বাংলাদেশ অনলাইন : | রবিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৫
ছবি : দ্য গার্ডিয়ান
আমার সব সন্তানের শরীরের ওজন প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। পাঁচ বছর বয়সী মেয়ের ওজন এখন মাত্র ১১ কেজি। আমার ছেলে মোহাম্মদ কেবল চামড়া ও হাড় হয়ে গেছে। সব সন্তানের একই অবস্থা। নিজের ওজন আগে ৮৫ কেজি ছিল। এখন ৫৫ কেজিতে নেমে এসেছে। আমি বিশ্বকে শুধু এটুকুই বলতে পারি, আমরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছি; এই ট্র্যাজেডি থেকে আমাদের বাঁচান।
এভাবেই বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়েছেন মধ্য গাজার মাঘাজি এলাকার ৩৮ বছর বয়সী মা জামিল মুগারি। দ্য গার্ডিয়ান গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষের মর্মান্তিক বর্ণনাটি সংগ্রহ করেছে। মুগারি বলেন, আমি পরিবারের জন্য খাবার খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত। শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি ধরে রাখতে লড়াই করছি। রাস্তায় হাঁটতে গেলে মাথা ঘোরে। প্রায়ই মাটিতে লুটিয়ে পড়তে পড়তে বেঁচে যাই। শরীরে আমি মাঝে মাঝে কাঁপুনি অনুভব করি। দিনে মাত্র একবার খাবার খাই, যা ডাল।
গাজাজুড়ে শনিবার ইসরায়েলি হামলায় ১৩ ত্রাণপ্রার্থীসহ কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে আরও সাতজন মারা গেছেন। এ নিয়ে ৯৩ শিশুসহ অনাহারে মৃত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৯ জনে। ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৬০ হাজার ৪৩০ জন নিহত এবং এক লাখ ৪৮ হাজার ৭২২ জন আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের ক্ষুধা বিশেষজ্ঞরা বলেন, গাজায় দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সপ্তাহের ব্যবধানে গাজায় দুটি ভয়াবহ মাইলফলক অতিক্রম করেছে। একটি হলো, ফিলিস্তিনি মৃত্যুর সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অন্যটি হলো, এক হাজার ৩৮০ ত্রাণপ্রত্যাশীকে হত্যা করা হয়েছে।
গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন পরিচালিত গাজাজুড়ে চারটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র দিনে মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য খোলা হয়। বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন সেখানে ভিড় জমায়। এই অবস্থায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে তাদের প্রাণ যায়। ৫৮ বছর বয়সী বিধবা মানসুরা ফাদল আল-হেলু বলেন, ‘সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ ও অত্যন্ত বিপজ্জনক। দেইর আল-বালাহের একজন বাবা আবু আল-আবেদ ক্ষোভ প্রকাশ করেন, ‘যখন ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের কথা আসে, তখন আরব-অনারব কেউ আমাদের মনে রাখে না।’
উত্তর গাজার জরুরি ও অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার প্রধান ফারেস আফানাহ আলজাজিরাকে বলেন, যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় তাঁর বিভাগের ৮০ শতাংশ যানবাহন ধ্বংস হয়ে গেছে।
‘আমরা হাড়ের পেছনে ছুটতে থাকা কুকুরের মতো’
গাজার ওপর দিয়ে বিমান থেকে বাতাসে ছিটকে পড়া ত্রাণগুলো সুরক্ষিত থাকে না। মানুষের খাবার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে বালুর মধ্যে। ফিলিস্তিনিরা এ প্রক্রিয়ায় অপমানিত বোধ করেন। গাজার একজন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি রানা আত্তিয়া বলেন, ‘আমাদের মনে হয়, বিমান থেকে খাবার ফেলার পর হাড়ের পেছনে ছুটতে থাকা কুকুরের মতো আমাদের দশা। এতে আমরা অপমানিত।’
Posted ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh