বাংলাদেশ অনলাইন : | মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী এবং নিউমার্কেট ও তার আশপাশের ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে সড়কে তীব্র যানযটের সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ রয়েছে নিউমার্কেট-নীলক্ষেত এলাকাসহ সাইন্সল্যাব দিয়ে যান চলাচল। এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজে যেতে পারছেন না মানুষ। আর ওই এলাকার সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমই প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। একান্ত প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা সেদিকে গিয়েছেলেন, তাঁদের অনেকেই আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ভয়ে দিন পার করছেন ওই এলাকার মানুষজন।
সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে নিউমার্কেট-নীলক্ষেত এলাকাসহ সাইন্সল্যাব দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে মিরপুর সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও জলকামান, টিয়ার সেল, রাবার বুলেট নিয়ে অ্যাকশনে নেমেছে পুলিশ। আর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, ‘ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলমান সংষর্ষ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। খুব দ্রুত এ সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
এদিকে ‘চলমান সংষর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ চরম ধৈর্যের সঙ্গে চেষ্টা করছে’ মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আজ ভোর থেকে মিরপুর রোডে ব্যারিকেট দেওয়া হয়। সে সময় থেকে যান চলাচল চলাচল হয়ে যায়। এতে মিরপুর রোডসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে অফিসগামী মানুষসহ সাধারণ যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন। নিউমার্কেট এলাকায় ১৮ এপ্রিল (সোমবার) রাতে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ আড়াই ঘণ্টায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সেসময় পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে গেলেও সেখানে বিক্ষোভ করেন। ১৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বেলা পৌনে ১১টার দিকে ফের রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নিউমার্কেট এলাকা। এ সময় কিছু শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাসের বিপরীতের তেল পাম্পে অবস্থান নেন। ব্যবসায়ীরাও গাউসিয়া, ইস্টার্ন মল্লিকাসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন।
রণক্ষেত্র নিউমার্কেট এলাকায় প্রথমে জলকামান নিয়ে নির্লিপ্ত অবস্থানে ছিল পুলিশ। বেলা ১২ টা ৫৬ থেকে জলকামান নিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে দেখা যায়। এর প্রায় ৫০ মিনিট পর রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল ছুড়তে শুরু করেছে তারা। একই সঙ্গে তাদের সঙ্গে এগোচ্ছে জলাকামান। সে সময় আগুন জ্বালিয়ে টিয়ার গ্যাস থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন সংঘর্ষকারীরা। একই সঙ্গে ইটপাটকেল, স্ট্যাম্প ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি রাজধানীর নিউমার্কেট ও তার আশপাশের ব্যবসায়ী এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এর আগেই সড়কের ডিভাইডারের ব্যারিকেট থেকে খুলে নেওয়া হয় লোহা। তবে কে বা কারা খুলেছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংঘর্ষ সৃষ্টিকারীরা চড়াও হচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরও। ছাড় পায়নি অ্যাম্বুলেন্সও। ভেঙে দেওয়া হয়েছে জানালার গ্লাস। সব কিছু দেখে বেলা ১২টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে জলকামান নিয়ে আসতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে। এর প্রায় পঞ্চাশ মিনিট পর মাঠে নামেন তারা।
‘লাশ হব, তবুও হল-ক্যাম্পাস ছাড়ব না’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হল-ক্যাম্পাস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, যেকোনো মূল্যে হল-ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। ১৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিকেল সোয়া চারটায় ঢাকা কলেজের শহীদ আ. ন. ম নজিব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে সম্মিলিতভাবে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যানের কথা জানান। এ সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের অপসারণসহ ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফুয়াদ হাসান বলেন, প্রয়োজনে আমরা লাশ হয়ে বের হব। তবু হল ক্যাম্পাস ছাড়ব না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে, এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা অধ্যক্ষকে বলেছি সুন্দরভাবে সমাধান করতে। তিনি যদি তা না পারেন, তবে তার পদত্যাগ দাবি করছি। এর আগে বিকেলে ৫ মে পর্যন্ত আবাসিক হল বন্ধের নোটিশ দেয় ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ। নোটিশে শিক্ষার্থীদের বিকেলের মধ্যে হল ছাড়তে বলা হয়।
১৮ এপ্রিল (সোমবার) রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় কথা কাটাকাটির জেরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী ও দুই ব্যবসায়ী আহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও। এরপর মঙ্গলবার সকালে আবারও সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে তাদের ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। ছাত্রদের অনেকে হেলমেট পরে হাতে লাঠি নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। বিকেল ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলছিল। সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন।
Posted ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh