাবাসে ভিসার আবেদন করলে ইন্টারভিউয়ের সময় তাকে বলা হয় যে তিনি ভিসা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত নন, কিন্তু তারা ওয়েভারের সুযোগ দিতে পারেন, যাতে তার বিষয়টি পর্যালোচনা করা সম্ভব হয়। এটি দীর্ঘ এক প্রক্রিয়া। তিনি ওয়েভারের আবেদন করে মালয়েশিয়ায় অপেক্ষা করছেন। ওয়েভারের জন্য আবেদনকারীকে তিনটি বিষয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করতে হবে যে, আদেনকারী যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হবেন না, তার যুক্তরাষ্ট্রে আগমণের উদ্দেশ্য হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অস্বীকৃতি জানানো হলে তিনি সীমাহীন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হবেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়ে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের ভিসা ওয়েভারের জন্য আবেদনের প্রায় তিন চতুর্থাংশই বাতিল করেছে বলে ‘দ্য ব্রিজ ইনিশিয়েটিভ’ তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। ওয়েভারের আবেদনকারীদের মধ্যে অধিকাংশের আবেদন নাকচ করার ভিত্তি ছিল ‘কঠিন পরিস্থিতি’ যাপন করা, যা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বাতিল করেছেন যে, আদেনকারীরা ‘যথেষ্ট কঠিন পরিস্থিতির’ মধ্যে নেই। অথচ আবেদনকারীদের মধ্যে অনেকেই ইয়েমেনের মত সংঘাতপূর্ণ একটি এলাকার বসবাস করছে।
Posted ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh