বাংলাদেশ ডেস্ক | শনিবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ছবি: সংগৃহীত
বিগত কয়েকবছর ধরেই জার্মানিতে চলছে তীব্র কর্মী সংকট। এর মধ্যেই দেশটির ৪৫টি কোম্পানি পরীক্ষামূলকভাবে ৪ কার্যদিবসের সপ্তাহ চালু করেছে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। তবে সময় কমলেও কর্মীরা মাসের পুরো বেতনই পাবেন। অলাভজনক সংস্থা ফোর ডে উইক গ্লোবালের (৪ ডিডব্লিউজি) সঙ্গে যৌথভাবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইন্ট্রাপ্রেনর-এর নেতৃত্ব এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জার্মানিতে।
তারা বলছে, সপ্তাহে চার কার্যদিবস চালু হলে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। ফলে দেশটির দক্ষ কর্মী সংকটের উপশম হবে। জার্মানি দীর্ঘদিন ধরেই পরিশ্রম ও দক্ষতার জন্য বিখ্যাত। তারপরও গত কয়েক বছরে দেশটিতে উৎপাদনশীলতা কমে গেছে। অর্থনৈতিক ফলাফলকে কর্মঘণ্টা দিয়ে ভাগ করে উৎপাদনশীলতার হিসাব করা হয়। কাজেই কর্মীরা যদি কম সময়ে একই ফলাফল দিতে পারেন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই কোম্পানি এবং দেশের উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
সাপ্তাহিক কর্মদিবস একদিন কমানোর পক্ষে আন্দোলন করে আসা মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ৪ দিনের কর্মসপ্তাহ কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়াবে এবং তা দেশের দক্ষ শ্রমিক ঘাটতি দূর করতে সহায়তা করবে।
জার্মানিতে কর্মীদের কঠোর পরিশ্রম আর দক্ষতার জন্য দীর্ঘকালের খ্যাতি রয়েছে। তারপরও গত কয়েক বছরে দেশটিতে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। চার দিনের কর্মসপ্তাহ বাস্তবায়নের পাইলট প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া জার্মানির ইভেন্ট কোম্পানি সোলিডসেন্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সোরেন ফ্রিকি ব্লুমবার্গকে বলেছেন, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত যে, নতুন কাজের বিনিয়োগে সুফল মিলবে। কারণ এতে কর্মীদের সুস্থতা এবং উৎসাহ বাড়বে। এর ফলে পরবর্তীতে দক্ষতাও আরও বৃদ্ধি পাবে। চার দিনের সপ্তাহ যদি কাজ করে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে আমাদের কিছুই অপচয় হবে না।
চার কার্যদিবস চালু করার পক্ষের লোকজন বলছেন, সপ্তাহে পাঁচ দিনের বদলে চার কাজ করা কর্মীরা বেশি উদ্যমী ও চনমনে থাকেন। সে কারণে তারা বেশি উৎপাদনশীল হন। এ ছাড়া যারা সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করতে আগ্রহী নন, এমন অনেক লোককে শ্রমশক্তিতে যুক্ত হতে আগ্রহী করবে এই মডেল। এতে কর্মী সংকটও অনেকটাই কমবে।
সপ্তাহে চার কার্যদিবসের ধারণা নিয়ে আগেও কাজ হয়েছে। ৪ডিডব্লিউজি ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রে পাইলট কর্মসূচি চালিয়েছে। ৫০০-এর বেশি কোম্পানি পরীক্ষামূলকভাবে চার কার্যদিবসের সপ্তাহ চালু করেছে। আর প্রাথমিকভাবে ছুটি বাড়িয়ে ও কার্যদিবস কমিয়ে ভালো ফল পাওয়া গেছে।
যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩ হাজার কর্মীকে নিয়ে চার কার্যদিবসের পরীক্ষা চালিয়েছিলেন কেমব্রিজ ও বোস্টনের গবেষকরা। তারা দেখেছেন, ৪০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এ পরীক্ষার পর চাপ কম অনুভব করার কথা জানিয়েছেন। আর কর্মীদের চাকরি ছাড়া কমেছে ৫৭ শতাংশ।
এ ছাড়া কাজের সময় কমানোর ফলে অসুস্থতাজনিত ছুটিও কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ। জার্মান স্বাস্থ্যবিমা কোম্পানি ডিএকের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, গত বছর দেশটিতে কর্মীরা গড়ে ২০ দিন অসুস্থতাজনিত ছুটি নিয়েছেন। অর্থাৎ ২০২৩ সালে জার্মানিতে চাকরিতে অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতির কারণে প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলার প্রকৃত আয় হারিয়েছে বলে জানিয়েছে জার্মান অ্যাসোসিয়েশন অভ রিসার্চ-বেজড ফার্মাসিউটিক্যালস (ভিএফএ)।
১০ বছর পর আবার হংকংয়ে মেসি১০ বছর পর আবার হংকংয়ে মেসি
আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, যুক্তরাজ্যের পরীক্ষায় গবেষকরা আরও দেখেছেন, অংশগ্রহণকারী ৬১টি কোম্পানির মধ্যে ৫৬টি কোম্পানির আয় প্রায় ১.৪ শতাংশ বেড়েছে। অধিকাংশ কোম্পানিই জানিয়েছে, পরীক্ষামূলক পর্যায়ের পরও তারা চার কার্যদিবসের সপ্তাহ চালু রাখতে আগ্রহী।
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ জার্মানিতে এই মডেলের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান। তারা বলছেন, যেসব কোম্পানির সাথে চার কার্যদিবসের সপ্তাহ সামঞ্জস্যপূর্ণ, কেবল ওই কোম্পানিগুলোই এই মডেল থেকে উপকৃত হবে।
গবেষক হোলগার শেফার বলেন, কর্মঘণ্টা ২০ শতাংশ কমিয়ে উৎপাদনশীলতা ২৫ শতাংশ বাড়ানোর আশা করাটা অলীক চিন্তা।
Posted ৮:৫৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh