বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১
রাজনীতি এবং নির্বাচনে দূরদর্শীতার পাশাপাশি চলে কৌশলের খেলা। রাজনীতিতে যারা দক্ষ-অভিজ্ঞ এবং কাজ করেন বিশ্লেষক হিসেবে তারা পূর্বাহ্নেই আঁচ করতে পারেন অনেক কিছু।
সেভাবেই অগ্রসর হন। সক্রিয় হন রাজনীতিতে ও নির্বাচনী প্রচারনায়। রাজনীতিতে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হলে তখন অনিবার্য হয়ে উঠে ভড়াডুবি। আর এজন্যই অভিজ্ঞ নাবিকের মতো পর্যবেক্ষণ করতে হয় নির্বাচনী পালে লাগা হাওয়ার গতি প্রকৃতি। নানা কারণেই গত ২২ জুৃন অনুষ্ঠিত নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক প্রাইমারী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিনউনিটির নিকট।
এ নির্বাচনে বিভিন্ন পদে বেশ ক’জন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থীও অংশ নেন। অতীতের নির্বাচনেও প্রার্থী হন অনেকে। তবে এবার ব্যতিক্রম ছিলো কিছুটা। ডেমোক্রেটিক এ প্রাইমারিকে ঘিরে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটি বিভক্ত হয়ে পড়ে বরাবরের মতো। বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনীতি সম্পৃক্ত ব্যক্তি সমর্থন জানান তাদের পছন্দনীয় প্রার্থীকে। ফলে এককভাবে কোন প্রার্থীকেই সমর্থন জানানো সম্ভব হয়নি। এদিক থেকে প্রার্থী বাছাই ও সমর্থনের ক্ষেত্রে বিশেষ দূরদর্শিতার প্রমাণ রেখেছেন আবু জাফর মাহমুদ।
হোম কেয়ার এজেন্সি বাংলা সিডিপ্যাপ’র প্রধান নির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু জাফর মাহমুদ। এবারের প্রাইমারীতে বিভিন্ন পদে চারজন প্রার্থীকে সমর্থন দেন তিনি। এসব প্রার্থীদের পক্ষে নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করেন প্রার্থীদের অনুকূলে। আবু জাফর মাহমুদ সমর্থিতরা হচ্ছেন-নিউইয়র্ক সিটি মেয়র প্রার্থী এরিক অ্যাডামস, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট পদে ডনোভান রিচার্ডস, জ্যাকসন হাইটস এলাকার সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৫ এর প্রার্থী শেখর কৃষ্ণান এবং কুইন্স কাউন্টি সিভিল কোর্ট জাজ প্রার্থী এটর্নি সোমা সাঈদ। গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত প্রাইমারী এ চারজন প্রার্থীই ফলাফলে এগিয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে র্যাঙ্কড চয়েস ভোট পদ্ধতির কারণে ও অ্যাবসেন্টি ভোট গণনার ফলাফলে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন চারজন প্রার্থীই।
আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থীদের পরাজিত করে তারা চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনবেন এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। নিজ সমর্থিত চারজন প্রার্থীর চূড়ান্ত বিজয়ে উচ্ছ্বসিত আবু জাফর মাহমুদ। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, রাজনীতিতে সবাইকে আরো অধিকতর সচেতন হতে হবে। সম্পৃক্ত হতে হবে গভীরভাবে। অভিবাসীদের অধিকার আদায়ে মোক্ষম অস্ত্র হচ্ছে নির্বাচন। আর নির্বাচনে যারা অবহেলিত শ্রেনীর জন্য কাজ করবেন বেছে নিতে হবে এমন প্রার্থীদের। সেদিক থেকে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন। এর আগে প্রার্থীদের পক্ষে বিভিন্নভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ।
ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে বাংলা সিডি প্যাপ’র প্রচারণা
সিটির ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে ভোট গ্রহণের দিন আকার্ষণীয় র্যালির আয়োজন করে বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিস। নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে এবার বাংলাদেশী আমেরিকানদের অংশগ্রহণ ছিলো সক্রিয়। অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় যা ছিলো অনেকটা চোখে পড়ার মতো। গত ২২জুন অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে সিটি কাউন্সিলে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থীও সংখ্যা ছিলো এক ডজন। নির্বাচনে এসব প্রার্থীর সফলতা-ব্যর্থতা বিশ্লেষণ সাপেক্ষ। তবে মেয়র থেকে শুরু করে সিটি কাউন্সিল মেম্বার প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা গেছে বাংলাদেশীদেরকে। বিশেষ করে জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কস, এস্টোরিয়া, ওজোনপার্ক সহ বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলো ছিলো বেশ সরব।
প্রতিটি আলোচনার টেবিলে উঠে আসে বাংলাদেশী প্রার্থীদের নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি। তারপরও প্রতিটি প্রার্থীর পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নেন অনেকে। সমর্থন দেন পছন্দের প্রার্থীকে। শুধু সমর্থন বা নির্বাচনী প্রচারণাতেই ক্ষান্ত হননি বাংলাদেশীরা বিভিন্ন পদে নির্বাচনী লড়াইয়ে লিপ্ত প্রার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন অনেকে। বিগত এক বছর ধরে এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত ছিলেন অনেক বাংলাদেশী। এদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশী আমেরিকান সোস্যাল ও পলিটিক্যাল এক্টিভিস্ট আবু জাফর মাহমুদ। বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু জাফর মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। নিউইয়র্ক স্টেট ও সিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে বরাবরই পালন করেছেন সক্রিয় ভূমিকা। সমর্থন জানিয়েছেন এবং অবস্থান নিয়েছেন পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে। এ সময়ে অনেক রাজনীতিবিদদের সাথে তার সম্পর্ক গড়িয়েছে নিবিড় সখ্যতায়। নিউইয়র্ক স্টেটের লাইসেন্স প্রাপ্ত হোম হেলথ কেয়ার এজেন্সি বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট আবু জাফর মাহমুদ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে পাঁচজন প্রার্থীকে সমর্থন জানান তিনি এবং অভিনব কায়দায় নির্বাচনী প্রচারণা চালান তাদের জন্য। আর এজন্য তিনি তার প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সম্পৃক্ত করেন।
আবু জাফর মাহমুদ ও তার প্রতিষ্ঠানের সমর্থিত প্রার্থীরা হচ্ছেন মেয়র পদে ব্রুকলীন বরো প্রেসিডেন্ট এরিক অ্যাডামস, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট পদে একই অফিসের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ডস, জ্যাকসন হাইটস এলাকার সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৫ এর কাউন্সিল মেম্বার প্রার্থী শেখের ক্রিসনান, কুইন্স কাউন্টি সিভিল কোর্ট বিচারক পদে সোমা সাঈদ ও সিটি কম্পট্রোলার পদে কোরি জনসন। এসব প্রার্থীদের অনেকের ফান্ড রেইজিংয়েও অংশ নেন আবু জাফর মাহমুদ। এমনকি তার প্রতিষ্ঠানের জ্যাকসন হাইটস কার্যালয়েও অনুষ্ঠিত হয় ফান্ড রেইজিং। এতে এককভাবে অংশ নেন তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। প্রাইমারী নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন রকম প্রচার প্রচারণায়ও অংশ নেন তারা। তবে প্রাইমারীর দিন সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন ভিন্নধর্মী প্রচারণায় নেমে।
বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসের পরিবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত র্যালি করে জ্যাকসন হাইটস এলাকায় চারটি ভোট কেন্দ্র ঘুরে নিজেদের সমর্থিত প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানায়। পথচারীসহ বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মানুষকে তারা আহ্বান জানান ভোট কেন্দ্রে যেতে। র্যালিতে অংশগ্রহণকারী প্রায় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক, প্লেকার্ড, ফেস্টুন, ব্যানার বহন করেন। অভিনব কায়দায় নির্বাচনের দিনে এ র্যালি সকলের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। এধরণের র্যালির ব্যাপারে প্রার্থীরাও পূর্বাহ্নে অবগত না থাকায় তারা অনেকটা অভিভূত হয়ে পড়েন। ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীর প্রাথমিক ফলাফলে আবু জাফর মাহমুদ ও তার প্রতিষ্ঠানের সমর্থিত সিংহভাগ প্রার্থীই এগিয়ে আছেন।
নির্বাচনের দিন র্যালির ব্যবস্থা করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন আবু জাফর মাহমুদ। তিনি মনে করেন অভিবাসী সমাজের অধিকার আদায় করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনী দৌড়ে এগিয়ে থাকা অন্যান্য জাতির গোষ্ঠির তূলনায় বাংলাদেশী আমেরিকানদের মেধা মনন ও প্রজ্ঞা কোন অংশেই কম নয়। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কমিউনিটি হিসেবে প্রমাণ করতে হবে নিজেদের ঐক্যবদ্ধতা।
Posted ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh