মোহাম্মদ আজাদ : | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিষ্ট্রেশন (এফডিএ) আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন জরুরী ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করবে। সিএনএন এর খবরে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী আমেরিকান ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার, জার্মান কোম্পানি বায়োএেনটেক ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্য একটি কোম্পানি মডারনা পৃথকভাবে এফডিএর কাছে তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিন জরুরী ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু কোন কোম্পানিকে আগে ভ্যাকসিন বাজারজাত করার অনুমতি দেয়া হবে তা স্থির করবে ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। এ তথ্য জানিয়েছেন অপরেশন ওয়ারন স্পিডের চি সায়েন্টিফিক এডভাইজার ডা: সোনসেফ স্লাওয়ি। মডারনা বলেছে, এফডিএ যদি তাদের ভ্যাকসিন বাজারজাত করার অনুমতি দেয় তাহলে তারা ২১ ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে প্রস্তুত। মডারনার প্রধান নির্বাহী ষ্টিফেন বানসেল বরৈচৈন, ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ তারা ২০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারবে এবং ২০২১ সালে তারা ৫০০ মিলিয়ন ডোজ থেকে এক বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে সক্ষম হবে। তারা আরো বলেছে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে ভাইরাস মুক্ত করতে হলে ভ্যাকসিনে দুইটি ডোজ নিতে হবে।
প্রতি মিনিটে গড়ে একজন আমেরিকানের মৃত্যু হচ্ছে করোনায় প্রকোপ শুরুর পর থেকে। সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনশন)’র চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা গত ১ ডিসেম্বর এ তথ্য প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় যতদ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন বিতরণ করতে হবে এবং তা হতে হবে স্বচ্ছ, জবাবদিহিতা এবং সুষ্ঠুভাবে। এ বৈঠকের সুপারিশ অনুযায়ী সর্বপ্রথম সিনিয়র সেন্টার তথা নার্সিং হোম এবং চিকিৎসক, নার্স, স্কুলে হেলথকেয়ার কর্মীর মধ্যে ভ্যাকসিন পৌঁছাতে হবে। শীত যত তীব্র হবে এর প্রকোপ তত মর্মান্তিক হবে বলেও গবেষকরা উল্লেখ করেন। তাই যত দ্রুত সম্ভব সর্বত্র ভ্যাকসিন বিতরণ ও তা যথাযথভাবে প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা জানান যে, ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত নার্সিং হোমে মারা গেছেন ৬৯ হাজার মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের নার্সিং হোমের বাসিন্দা হচ্ছেন মোট জনসংখ্যার মাত্র ১% অর্থাৎ ৩০ লাখের মত। অথচ করোনায় মৃতদের মধ্যে নার্সিং হোমের বাসিন্দা হচ্ছেন ৩৯%। এর বাইরে আরো ৫৪৬৯ জন রয়েছেন (১৫ অক্টোবর পর্যন্ত) যারা নার্সিং হোমের বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার নিউইয়র্ক টাইমসের অনলাইন ভার্সনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে হোয়াইট হাউজ থেকে এফডিএর কমিশনার ডা: ষ্টিফেন হ্যানের উপর একটি সমন জারি করা হয়েছে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েে যে এফডিএ ফাইজারের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিতে এতো বিলম্ব করছে কেন। রিপোর্টে আরো বলা হয়ে যে, যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাল্লা দিয়ে ভ্যাকসিন অনুমোদনে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। টাইমস বলেছে, হয়তো যুক্তরাজ্য সবার আগে ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়ে চমক সৃষ্টি করতে পারে। যুক্তরাজ্যে এখন তাদের কোম্পানি এস্ট্রাজনিকা ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রস্তুতকৃত ভ্যাকসিন এবং ফাইজার ও বায়োএনটেকের প্রস্তুতকৃত ভ্যাকসিন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ৃবটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত মঙ্গলবার ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে গিয়ে বলেন, আমরা অল্প ক’দিনের মধ্যে ভ্যাকসিন পেয়ে যাঈো। হোয়াইট হাউজের চিফ অফ স্টাফ মার্ক মেডোস বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন সামিটে হোষ্টের দায়িত্ব পালন করবেন। হোয়াইট হাউজ করোনা ভাইরাস টাস্ক ফোর্সের প্রধান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও সামিটে অংশগ্রহণ করবেন।
কোভিড ভ্যাকসিন কে আগে পাবেন, তা নিয়ে বিতর্ক উঠার পর গত মঙ্গলবার সিডিসি’র উপদেষ্টারা তাদের আটলান্টার হেড অফিসে এক ভোট অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এতে ১৩-১ ভোটে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, হেলথ কেয়ার ষ্টাফ ও লং টার্ম কেয়ার ফ্যাসিলিটির রেসিডেন্টরা আগে ভ্যাকসিন পাবেন। সিডিসি বলছে, এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে যত সংখ্যক মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ২ লাখ ৪০ হাজার হেলথ কেয়ার স্টাফ এবং মৃত্যু ঘটেছে ৮৫৮ জন হেলথ কেয়ার স্টাফের। যুক্তরাষ্ট্রের এলার্জি ও সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ এন্থনি পাউচি আেিমরিকানদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আপনারা ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য প্রস্ততু হোন। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কোভিড ১৯ এর জনগণ ভ্যাকসিন নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আপনাদেরকে নির্ভর করতে হবে প্রতিটি স্টিট কিভাবে ভ্যাকসিন বিলিবন্টন করে তার উপর। তিনি গত সোমবার ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গের সাথে ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে বলেন, এ ভয়াবহতার মাঝে ভ্যাকসিন নিতে আমি সবার আগে লাইনে দাঁড়াব না। হয়তো আমি সবার শেষে লাইনে দাঁড়াতে পারি। সিএনএন বলেছে, ফেডারেল সরকার অন্যান্য রোগের ভ্যাকসিন ইতিপূর্বে যে পদ্ধতিতে স্টেগুলোতে বিতরণ করেছে কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন বন্টনেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
ভ্যাকসিন সরবরাহে প্রস্তুত মার্কিন পরিবহন দপ্তর
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদন পাওয়ার পরই যেন জনগণের কাছে কোভিড ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া যায়, সে জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে মার্কিন পরিবহন দপ্তর। জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিন সরবরাহে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতাগুলো সেরে রেখেছে বলে তারা জানিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, জরুরি ভিত্তিতে দ্রুততার সঙ্গে কোভিড ভ্যাকসিন যেন সরবরাহ কর যায় সে জন্য মার্কিন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আগে থেকেই কাজ করছে। ভ্যাকসিন অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গেই তা কারখানা থেকে বিতরণকেন্দ্রগুলোয় নিয়ে যেতে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। ভ্যাকসিন পরিবহনে সম্ভাব্য সব সমস্যার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগে থেকেই নেওয়া হয়েছে।উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত মার্কিন দুই প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও মডার্না তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের অনুমোদন চেয়ে এফডিএর কাছে আবেদন করেছে। এর মধ্যে ফাইজারের আবেদন নিয়ে এফডিএর সংশ্লিষ্ট কমিটি আগামী ১০ ডিসেম্বর সভায় বসবে। আর মডার্নার আবেদনটি নিয়ে তারা বসবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর। এ দুই সভায় ভ্যাকসিন দুটি অনুমোদন পেলে তা দ্রুত সরবরাহ করা হবে।
ভ্যাকসিনের সরবরাহ যেন দ্রুততার সঙ্গে করা যায়, সে জন্য বেশ কিছু কাজ আগে থেকে সেরে রাখা হচ্ছে। সাধারণত কোনো টিকা এফডিএ অনুমোদন পাওয়ার পর সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) কাছে যায়। সিডিসি তখন এর বিতরণ পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় যাবতীয় নির্দেশনা দেয়। এসব নির্দেশনা মেনেই সংশ্লিষ্ট ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো আগে থেকেই সব প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ফাইজারের পর ভ্যাকসিনের অনুমোদন চাচ্ছে মডার্না
ওষুধ কোম্পানি মডার্না তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের অনুমোদনের জন্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) কাছে আবেদন করবে সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে মডার্নার ভ্যাকসিন ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ ও কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যাওয়া থেকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে। এখন বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের পরিচালিত পরীক্ষার যাবতীয় তথ্য সংযুক্ত করে ভ্যাকসিনটির প্রয়োগ শুরুর জন্য অনুমোদন চাইবে মডার্না। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে মডার্নার ভ্যাকসিন ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ ও কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যাওয়া থেকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে এ বিষয়ে এফডিএর ভ্যাকসিন সম্পর্কিত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. পল অফিট সিএনএনকে বলেন, ‘এটা দারুণ। এই তথ্যগুলো সত্যিই উৎসাহব্যঞ্জক।’ এত দিন পরিচালিত গবেষণা ও পরীক্ষার পর পাওয়া সব তথ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন মডার্নার প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ড. টাল জ্যাকস। সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘এই প্রথম আমি কেঁদেছি। এই মহামারির গতিপথ বদলে দেওয়ার পূর্ণ প্রত্যাশা আমাদের ছিল।’ এর আগে আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফাইজার করোনা ভ্যাকসিনের অনুমোদন চেয়ে এফডিএর কাছে আবেদন করে। গত ২০ নভেম্বর করা ফাইজারের ওই আবেদনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া তথ্যেও সংশ্লিষ্ট ভ্যাকসিনের উচ্চ কার্যক্ষমতার কথা উল্লেখ করা হয়।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) তৈরি করছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের করোনা টিকা। এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে জানিয়ে পাঁচ কোটি রুপি দাবি করেছিলেন চেন্নাইয়ের এক স্বেচ্ছাসেবক। ওই ব্যক্তির স্ত্রী বলেছেন, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তাঁর স্বামী সৃজনশীলতা হারিয়ে ফেলেছেন। একই কারণে কাজও হারিয়েছেন তিনি। ফলে তাঁর আয়রোজগারেও প্রভাব পড়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই নারী এই দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, অক্সফোর্ডের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর থেকে তাঁর স্বামীর দেহে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তিনি নিজের সৃজনশীলতা হারিয়ে ফেলেছেন। এতে তাঁর কর্মক্ষমতাও কমে যায়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি থেকে পাওয়া কাজ ফসকে গেছে। কারণ ওই কাজটি করার জন্য যে মনোযোগ ও সৃজনশীলতা প্রয়োজন ছিল, তা তিনি দেখাতে পারছিলেন না। বর্তমানে অনলাইনে অর্থ লেনদেনের মতো তুলনামূলক সহজ কাজও তিনি করতে পারছেন না।
সেরাম ইনস্টিটিউটকে গত ২১ নভেম্বর আইনি নোটিশ পাঠিয়ে ভুক্তভোগী ওই স্বেচ্ছাসেবক দাবি করেছেন, সেরামের উৎপাদিত ‘কোভিশিল্ড’ টিকা নেওয়ার পরে তাঁর স্নায়ুতন্ত্র প্রায় সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে। আচরণগত নানা পরিবর্তন আসে। এ কারণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনি পাঁচ কোটি রুপি সেরামের কাছে দাবি করেন। এ ছাড়া অবিলম্বে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়েছেন। অবশ্য শুরু থেকেই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। ওই স্বেচ্ছাসেবকের দাবি ‘মিথ্যা’ আখ্যা দিয়ে ১০০ কোটি রুপির মানহানির মামলাও করেছে সেরাম। প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য, ওই ব্যক্তির অভিযোগগুলো বিপজ্জনক ও ভ্রান্ত ধারণাভিত্তিক। প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে এমন অভিযোগ করা হচ্ছে। সেরাম আরও বলেছে, অক্সফোর্ডের করোনা টিকা ‘নিরাপদ ও এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম।’ তবে ৪০ বছর বয়সী ওই স্বেচ্ছাসেবকের স্ত্রী বলেছেন, অর্থনৈতিক বা অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থেকে এসব অভিযোগ করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা পুরো বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানাতে চেয়েছি। ভারত এই টিকাকে বিকল্প হিসেবে দেখছে। আমরা চুপ থাকতে পারি না। আমরা চুপ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতাম…কিন্তু আমাদের মন বলেছে যে এটা করা উচিত।’ ওই নারী বলেছেন, তাঁর স্বামী পেশায় একজন বিপণন পেশাজীবী। তিনি বলেন, ‘লেখার ক্ষমতা, সৃজনশীলভাবে কোনো বিষয় উপস্থাপনের ক্ষমতা তাঁর ছিল। এখন সে তা করতে পারছে না।’ তবে সেই নারী এ-ও বলেছেন, অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু এখনো সহজ কাজ করতে গিয়েও সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তাঁর স্বামী।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থার তৈরি কোভিশিল্ড টিকা ভারতে উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। এর পৃ‘পোষকতা করছে আইসিএমআর। টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ক্ষেত্রে ওই স্বেচ্ছাসেবককে গত ১ অক্টোবর টিকা দেওয়া হয়েছিল। তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইয়ের শ্রীরামচন্দ্র ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ কেন্দ্রে টিকাটি দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী ওই স্বেচ্ছাসেবক এর আগে দেওয়া নোটিশে বলেছিলেন, শরীরে কোভিশিল্ডের ডোজ প্রবেশ করার পরই তিনি নানা উপসর্গে আক্রান্ত হন। এর জেরে মস্তিষ্কে প্রভাব পড়ে। তাঁর দাবি, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা গেছে, টিকা নেওয়ার কারণেই তাঁর শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এদিকে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া বলেছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত করোনা টিকাটির কার্যকারিতা প্রমাণিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হবে না। এ ব্যাপারে ‘নিশ্চয়তা’ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে একই সঙ্গে ভুক্তভোগী ব্যক্তির দাবিকেও নাকচ করেছে সেরাম ইনস্টিটিউটি অব ইন্ডিয়া।
বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারিতে মিলবে ভ্যাকসিন
আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে দেশে করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়া যাবে। বিদেশ থেকে আনা টিকা দেশের সব মানুষকে দেয়া সম্ভব হবে না, তাই দেশীয় কোম্পানির উদ্ভাবিত টিকার প্রতিও গুরুত্বারোপ দেয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এদিকে ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য আইসিডিডিআরবির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে গ্লোব বায়োটেক ফার্মাসিউটিক্যালস। এখন তারা সিআরও বাংলাদেশের সঙ্গে হিউম্যান ট্রায়াল করতে যাচ্ছে। মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি মডার্না উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিনের শেষ ধাপের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তাদের এ টিকা ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ কার্যকর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাকসিনটির জরুরি অনুমোদনের আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। পয়লা ডিসেম্বর করোনা সংক্রমনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বে শনাক্ত রোগী ৬ কোটি ৩৭ লাখ ছাড়িয়েছে। এ রোগে ১৪ লাখ ৭৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান। গত ১ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের টিকার বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা হচ্ছে। যে টিকাই আগে আসবে, সেটাই আনার চেষ্টা করা হবে। ফেব্রুয়ারিতেই ভ্যাকসিন পাব আশা করি। তবে তার চেয়ে বেশি দরকার স্বাস্থ্যবিধি মানা।
Posted ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh