বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
গত প্রায় সাত মাস যাবত যাবত গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইয়েলের বর্বরোচিত হামলায় ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা, অসংখ্য জনকে আহত এবং বোমা ও গোলাবর্ষণ করে গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এক সপ্তাহ যাবত নিউইয়র্ক সিটির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি চত্তরে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা প্রায় একশ তাবু টানিয়ে অবস্থান নিয়েছে এবং তাদের অপসারণ করতে পুলিশ ১০৮ জন ছাত্রকর্মীকে গ্রেফতার করার পর পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সির বিভিন্ন ক্যাম্পাস। তাদের দাবি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সঙ্গে ইসরায়েলের সহযোগিতামূলক চুক্তিগুলো কার্যকরভাবে বাতিল করা। ক্যাম্পাস ছাড়াও সিটির ব্রুকলিন এবং যুক্তরাষ্ট্রে আরো কয়েকটি সিটির বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একই ধরনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে। নিউইয়র্কে পরিস্থিতি সামলাতে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ এখন ফিলিস্তিনিদের সমর্থনকারী ছাত্রদের তাবু অপসারণে তদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে।
বুধবার কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট এ সম্পর্কে একটি বিবৃতি দেওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের তাপু অপসারণে মধ্যরাতের যে সময়সীমা দিয়েছে, তারা এর বিকল্প উপায়গুলো বিবেচনা করবে। তবে তা নির্ভর করে আলোচনার ফলপ্রসু অগ্রগতির পর। ছাত্র কমীদৈর প্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, তারা সময়সীমা আরও ৪৮ ঘন্টা বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত।
বিক্ষোভকারীরা বলেছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত না কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ইসরায়েলি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে সম্মত না হবে, তারা তাদের বিক্ষোভ প্রদর্শন বন্ধ করবে না। তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে ইসরায়েলের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর থেকে কলম্বিয়া ইউনিভার্সির তহবিল সহায়তা সম্পূর্ণ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি প্রদান না করে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ক্যাম্পাস ছেড়ে যাবেন না।
কিন্তু কলম্বিয়ার ছাত্রদের জন্য প্রকাশিত সংবাদপত্র “দ্য কলাম্বিয়া স্পেক্টেটর’ এর প্রধান সম্পাদক ইসাবেলা রামিরেজ গত মঙ্গলবার সিএনএনকে বলেছেন যে, আলোচনাকারী পক্ষগুলো একটি মধ্যপন্থা খুঁজে পাওয়ার জন্য তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের সাথে কথা বলতে চায় এবং ছাত্ররাও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কথা বলতে করতে চায়। কিন্তু আমার মনে হয় না যে, ছাত্রকর্মীদের উত্থাপিত দাবিগুলো নিয়ে সমঝোতার তেমন কোনো সুযোগ রয়েছে। অপরদিকে ছাত্র সংগঠকরা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তাদের দাবি মেনে না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ড ডাকার হুমকি দেওয়ার দেওয়ায় মঙ্গলবার তাদের প্রতিনিধিরা আলোচনা থেকে বের হয়ে এসেছেন। সিএনএন ছাত্রদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কলম্বিয়া এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক পুলিশ গত ১৮ ও ১৯ এপ্রিল কলম্বিয়া ইউনিভার্সিতে বিক্ষোভরত ছাত্রদের মধ্য থেকে ১০৮ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের তাবুগুলো হটিয়ে দেয়। কিন্তু পরে ছাত্ররা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে সেখানে জড়ো হয় এবং নতুন করে তাবু স্থাপন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ কংগ্রেসের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার একদিন পরই গ্রেপ্তার শুরু হয়েছিল। গত ১৮ এপ্রিল দুপুরের আগে দাঙ্গা পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ অফিসাররা কয়েক ডজন তাঁবু তুলে ফেলে এবং বাটলার লাইব্রেরির সামনে জড়ো হওয়া কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে আটক করতে শুরু করে। ছাত্ররা গ্রেফতারের চেষ্টা প্রতিহত করতে চেষ্টা করলে পুলিশ লাউডস্পিকারের মাধ্যমে ঘোষণা করতে থাকে যে, কেউ গ্রেফতার ঠেকাতে চেষ্টা করলে তাকে অতিরিক্ত অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতারা তাদের ক্যাম্পাসে গত অক্টোবর মাসের পর থেকে প্রদর্শিত বিক্ষোভের কারণে কংগ্রেসের শুনানির মুখে পড়েছিলেন এবং শেষ শুনানি থেকে ফিরে আসার ২৪ ঘন্টার কম সময়ের মধ্যে কলাম্বিয়ায় গ্রেফতার শুরু হয়। তারা কংগ্রেসকে বলে এসেছিলেন যে তারা আরও কঠোর অবস্থান নেবেন। শত শত ছাত্র এবং অন্যরা সারারাত এবং সকাল জুড়ে স্কুলের ভিতরে এবং বাইরে বিক্ষোভকারীদের সাথে মিছিল করে। ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনি-পন্থী সংগঠক মরিয়ম আলওয়ান বলেন, “তারা আমাদেরকে পুলিশ দিয়ে হুমকি দিতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত, এটি আরও সংঘবদ্ধতার দিকে পরিচালিত করে।
কর্মগুলি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি নেমাত শফিকের কাছে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যিনি বুধবার হাউস এডুকেশন অ্যান্ড ওয়ার্কফোর্স কমিটির সামনে একটি শুনানির সময় স্বীকার করেছেন যে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে প্যালেস্টাইন-পন্থী বিক্ষোভে সাধারণ কিছু গান ইহুদি বিরোধী ছিল৷ বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার শুরু হওয়ার পর, শফিক একটি চিঠিতে বলেছিলেন যে “অসাধারণ পরিস্থিতির কারণে তিনি এই অসাধারণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। যে ব্যক্তিরা শিবিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তারা নিয়ম ও নীতির একটি দীর্ঘ তালিকা লঙ্ঘন করেছেন।”
ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশের ধরপাকড়
গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ চলছে।কানেকটিকাটে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড় চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খবর রয়টার্সের। গত ২৩ এপ্রিল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সশরীর ক্লাস বন্ধ রাখার ঘোষণার পর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর ধরপাকড় চালায়। গত সপ্তাহে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউইয়র্ক সিটি ক্যাম্পাসে তাঁবু টাঙিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ঘটনায় সশরীরে সব ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
গত ২২ এপ্রিল কানেকটিকাটের নিউ হ্যাভেনে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আশপাশে বিক্ষোভকারীরা যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তারা দাবি জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যেন অস্ত্র উৎপাদনকারীদের থেকে দূরে থাকে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিচালিত সংবাদপত্র ইয়েল ডেইলি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৫ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিউইয়র্কে গত ২২ এপ্রিল সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে কয়েকশ শিক্ষার্থী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের আগেই হুঁশিয়ার করে বলেছিল, বিক্ষোভস্থল না ছাড়লে তাদের পরিণাম ভোগ করতে হবে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময়ও বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। তারা বলছিলেন- ‘আমরা থামব না, বিশ্রাম নেব না। প্রকাশ করুন। বর্জন করুন।’ গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইয়েল, কলম্বিয়া, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত মিনোশে শফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের কাছে একটি ই–মেইল পাঠান। এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীর ক্লাস বন্ধ থাকবে এবং অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চলবে। এমন সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে তিনি লিখেছেন, বিদ্বেষ প্রশমন এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করার সবাইকে সুযোগ দিতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কলম্বিয়ার যেখানে বিক্ষোভকারীরা তাঁবু স্থাপন করেছিল, তা পরিষ্কার করার জন্য গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক পুলিশকে খবর দেন শফিক। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যেন ইসরাইলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিনিয়োগ বর্জন করে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, এভাবে তাঁবু টাঙিয়ে বিক্ষোভ করা হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কলম্বিয়া এবং সংশ্লিষ্ট বারনার্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই বিক্ষোভে জড়িত থাকায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেটের রিপাবলিকান সদস্যরা এবং অন্তত একজন ডেমোক্রেটিক সিনেটর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত মিনোশে শফিকের পদত্যাগ দাবি করেছেন। সোমবার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন।
Posted ১:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh