বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
মেয়র অ্যাডামসের দুঃখ প্রকাশ
“অনুগ্রহ করে গুলি করবেন না,” সিটির ওজোন পার্কে বসবাসকারী ৪৮ বছর বয়সী বাংলাদেশী ইমিগ্রান্ট নতুন ইভা কস্টা নিউইয়র্ক পুলিশের দুই পুলিশ অফিসারের কাছে কাতর কণ্ঠে অনুনয় করেছিলেন, যারা তার কিশোর ছেলের ৯১১ নম্বরে কল করার পরে তার বাড়িতে আসেন। মেঝের ওপর শুয়ে দুই সন্তানের মা অফিসারদের দিকে হাত বাড়ান। তার কণ্ঠে ছিল আতঙ্ক বেদনা। কিন্তু তখন বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল।
পুলিশ অফিসারদের একজন তার আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ১৯ বছর বয়সী উইন রোজরিও’র ওপর অন্তত চারবার গুলি করায় তিনি মারাত্মক আহত হন। পুলিশ তাদের বাড়িতে প্রবেশ করার দুই মিনিটও কাটেনি তখন। গত সপ্তাহের বুধবার ইন্টারপ্রেটারের মাধ্যমে সিএনএন এর রিপোর্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় ইভা কস্টা বলেন, “অফিসাররা মিনিটের মধ্যে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। তারা আসার আগে সবকিছু শান্ত ছিল। তারা এসে গোলযোগ সৃষ্টি করে এবং আমার সামনেই তাকে হত্যা করে।” উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ উইন রোজারিও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
উইন রোজারিওর মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাকে হত্যার ঘটনা নিয়ে সামাজিক সুবিচার ও মানসিক স্বাস্থ্য প্রবক্তারা সোচ্চার হয়েছেন, বিশেষ করে স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস দুই পুলিশ অফিসারের বডি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ প্রকাশ করার পর প্রবক্তারা এ ব্যাপারে চুলচেরা যাচাইবাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে সিএনএনকে জানান হয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন যে মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশের প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের কোনো প্রয়োজন ছিল না। তারা যা করেছেন তা মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার একটি দৃষ্টান্তকে প্রতিফলিত করেছে। এনওয়াইপিডি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে যে, ঘটনাটি তদন্তে তারা পূর্ণ সহযোগিতা করার পাশাপাশি তাদের নিজস্ব তদন্ত চালাচ্ছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে যে, ‘আমরা অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যে কিভাবে আমরা সহায়তার অনুরোধে সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করবো। আমরা স্বীকার করি যে অনেক কাজ সম্পন্ন করার আছে। নিউইয়র্কবাসীরা কিছুতেই কম আশা করতে পারে না।’
দুই অফিসার তাদের ‘পরিবর্তিত দায়িত্বে’ রয়েছেন, যার অর্থ তারা এখনও কাজ করছেন, তবে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করছেন না।
রোজারিওর পরিবার, সেইসাথে জাস্টিস কমিটি এবং ডেসিস রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং (ড্রাম) এর মতো সংস্থাগুলি সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের বরখাস্ত এবং দৃষ্টান্তমূলকবিচারের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। রোজারিও’র হত্যাকারী পুলিশ অফিসারদের শাস্তি দেওয়ার বাইরেও তাদের লক্ষ্য রয়েছে। তারা নিউইয়র্ক সিটিতে মানসিক সমস্যায় থাকা ব্যক্তিদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আমূল পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়েছে।
এসব ক্ষেত্রে ৯১১ কলে সাড়া দেওয়ার জন্য সশস্ত্র পুলিশ অফিসার পাঠানোর পরিবর্তে এমন একটি অবস্থার ধারণা করেন, যেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্য কর্মীরা সংকটে পতিত ব্যক্তিদের সহায়তা করার জন্য সাড়া দিতে পারেন। মেন্টাল হেলথ ক্রাইসিস ইন্টারভেনশন প্রোগ্রাম ইতিমধ্যেই ওরিগনের ইউজিন, এবং কলোরাডোর ডেনভারের মতো সিটিগুলোতে কাজ করছে। এছাড়া সাউথ ডাকোটা ও সারা দেশে ২৩টি কাউন্টি জুড়ে এ ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
নিউ ইয়র্কে ‘বি-হার্ড’ নামে অনুরূপ, কিন্তু সীমিত একটি পাইলট প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে জরুরী ফোনকলে ইমার্জেন্সি মেক্যিাল টেকনিশিয়ান ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রেরণ করার জন্য। উইন রোজারিও’র ছবি তুলে ধরা বেশ কিছু মানুষের সামনে দোভাষির মাধ্যমে কথা বলার সময় ইভা কস্টা তার ছেলেকে একজন ‘শান্ত ও ভদ্র’ কিশোর হিসাবে বর্ণনা করেন এবং বলেন যে, সে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। এই দেশের জন্য সে কিছু করতে চেয়েছিল। উইন তার মায়ের জন্য রান্না করতে এবং তার হস্তশিল্প সাহায্য করত বলে তিনি জানান। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, পুলিশ তাকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। আমি আমার ছেলেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করেছি। আমি পুলিশকে অনুরোধ করেছি গুলি না করার জন্য। কিন্তু পুলিশ আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।
জাস্টিস কমিটির এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর লয়েডা কোলন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে, উইন রোজারিও আজও জীবিত থাকতেন, যদি এনওয়াইপিডিকে ইতোমধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য আহবান এলে তারা সাড়া দেওয়ার দায়িত্ব থেকে নিজেদের সরিয়ে নিত। রোজারিও ২৭ মার্চ যখন ৯১১ নম্বরে কল করেন তখন দৃশ্যত মানসিক সমস্যার মধ্যে ছিলেন। তার ছোটভাই উৎস পুলিশ অফিসারদের বলেছিলেন যে, তার ভাইয়ের জীবনে একটি সমস্যা আছে। ‘এমনকি তিনি নিজেও জানতেন না যে তিনি কি করছেন।’
অফিসাররা অ্যাপার্টমেন্টে উইনকে তার মায়ের সাথে কিচেনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। একজন অফিসার কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলে রোজারিও বিরক্ত হন এবং কিচেন থেকে একটি কাঁচি তুলে নেন। তার মা তার হাত থেকে কাঁচি নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
উইন কাঁচি নিয়ে আবার অফিসারদের দিকে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করলে একজন অফিসারকে তার দিকে টিজার গুলি ছোড়েন এবং অন্যজন তার আগ্নেয়াস্ত্র তাক করেন। রোজারিওর মা ছেলেকে জড়িয়ে ধরলে একজন অফিসার চিৎকার করে বলেন, ‘ওকে ছেড়ে দিয়ে আপনি পেছনে চলে যান।’ অফিসার উইনকে আবার একটি টিজার গুলি ছুড়লে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। উইনের মা তখন তার থেকে সরে যান। উইন কাঁচি হাতে অফিসারদের দিকে যায়।
ইভা কস্টা আবার ছেলের দিকে গিয়ে দৃশ্যত তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন একজন অফিসার চিৎকার করেন, ‘তাকে সামনে থেকে সরে যেতে বলো!’ ইভা অফিসারদের বলেন, ‘গুলি করবেন না।’ একজন অফিসার আবার রোজারিওর দিকে টিজার ছোড়েন। তিনি কাঁচি হাতে আবার অফিসারদের দিকে এগিয়ে যান ছোটভাই উৎস এগিয়ে আসে এবং পরিবারের তিন সদস্য একজন আরেকজনকে ধরে রাখে। দুই পুলিশ অফিসার তাদের সামনে থেকে সরে যেতে চিৎকার করতে থাকে। উইনের মা ও ভাই মেঝের ওপর পড়ে যান। উইন রোজারিও অফিসারদের থেকে কয়েক ফুট দূরে কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
একজন অফিসার তাকে গুলি করতে শুরু করেন। একাধিক গুলির পর তার শরীরে বিদ্ধ হওয়ার পর তিনি মেঝের ওপর পড়ে যান। লয়েড কোলন বলেছেন, ফুটেজে দেখা যাচ্ছে যে পুলিশ অফিসাররা দায়িত্বহীনভাবে পরিস্থিতিকে উসকে দিয়েছেন, এমনকি উইন রোজারিওর মা ও ভাইয়ের জীবনকেও বিপন্ন করেছেন। তিনি বলেন, তাদের অনেক সুযোগ ছিল পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার, তাকে আটক করার। কিন্তু তারা তা করেননি। অফিসাররা বহুবার চিৎকার করে তাকে কাঁচি ফেলে দিতে বলেছেন, কিন্তু তার উদ্দেশ্যে আর কিছু বলেননি। অফিসাররা সেখানে এসে পৌছার আগে বিপজ্জনক কোনো পরিস্থিতি আদৌ সৃষ্টি হয়নি, বলে জানিয়েছেন পরিবারের অ্যাটর্নি।
একজন অবসরপ্রাপ্ত এনওয়াইপিডি গোয়েন্দা এবং জন জে কলেজ অফ ক্রিমিনাল জাস্টিসের সহযোগী অধ্যাপক মাইকেল আলকাজার সিএনএনকে বলেছেন যে, অফিসাররা যে উইন রোজারিওকে গুলি না করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতেন, তার অনেক উপায় তিনি দেখেছেন। বাড়িতে প্রবেশ করার আগে অথবা উইন রোজারিও’র মা যখন তার কাছ থেকে কাঁচি নিয়ে নিয়েছিলেন তখন তারা শুধু উনকে রেখে তার মা ও ভাইকে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে চলে যেতে বলতে পারতেন। এরপর তারা ইমার্জেন্সি সার্ভিসকে ডাকতে পারতেন। এটি বিচ্ছিন্ন করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এনওয়াইপিডি অফিসাররা মানসিক অসুস্থ ব্যক্তিদের সাথে এ আচরণ করার পরামর্শ দিলেও তারা তার নিজেরাই তা অনুসরণ করেনি। তাছাড়া রোজারিওকে নিয়ন্ত্রণ করতে ও কাঁচি সরিয়ে নিতে অফিসাররা লাঠির মতো কিছু ব্যবহার করতে পারতেন, যা ঘাতক নয়। উইনের মৃত্যু পুলিশের হাতে নিহত মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির নিহত হওয়ার একমাত্র ঘটনা নয়।
মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তাকারী নন-প্রফিট সংগঠন ‘কমিউনিটি অ্যাকসেস’ বলেছে যে, ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ২৬ জন মানসিক রোগগ্রস্ত ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এনওয়াইপিডির ২০২২ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী মানসিক ব্যাধিগ্রস্তদের সমস্যা মোকাবেলায় পুলিশের শক্তি প্রয়োগের ঘটনা তাদের দ্বিতীয় সাধারণ পরিস্থিতি এবং ২০২২ সালে কারা এ ধরনের ১,৭৪০টি ঘটনায় সাড়া দিয়েছে।
তবে কতগুলো ঘটনায় তারা বলপ্রয়োগ করেছেন, রিপোর্টে তার উল্লেখ নেই। উল্লেখ্য, এনওয়াইপিডি বছরে প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার কল পেয়ে থাকে মানসিক রোগগ্রস্তদের সমস্যায় সাড়া দেয়। ১ শতাংশের কম কলের ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগের ঘটনা ঘটে। রোজারিওর মা বলেন, দআমি যে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তার মধ্য দিয়ে কোনো মাকে যেতে হবে না। আমি আশা করি ভবিষ্যতে অন্য কোন মা এমন পরিস্থিতির শিকার হবেন না।
মেয়র অ্যাডামসের দুঃখ প্রকাশ
নিউইয়র্ক : পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকা তরুণ উইন রোজারিও হত্যার ঘটনায় প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন নিউইয়র্ক নগরের মেয়র এরিক অ্যাডামস। গত মঙ্গলবার ম্যানহাটানের সিটি হলে এক সাংবাদ সম্মেলনে রোজারিও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ঘটনার তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন মেয়র।
উইন রোজারিও হত্যা মামলা তদন্ত করছে অফিস অব স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন গত ২৭ মার্চে উইন রোজারিও খুন হওয়ার দিন কুইন্সের ওজোন পার্কে তাদের বাড়িতে অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন দুই পুলিশ অফিসার। তাদের শরীরে থাকা ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয় ও ধারাবাহিকভাবে যে ভিডিও ধারণ করা হয়েছে, তা ৩ মে প্রকাশ করা হয়েছে।
নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিসিয়া জেমস তা প্রকাশ করেন। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, পুলিশ কর্মকর্তা সালভাতর অ্যালঙ্গি এবং ম্যাথিউ সিয়ানফ্রোকো গুলি করে হত্যা করেছেন মানসিক প্রতিবন্ধী উইন রোজারিওকে। উইনের মা ও ছোট ভাইয়ের অনুরোধ-অনুনয়ে তাঁরা কান দেননি। সেই ভিডিও দেখার পরও সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
পরিবারের আশঙ্কা-উৎকণ্ঠা : এদিকে পুলিশের গুলিতে উইন রোজারিও নিহত হওয়ার ঘটনায় ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে তার পরিবার। তাঁরা অভিযোগ করেছে যে, এখনো পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পুত্র হত্যার বিচারের দাবিতে ম্যানহাটানে সিটি হলের সামনে এক সংবাদ সম্মেলন করেন উইন রোজারিওর পিতা ফ্রান্সিস রোজারিও। তিনি বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা সালভাতর অ্যালঙ্গি এবং ম্যাথিউ সিয়ানফ্রোকো আমার মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে। আমি এর ন্যায়বিচার চাই। শিগগিরই তাঁদের বরখাস্ত করে সঠিক বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
তিনি এ দাবি করলেও এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচারের কোনো আশা দেখছে না পরিবার। ফ্রান্সিস রোজারিও বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনের দুই দিন পরও এখন পর্যন্ত প্রশাসন বা পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। ছেলে হত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচার পাব কি না, কোনো আশ্বাস পাচ্ছি না।’
মেয়র এরিক অ্যাডামস গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমের সামনে উইন রোজারিও হত্যার বিষয়ে মন্তব্য করেন মেয়র এরিক। মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস এই হত্যার তদন্ত করছে। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হবে। মানসিক সমস্যায় থাকা মানুষের বিষয়ে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি) কীভাবে সাড়া দেবে, সে বিষয়ও নতুন করে ভাবা হচ্ছে। এরিক অ্যাডামসের দুঃখ প্রকাশের বিষয়ে উইন রোজারিওর বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়র এরিক অ্যাডামস তো কোনো অপরাধ করেননি। তাঁর দুঃখ প্রকাশে কিছু যায়-আসে না। আমরা চাই, ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
আমরা চাই, পুলিশ কর্মকর্তা সালভাতর অ্যালঙ্গি এবং ম্যাথিউ সিয়ানফ্রোকোর দ্রুত বিচার হোক। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। তাঁরা আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছেন।’ কুইন্স বোরোর ওজোন পার্কে ২৭ মার্চ মা ও ছোট ভাইয়ের সামনে গুলি করে মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণ উইন রোজারিওকে হত্যা করে পুলিশ। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশি জনসমাজ ও মানবাধিকারকর্মীরা বেশ কয়েকটি স্থানে কর্মসূচি পালন করেন। ৮ মে তাঁরা সিটি হলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন। রোজারিও পরিবার বছর দশেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এসেছিল। উইনের মায়ের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জ আর বাবার বাড়ি পুবাইলে।
তদন্ত করছে অফিস অব স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন: উইন রোজারিও হত্যা মামলা তদন্ত করছে অফিস অব স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন (ওএসআই)। ঘটনার দিন উইন পরিবারের বাড়িতে অভিযানে অংশ নেওয়া দুই পুলিশের শরীরে থাকা ক্যামেরায় যে ভিডিও ধারণ হয়েছে, তা গত ৩ মে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে। নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিসিয়া জেমস তা প্রকাশ করেন। অভিযানে অংশ নেওয়া দুই পুলিশ সদস্যের পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়।
৩ মিনিট ৪ সেকেন্ড ও ৩ মিনিট ৫ সেকেন্ডের ওই দুই ভিডিওতে দেখা গেছে, মায়ের বুক থেকে কেড়ে নিয়ে, মা এবং ছোট ভাইয়ের অনুরোধ ও অনুনয় উপেক্ষা করে ১৯ বছরের উইন রোজারিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে দুই পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন উইনের মা নোটান ইভা কস্টা। তিনি বলেন, ‘তাঁরা দুই মিনিটেরও কম সময়ে আমার বুক থেকে ছেলেকে কেড়ে নিয়ে আমার চোখের সামনে গুলি করে হত্যা করেছেন। আমি এর বিচার চাই। দুই পুলিশকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে।
দ্রুত সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’ ৮ মে সেই সংবাদ সম্মেলনে কান্নারত মাকে জড়িয়ে ধরেন উইন রোজারিওর ভাই উৎস রোজারিও। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে হত্যা করার পর নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট আমি এবং আমার মায়ের সঙ্গে এমন আচরণ করেছে, যেন আমরা অপরাধী। আমার ভাইকে মেরে ফেলার পর তাঁরা আমাদের থানায় নিয়ে যান। আমার পরনে হাফপ্যান্ট ছিল, কাপড় পরতে দেননি। ফোনটা নেওয়ার পর্যন্ত সময় দেননি।’ উৎস আরও বলেন, ‘তাঁরা আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেছিলেন যেন আমার ভাইকে চোখের সামনে খুন হতে দেখে আমরাই ভুল করেছি। তাঁরা আমার মাকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আমাদের ঘরে ফিরে যেতে দেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁরা আমার বাবা-মায়ের ওষুধও নিতে দেননি।’
সংবাদ সম্মেলনে উইন রোজারিওর বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও বলেন, ‘উইনকে হত্যার পর পুলিশ আমার স্ত্রী ও ছেলেকে থানায় নিয়ে গিয়ে আইনজীবী ছাড়াই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আমরা ন্যায়বিচার পাব কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কীভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও আমরা কোনো বিচার পাচ্ছি না।
আমার স্ত্রী বা ছেলে অসুস্থ বোধ করলে পুলিশের সহযোগিতার জন্য ৯১১ নম্বরে কল দিতে ভয় পাই। পুলিশ এসে যদি আবার কোনো কিছু করে বসে!’ উইন পরিবারের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের ডোনা লিবারম্যান, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি কাউন্সিল সদস্য শাহানা হানিফ, কাউন্সিলর ক্রিস্টাল হাডসন, স্যান্ডি নার্স, অ্যালেক্সা অ্যাভিলেস এবং পিয়েরিনা সানচেজ।
Posted ৪:২৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh