বাংলাদেশ অনলাইন : | বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩
দেশের মোট জনসংখ্যার ২১ দশমিক ১১ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ প্রতি পাঁচজনের একজন খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। শহর-গ্রামের তুলনা করলে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা গ্রামেই বেশি। সবচেয়ে বেশি খাদ্যনিরপত্তাহীনতা সিলেট ও রংপুর বিভাগে। এছাড়া ২০১৬ সালের তুলনায় মানুষের ভাত ও ডিম গ্রহণের হারও কমেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) থেকে প্রকাশিত ‘খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২’-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে। প্রথমবারের মতো সংস্থাটি তাদের জরিপে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে। গতকাল বিবিএসের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সভায় প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
বিবিএস জরিপের তথ্যমতে, গ্রামে বসবাসরত জনসংখ্যার ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তবে শহরে এ হার ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। শহরের প্রায় ২০ শতাংশ খানায় খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা রয়েছে। গ্রামে এ হার ২৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।
বিভাগভিত্তিক বিভাজনে দেখা গেছে, সিলেট ও রংপুরে সবচেয়ে বেশি ২৪ দশমিক ৭৯ ও ২৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা রয়েছে। এ দুই বিভাগের ২৭ শতাংশের বেশি খানায় এমন নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে। বরিশাল ও চট্টগ্রামে এ হার প্রায় ২২ শতাংশ। তবে সবচেয়ে কম (১৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ) খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা রয়েছে খুলনা বিভাগে।
খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য বলছে, ছয় বছরের ব্যবধানে মানুষের মাথাপিছু দৈনিক খাবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়লেও কমেছে ভাত, ডিম ও পেঁয়াজ গ্রহণের হার। দেশের মানুষ এখন প্রতিদিন গড়ে ৩২৮ গ্রাম ভাত গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু ২০১৬ সালে ভাত গ্রহণের পরিমাণ ছিল ৩৬৭ গ্রাম। ওই সময় দৈনিক ১৩ দশমিক ৬ গ্রাম ডিম গ্রহণ করা হলে এখন তা কমে ১২ দশমিক ৭ গ্রামে নেমে এসেছে।
একই সময়ে পেঁয়াজ গ্রহণের পরিমাণও কমে এসেছে। তবে মাছ, মাংস ও সবজি গ্রহণের হার বেড়েছে। আর দৈনিক ফল গ্রহণ ৩৫ গ্রাম থেকে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বেড়ে ৯৫ গ্রামে এসে দাঁড়িয়েছে। আর একই সময়ে ঘরের বাইরে খাবার গ্রহণও বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। ২০১৬ সালে গড়ে দৈনিক ৩০ গ্রাম খাবার ঘরের বাইরে গ্রহণ করলেও এখন তা ৬৩ গ্রামে উঠে এসেছে।
‘ দেশে বৈষম্য অ্যালার্মিং লেভেলে পৌঁছে গেছে’ বলে মনে করছেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেশের ৫ শতাংশ উচ্চ আয়ের মানুষের হাতে মোট আয়ের ৩০ শতাংশ আবদ্ধ হয়ে আছে। যেখানে নিম্নআয়ের ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে আছে মাত্র ১৮ শতাংশ আয়। শহরে দারিদ্র্য কমলেও আর্থিক দুর্বলতা বেড়েছে। মধ্যবিত্তের আয় কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ, একই সঙ্গে কমেছে খাদ্য গ্রহণও। তাই বৈষম্য এখন দারিদ্র্যের চেয়ে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাকে হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’
এ বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সচিব ড. মো. কাউছার আহমেদ বলেন, ‘মানুষের আয় যত বাড়ে তত বেশি খাদ্যবহির্ভূত খাতের ব্যয় বাড়ে। আর টাইট ফিসক্যাল স্পেসের মধ্যেও সরকার সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
তবে সামাজিক নিরাপত্তায় জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করলেও বৈষম্য বাড়ায় হুঁশিয়ার হওয়ার সময় এসেছে বলে মনে করেন তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। তিনি বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় এসেছে ৩৭ শতাংশ খানা বা পরিবার।’
Posted ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh