বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১
করোনা মহামারিকালে বাড়ির দাম বেড়েছে। বেকার হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। এমন দুঃসময়ে বাড়ি ক্রয় বিক্রয় নিয়ে নানা ধরণের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, অনেকের মনে। এই দ্বিধা কাটাতে বাড়ির মালিক, বিনিয়োগকারী এবং যারা প্রথমবারের মতো বাড়ী ক্রয় করতে আগ্রহী তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রিয়েল এস্টেট সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় গত ২২ সেপ্টেম্বর, বুধবার।
জ্যামাইকার হিলসাইড এভিন্যুস্থ তাজমহল পার্টিহলে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় সেমিনারটি। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ের সাথে দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত এ্যালায়েড মর্টগেজ এর সিনিয়র লোন অফিসার ও মর্টগেজ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ জান ফাহিম, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ক্লোজিং এটর্নি আফার বক্স সম্মিলিতভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করেন। সেমিনারের মূল বক্তা এই দুই ব্যক্তিত্ব ছাড়াও ছিলেন এইচএবি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ইসমাইল আহমেদ। সেমিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডাঃ ওয়াজেদ এ. খান। ডাঃ খান সেমিনারে আলোচকদেরকে পরিচয় করিয়ে দেন।
ডাঃ খান বলেন, বাংলাদেশী আমেরিকান অভিবাসী সমাজে সিংহভাগ মানুষের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন থাকে নিজ বাড়িতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাসের। বিশেষ করে বাংলাদেশী সমাজ ও পারিবারিক সংস্কৃতির অন্যতম অনুসঙ্গ বাড়ির মালিকানা। বাড়ির গর্বিত মালিক হতে তাই তারা সঞ্চয়ী হয়ে উঠেন। কষ্ট করে হলেও অগ্রসর হন বাড়ি ক্রয়ের দিকে। আবার প্রথমবার বাড়ি কিনতে গিয়ে রিয়েল এস্টেট এবং মর্টগেজ এজেন্ট, এমনকি রিয়েল এস্টেট এটর্নি দ্বারাও অনেকে প্রতারিত হন। শিকার হন ভোগান্তির। অনেক অসৎ এজেন্ট নিরীহ ক্রেতাদের পথে বসিয়ে দেন। এমন ঘটনা সমাজে অহরহই ঘটছে। বাড়ি ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় সাধারণ ক্রেতারা পড়ছেন বিপাকে। কিভাবে এসব ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে বাড়ি ক্রয় করতে পারেন সেজন্য আজকের সেমিনার। তিনি বলেন, আজকের আলোচকরা কমিউনিটিতে গ্রাহকদের বিশ্বস্থ এবং আস্থা ও সুনামের সাথে কাজ করে আসছি।
মোহাম্মদ জান ফাহিম বলেন, ডাউন পেমেন্টের জন্য মোটা অংকের অর্থ না থাকলেও দুঃশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। যারা কম ডাউন পেমেন্টে বাড়ি কিনতে চান তাদের জন্য এফএইচ এ লোনের ব্যবস্থা আছে। এ ধরণের লোন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে সে বিষয়গুলো তিনি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, প্রি-এপ্রুভালের জন্য গত ২ বছরের ডব্লু-টু লাগবে এবং ট্যাক্স রিটার্নের কপি লাগবে। সেই সাথে কারেন্ট ব্যাংক স্টেটমেন্টও লাগবে। তবে যাদের ব্যাংকে যথেষ্ট অর্থ নেই তারাও বাড়ি কিনতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনার আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব আপনাকে অর্থ গিফট হিসাবে দিতে পারেন। সেই অর্থ ব্যবহার করতে পারেন বাড়ি কেনার জন্য। তিনি বলেন, একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মর্গেজ লোন অফিসার হাতে ডব্লু-টু নিলেই বুঝতে পারেন উক্ত ডব্লু-টু অনুযায়ী কত লোন পাওয়া যেতে পারে।
জান ফাহিম বলেন, আমাদের কম্যুনিটিতে অনেক সেলফ এমপ্লয়েড ব্যক্তি আছেন। তারা বাড়ি কিনতে চাইলে ২ বছরের ট্যাক্স রিটার্নের কপি লাগবে। সেই সাথে কারেন্ট এক মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট। তিনি কোভিড মহামারির সময় যারা কাজ করেননি তাদের বাড়ি কেনা বিষয়ে বলেন, আপনারা যার ডব্লু-টুতে কাজ করতেন তারা সহ যারা সেলফ এমপ্লয়েড তারাও কাজ করেননি এই সময়ে। আপনারা অনেকেই হয়তো আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট পেয়েছেন। আপনারা যারা এরপর ফুলটাইম কাজে ফিরেছেন বা ফুলটাইম ব্যবসায় ফিরেছেন, তারা তাদের পে-স্টাব শো করলেও মর্গেজ লোন পেতে পারেন। আনএমপ্লয়মেন্ট পাওয়ার সময় মর্গেজ লোন পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বর্তমান মার্কেটে একজন লোনগ্রহিতার কমপক্ষে ৭০০ ক্রেডিট স্কোর থাকতে হয় বাড়ি কেনার জন্য। তাও যদি না থাকে তাহলে ৬৮০ ক্রেডিট স্কোরেও বাড়ি কেনা যেতে পারে যদি ইনকাম বেশি থাকে।
এ্যালায়েড মর্টগেজ বিগত ২২ বছর ধরে কম্যুনিটিতে হাউজ লোন দিয়ে আসছে। তিনি বলেন, সর্বনিম্ন ৩.৫% ডাউন পেমেন্টে বাড়ি ক্রয় করা যায়। এজন্য কমপক্ষে ২ বছরের ট্যাক্স রিটার্ন পেপারের প্রয়োজন হয়। বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বন্ধু বা নিকটাত্মীয় কাউকে কো-সাইনার করা যেতে পারে। বাড়ির মালিককে প্রতিমাসের প্রথমেই ব্যাংক মর্টগেজের অর্থে পরিশোধ করতে হয় বলে জানান তিনি। যাদের কমপক্ষে ক্রেডিট স্কোর ৬৪০ তারাও বাড়ি ক্রয় করতে পারেন। তবে বাড়ির মালিককে মর্টগেজের অর্থ সময়মতো পরিশোধ করতে হবে।
বাড়ি ক্লোজিংয়ের ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৬০দিন সময় লাগতে পারে বলে জানান জান ফাহিম। মোহাম্মদ জান ফাহিম বলেন, প্রথম বার যারা বাড়ি ক্রয় করতে যাচ্ছেন মর্টগেজ সম্পর্কে অবশ্যই তাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। মর্টগেজ একটি বড় ধরণের লোন বা ঋণ। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা না থাকলে আর্থিকভাবে বিপাকে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তিনি বলেন, চাকুরী করেন না এমন সেলফ এম্পøয়েড যারা তাদের ক্ষেত্রে দুই বছরের ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হবে ব্যাংক লোনের জন্য। জান ফাহিম বলেন, বাড়ি কেনার আগেই আপনারা প্রি-অ্যাপ্রুভাল নিয়ে নিন। জেনে নিন যে, আপনি কতটুকু লোন পাবেন। আরো জেনে নিন, কি পরিমাণ অর্থ পেলে আপনি একটি বাড়ি কিনতে পারবেন। এছাড়াও আপনার জেনে নেয়া আবশ্যক যে আপনার পেমেন্টের পরিমাণ কি হবে এবং আপনি তা বহন করতে পাববেন কিনা অথবা তা আপনার সাধ্যের মধ্যে কিনা।
বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ক্লোজিং এটর্নি আফার বক্স সেমিনারে আগতদেরকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, যারা প্রথমবারের মতো বাড়ি ক্রয়ে আগ্রহী অবশ্যই তাদেরকে অনেকগুলো বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তা না হলে ক্রেতাগণ প্রতারিত হতে পারেন। বিশেষ করে বাড়ির ইন্সপেকশন, টাইটেল, ইন্সুরেন্স-পলিসি, মর্টগেজ, ট্যাক্স সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। এছাড়া বাড়িটিতে কোন ধরণের ভায়োলেশন আছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। এ বিষয় গুলোর ব্যাপারে রিয়েল এস্টেট এটর্নির সাথে পরামর্শ করা আবশ্যক বলে জানান এটর্নি আফার বক্স। রিয়েল এস্টেট এটর্নি আফার বক্শ বলেন, বাড়ি কেনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কন্ট্রাক্ট, টাইটেল ও এ্যাপ্রেইজাল। এখন যেহেতু বাড়ির ডিমান্ড অনেক বেশি এবং এ্যাভেইল্যাবেল বাড়ির সংখ্যা কম, তাই অনেকেই বাড়ির দাম বেশি হাঁকছে। তাই পছন্দের বাড়ি কেনার আগে তার বাজারমূল্য যাচাই করার জন্য এ্যাপ্রেইজাল করা আবশ্যিক। তিনি বলেন, বাড়ির কন্ট্রাক্ট চূড়ান্ত করার আগে আপনাদের রিয়েল এস্টেট ব্রোকাররকে এই বিষয়টি জানাতে হবে।
তিনি বলেন, বাড়ি কেনার আগে বাড়ির এ্যাপ্রেইজাল করাতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে। তিনি বলেন, এটর্নীর পরামর্শ ছাড়া গাড়ি কিংবা অন্য কোন ব্যবসায়ের শেয়ার ক্রয় করা গেলেও বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেট এটর্নির কোন বিকল্প নেই। বাড়ির ক্লোজিংয়ের জন্য বিশ্বস্থ এবং অভিজ্ঞ এটর্নির সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন এটর্নি আফার বক্স। রিয়েল এস্টেট ব্রুকার, ট্যাক্স পেপার, কন্ট্রাক্ট সেল, ফাইন্যান্সিং, জোনিং চেকিং, ইন্সুরেন্স টাইটেল, প্রপার্টি কনডিশন কেমন এবং ফাইনাল ক্লোজিং সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্যই রিয়েল এস্টেট এটর্নির প্রয়োজন বলে জানান আফার বক্স।
ুএইচএবি ব্যাংকের কর্মাশিয়াল রিয়েল এস্টেট লেন্ডিং ইসমাইল আহমেদ বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংক লোনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ব্যাংকিংয়ে বিশেষ করে বিনিয়োগ, রিটেল এবং লেন্ডিংয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ইসমাইল আহমেদ বলেন, বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরই ক্রেতাগণ ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন। এইচএবি ব্যাংক থেকে বাড়ি ক্রয়ের জন্য লোন পেতে ক্রেতাদেরকে তার অফিসে আসার আহ্বান জানান।
ক্রেতার আয়, ডাউন পেমেন্টের পরিমাণ ক্রেডিট স্কোর সহ অন্যান্য বিষয়গুলো লোন আবেদনের পূর্বেই ঠিক করতে হবে বলে জানান ইসমাইল আহমেদ। একজন লোকের আয় কত, ক্রেডিট স্কোর কেমন, ক্রেডিট স্কোর কম থাকলে তা ভালো করতে বা অল্প সময়ের মধ্যে ক্রেডিট রিপেয়ারের জন্য কি করতে হবে, কারো ঋণ থাকলে সেক্ষেত্রে করণীয় কি, অল্প ডাউন পেমেন্টে কিভাবে বাড়ি কেনা সম্ভব, ট্যাক্স রিটার্ন ছাড়া কিভাবে বাড়ি কেনা যায়, ক্লোজিং কস্ট ইত্যাদি বিষয়ে জানা জরুরী। এছাড়াও বাড়ির মালিক হয়ে থাকলে কিভাবে রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর হতে পারে, কমার্শিয়াল ইনভেস্টমেন্ট কিভাবে করতে পারে, যারা বাড়ি কিনবে তাদের ট্যাক্স রিটার্ন কিভাবে করা উচিত, যারা সেলফ এমপ্লয়েড তাদেরকে কিভাবে আয় প্রদর্শন করতে হবে এসবও তারা বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি।
সেমিনারে জান ফাহিম, ইসমাইল আহমেদ এবং এটর্নি আফার বকশ আগ্রহী ক্রেতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তারা বলেন, একটি বাড়ির মালিকানা সন্তানদের ভবিষ্যতের উপর কি ধরণের প্রভাব বিস্তার করে এবং অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের উপর ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে সে প্রসঙ্গেও তারা আলোকপাত করেন। স্বল্প আয়ের মানুষ কিভাবে বাড়ি ক্রয় করতে পারেন এব্যাপারেও সম্যক ধারণা দেন তারা। রিয়েল এস্টেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন: মোহাম্মদ জান ফাহিম-৫১৬-৩৪৮-৩৪২৮ অথবা ইসমাইল আহমেদ-৯১৭-৭০৩-৮৪৭৭ ও এটর্নি আফার বক্স-৭১৮-৪৮৪-৮৫১৫ এর সাথে।
Posted ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh