রবিবার, ৫ মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

তেল নিয়ে সৌদি-মার্কিন দ্বন্দ্ব চরমে

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   রবিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২২

তেল নিয়ে সৌদি-মার্কিন দ্বন্দ্ব চরমে

ছবি : সংগৃহীত

গত সপ্তাহের এক বৈঠকে জ্বালানি তেলের উৎপাদন দৈনিক রেকর্ড দুই লাখ ব্যারেল কমানোর ঘোষণা দিয়েছে রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক ও এর মিত্ররা (একসঙ্গে বলা হয় ওপেক প্লাস)। তাদের এই সিদ্ধান্ত পশ্চিমা বিশ্বে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক ক্ষোভের পাশাপাশি উদ্বেগ তৈরি করেছে। যদিও রাশিয়া এই জোটের অন্যতম প্রধান সদস্য, কিন্তু বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদক হিসেবে ওপেক প্লাসের যেকোনো সিদ্ধান্তের প্রধান নিয়ন্ত্রক সৌদি আরব। এ কারণে উৎপাদন কমানোর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বাইডেন প্রশাসনের ক্রোধের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় রিয়াদ।

এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এই মুহূর্তে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিবাদের জেরে রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবররাহ প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে এই শীতে অবস্থা কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই ইউরোপীয়দের। এই পরিস্থিতিতে বাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমা এবং তার প্রভাবে আরেক দফা দাম বাড়ার নিশ্চিত আশঙ্কাকে পশ্চিমারা ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখছে।


যদিও ওপেক বলেছে, তাদের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে আগামী নভেম্বর থেকে। কিন্তু গত বুধবার (৫ অক্টোবর) সিদ্ধান্ত জানানোর পার থেকেই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

এমন পরিস্থিতি আটকাতে পশ্চিমা দেশগুলো কয়েক মাস যাবৎ প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। নির্বাচনী প্রচারণার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে সৌদি সরকারকে বিশ্বে অচ্ছুৎ বানিয়ে ফেলার অঙ্গীকার করেছিলেন, সেই তিনি গত ১৫ জুলাই জেদ্দায় গিয়ে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তেলের উৎপাদন বাড়াতে অনুরোধ জানান।


শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, ইউরোপীয়রাও চেষ্টা চালিয়ে গেছে যেন সৌদি আরব বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়ায়। গত জুলাইয়ের শেষে সৌদি যুবরাজকে প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে রাজকীয় সংবর্ধনা দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ। একই অনুরোধ নিয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর রিয়াদে গিয়েছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও। গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন টেলিফোনে কথা বলেছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে।

কিন্তু বুধবারের ঘোষণাতেই পরিষ্কার হয়ে যায়, সৌদি আরব পশ্চিমাদের এসব দাবিকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। এমনকি সেদিন ভিয়েনায় ওপেক প্লাস জোটের বৈঠকে তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় মাত্র ৩০ মিনিটে। অর্থাৎ, ২৪টি দেশের জোটে এই প্রস্তাব নিয়ে কোনো মতবিরোধই ছিল না।


ক্ষুব্ধ বাইডেন প্রশাসন অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তকে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মুখে অপমানজনক চপেটাঘাত হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। কয়েকজন প্রভাবশালী মার্কিন রাজনীতিকও খোলাখুলি বলেছেন, ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে বিবাদে রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে সৌদি আরব।

ওপেকের সিদ্ধান্ত জানার পরপরই বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক ব্রায়ান ডিজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট খুবই হতাশ। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের ওপর ওপেকের নিয়ন্ত্রণ কমাতে কী কী করা যেতে পারে, তা নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলবে সরকার। মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট একটি সরকারি সূত্রের বরাতে বলেছে, বাইডেন প্রশাসন এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের বাজারে সৌদির প্রভাব কমানোর উপায় খোঁজা শুরু করেছে।

বাইডেন প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ লোকজন মিডিয়ায় বলেছেন, কংগ্রেসের উচিত এমন আইন করা, যাতে ওপেক সদস্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করা যায়।

কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট সদস্য সৌদি আরবকে উদ্দেশ্য করে প্রকাশ্যে হুমকির সুরে কথা বলেছেন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য টম মালিনোস্কি ও শন ক্যাসটেন গত বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, সৌদি আরব ‘শত্রুর’ মতো আচরণ করেছে। তারা এমন একটি বিল উত্থাপনেরও হুমকি দিয়েছেন যাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে সৌদি আরব থেকে তিন হাজার মার্কিন সৈন্য ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা প্রত্যাহার করতে হয়।

মালিনোস্কি ও ক্যাসটেন বলেন, এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে পরাশক্তির অবস্থানে থেকেই উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে আচরণ করতে হবে।’ অর্থাৎ তারা বলতে চেয়েছেন, আর অনুরোধ বা সুপারিশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের স্বার্থ আদায় করে নিতে হবে। বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদদাতা সামির হাশমি বলেন, ওপেক প্লাসের এই সিদ্ধান্ত শুধু তেলের বাজারের জন্যই নয়, এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বও অনেক। কারণ, জ্বালানি তেল থেকে রাশিয়ার আয় কমানোর যে প্রাণান্ত চেষ্টা করছে পশ্চিমারা, ওপেকের সিদ্ধান্তে তা অনেকটাই ভেস্তে যেতে পারে।

অনেক দেশই মনে করবে, সৌদি আরব ও আরও কয়েকটি বড় তেল উৎপাদক দেশ বর্তমান বিরোধে তেলের বাজার ধরে রাখার অজুহাতে রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে। তেমন কথা এরই মধ্যে উঠতেও শুরু করেছে। ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস মার্ফি সিএনবিসি টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের রিয়াদ সফরে কোনো লাভ হয়নি… সৌদিরা শেষপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বদলে রাশিয়ার পক্ষ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঠিক আগে ওপেকের এমন সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবেও বাইডেন প্রশাসন ও ডেমোক্র্যাট দলকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে। নির্বাচনের আগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে তারা। তেলের দাম বাড়লে সেই চেষ্টা হুমকিতে পড়তে পারে।

ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, মার্কিন প্রশাসনের অনেকেই মনে করছেন, এমন সময়ে তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ‘ইচ্ছাকৃত উসকানি’।

কেন ঝুঁকি নিলো সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় রাজনীতির বিশ্লেষক সামি হামদি অবশ্য মনে করেন না যে, বাইডেনকে উসকানি দিতেই সৌদিরা তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সৌদি সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার পরেও ২০২০ সালে তেলের বাজার নিয়ে বড়ধরনের মতবিরোধ হয়েছিল।

মূল কথা হচ্ছে, সৌদি অর্থনীতি এখনো তেলের ওপর নির্ভরশীল। কয়েক মাস ধরে তেলের দাম কমছিল। তাতে সৌদি আরব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। হামদি বলেন, সৌদি যুবরাজ তার দেশের জন্য যে উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েছেন, তাতে অর্থ জোগাতে তেলের বাজার চাঙ্গা রাখা সৌদি আরবের জন্য খুবই জরুরি। ওপেক প্লাসের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, তাদের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নয়। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতি ও তেলের বাজারে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেটি বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত।

সামি হামদি বলেন, সৌদিরা মনে করে, তেলের বাজারে অস্থিরতা কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এটি হচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের বিরোধের কারণেই। ফলে এর জন্য বড় কোনো আত্মত্যাগ করতে রাজি নয় তারা।

বিশেষ করে, সৌদি আরব মনে করছে, আত্মত্যাগ করলেও তাদের ব্যাপারে বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের বিরূপ মনোভাবে তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। সৌদিরা জানে, এই সিদ্ধান্তের ভূ-রাজনৈতিক পরিণতি রয়েছে। কিন্তু তারপরও নিজেদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে রাজি নয়।

যুক্তরাষ্ট্র কী প্রতিশোধ নিতে পারে? সামি হামদি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সৌদি আরবকে শাস্তি দেওয়ার নানা উপায় থাকলেও তা প্রয়োগ করার আগে ওয়াশিংটন অন্তত ১০বার ভাববে। এমনিতেই ক্ষমতাসীন মহলের অনেকে মনে করেন, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কে বর্তমান টানাপোড়েনের জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজে অনেকটা দায়ী। সুতরাং আমি মনে করি, বাইডেন রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথেই যাবেন।

বাইডেন প্রশাসন তলে তলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় যুবরাজ সালমানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা শুরু করেছে বলেও বিশ্বাস করেন এ বিশ্লেষক। তার কথায়, মার্কিনিরা খুব ভালো করেই জানে, তারা যত বেশি চাপ দেবে, সৌদি আরব তত বেশি রাশিয়া ও চীনের কাছাকাছি হবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা

advertisement

Posted ৩:২৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২২

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.