বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১
সিটি মেয়রের অফিস অফ দ্য ইমিগ্রান্ট অ্যাফেয়ার্স সিটিতে বসবাসরত ইমিগ্রান্টদের অবস্থার উপর সম্প্রতি প্রকাশিত তাদের রিপোর্টে তাদের সংকট এবং বিশেষ করে করোনা মহামারী চলকালে তারা নাজুক অবস্থার মধ্যে কাটিয়েও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও তাদের পরিবারদের সহায়তায় ফ্রন্টলাইন ভলান্টিয়ার হিসেবে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে কাজ করেছে, সে বিষয়গুলো উঠে এসেছে। রিপোর্টে এ কথাও বলা হয়েছে যে, সিটিতে বসবাসকারী ত্রিশ লাখ ইমিগ্রান্ট ও তাদের পরিবারের জন্য কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিটির ইমিগ্রান্ট অ্যাফেয়ার্স অফিস দীর্ঘীদন ধরেই একটি নীতি উদ্ভাবনের চেষ্টা চালাচ্ছে যা তাদের প্রতি সুবিচার করতে পারে, তাদের মধ্যে সমতার বোধ নিশ্চিত করে তাদের ক্ষমতায়ন করতে পারে। এতে বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক সিটি ঐতিহাসিকভাবেই ইমিগ্রান্ট বান্ধব সিটি। এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমিগ্রান্ট বিদ্বেষী চরম পন্থা অবলম্বন, এমনকি আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের তালিকা ফেডারেল ইমিগ্রান্ট এজেন্সিগুলোর হাতে তুলে না দিলে সিটির জন্য ফেডারেল বাজেট বরাদ্দ সংকোচনের হুমকি দেয়া সত্বেও সিটি তার ইমিগ্রান্ট বান্ধব বৈশিষ্ট থেকে পিছু হটেনি এবং অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ‘স্যাঙ্কচ্যুয়ারি সিটির’ বৈশিষ্ট অব্যাহত রেখেছে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া করেনাভাইরাস মহামারীতে আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টরা যাতে জরুরী সেবা লাভ থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য সিটি এজেন্সিগুলো নির্বাচিত প্রতিনিধি, কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠন ও অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে কাজ করেছে, যাতে ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস নির্বিশেষে সকলে বিদ্যমান সুবিধাগুলোর অংশীদার হওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সেবা ও সুবিচার পেতে পারে। সেজন্য মেয়র অফিসের ইমিগ্রান্ট অ্যাফেয়ার্স প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ইমিগ্রান্টদের সুবিধার্থে ২৬টি ভাষায় তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে, যাতে ইমিগ্রান্টরা সিটির পক্ষ থেকে তাদের জন্য উন্মুক্ত গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলো সহজে গ্রহণ করতে পারে এবং ইমিগ্রান্ট কমিউনিটি সকল নিউইয়র্কারের জন্য চালু করা কর্মসূচি ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বলেছেন, ইমিগ্রান্টরা আমাদের নিউইয়র্কের সংস্কৃতিতে অত্যাবশ্যকীয় এবং তাদের এই আবশ্যকীয়তা আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠেছে বিদ্যমান কোভিড ১৯ মহামারীর সময়, যখন তারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে সামনের কাতারের কর্মী হিসেবে হাসপাতাল থেকে শুরু করে সকল সরবরাহের ধারা চালু রেখে কার্যকত দেশের চিকিৎসা সেবা ও পন্য সরবরাহে কোনোরূপ বিপর্যয় ঘটাতে দেয়নি। আমাদেরকে অবশ্যই তাদের এই অসামান্য অবদান স্মরণে রেখে তাদের প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। নগরীকে আমাদের সকলের জন্য শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য আমাদের ইমিগ্রান্ট প্রতিবেশিদের ক্ষমতায়ন করতে হবে। মেয়র অফিসের ইমিগ্রান্ট অ্যাফেয়ার্স কমিশনার বিট্টা মোস্তফি বলেছেন, বিভিন্ন এজেন্সির কর্মপন্থার মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে আন্ত:সরকার, বহুজাতিক নগরী ও কমিউনিটি অংশীদারীত্বের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক সিটি ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণের জন্য যাথাসাধ্য চেষ্টা করবে এবং ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে আরও স্বাগতিক করে তুলতে হবে, যাতে আমরা আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সকলের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে কাজ করে সকল নিউইয়র্কারকে বর্তমান বিপর্যয় থেকে উত্তরণের পথে যেতে পারি। কিন্তু রিপোর্টে সিটির ইমিগ্রান্ট জনসংখ্যা ও তাদের অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে প্রধান যে বিষয়গুলো সামনে এসেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: ইমিগ্রান্ট নিউইয়কারদের মধ্যে দারিদ্র হার সবচেয়ে বেশি।
আনডকুমেন্টেড নিউইয়র্কারদের দারিদ্র হার ২৯.২ শতাংশ, যা গ্রীনকার্ডধারী ও অন্যান্য ধরনের বৈধ ইমিগ্রান্টদের দারিদ্র হারের চেয়ে বেশি। বৈধ ইমিগ্রান্টদের মধ্যে দারিদ্র হার ২৭.১ শতাংশ। এই হার আমেরিকান ও ন্যাচারালাইজড সিটিজেনদের দারিদ্র হারের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়াও দেখা যায় যে সিটির ইমিগ্রান্ট বাসিন্দার সংখ্যা গত দুই বছরে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে সিটির নন-সিটিজেন জনসংখ্যা সামগ্রিকভাবে ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষতিকর ইমিগ্রেশন নীতিকে দায়ী করা হয়েছে রিপোর্টে। এছাড়াও রিপোর্টে দেখা যায় যে, সিটিতে বতমানে ৬৩ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী, ২১ শতাংশ ন্যাচারালাইজড সিটিজেন, ১০ শতাংশ গ্রীনকার্ড হোল্ডার এবং ৫ শতাংশ আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্ট বসবাস করছেন। যেসব দেশের ইমিগ্রান্টদের আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী সন্তান সংখ্যা অধিক সেগুলো হচ্ছে ডোমিনিকান রিপাবলিক, চীন, জ্যামাইকা, মেক্সিকো, গায়ানা, ইকুয়েডর, বাংলাদেশ, হাইতি, ভারত, ত্রিনিদাদ ও টোগো। ইমিগ্রান্ট নিউইয়র্কার যাদের ইংরেজি জ্ঞান স্বল্প তারা কথা বলে স্প্যানিশ, চীন, রাশিয়া, বাঙালি, হাইতি, ক্রেওল, কোরিয়ান, আরবি, পোলিশ, উর্দু ও ইটালিয়ান ভাষায়। আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের মধ্যে ৮০ শতাংশই শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া সিটির অর্থনীতিতে ইমিগ্রান্টদের অবদান ২৪৪ বিলিয়ন ডলার, যা সিটির জিডিপির ২৩ শতাংশ।
কিন্তু ১২ শতাংশ ইমিগ্রান্ট নিউইয়র্কারের কোনো হেলথ ইন্স্যুরেন্স নেই, যা যুক্তরাষ্টে জন্মগ্রহণকারী নিউইয়র্কারের মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ। অপরদিকে আনডকুমেন্টেড নিউইয়রকারদের মধ্যে ৬৪ শতাংশের কোনো হেলথ ইন্স্যুরেন্স নেই। ১৯ বছরের নিচে আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্ট শিশুর ১৩ শতাংশের হেলথ ইন্স্যুরেন্স নেই, যদিও তারা সাধারণ চিকিৎসা সুবিধা লাভ করে।
Posted ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh