বাংলাদেশ অনলাইন : | সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ (বামে) ও জোডি হেইডন ক্যানবেরায় এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বিয়ে করেন। ছবি : সংগৃহীত
প্রেম মোহ রাষ্ট্রক্ষমতা রাজনীতির মাঠ কূটনীতি, বিতর্ক আর ক্ষমতার জটিল অঙ্কে ঠাসা থাকে। সেখানে প্রেম, রোমান্টিকতা কদাচিৎ উঁকি দেয়। রাষ্ট্রনেতারা যখন ক্ষমতায় থাকেন, তখন তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ মাপা হয় আতশ কাচের নিচে। তবে এই কঠিন আবরণের নিচেও যে একটি মানবিক হৃদয় থাকে, তা মাঝেমধ্যে আমাদের চমকে দেয়। যেমনটি সম্প্রতি ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ায়।দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ যখন তার দীর্ঘদিনের বান্ধবী জোডি হেইডনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন, তখন কেবল অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসেই নয়, বিশ্বরাজনীতির পাতায় যুক্ত হলো এক নতুন অধ্যায়। কিন্তু আলবানিজই কি একমাত্র? একদমই না। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যায়, রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়েও অনেক বিশ্বনেতা ব্যক্তিগত জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন। হোয়াইট হাউস থেকে এলিসি প্রাসাদ, ডাউনিং স্ট্রিট থেকে আফ্রিকার প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেস, এমনকি হিমালয়ের কোলেও বেজেছে বিয়ের বাদ্য।
হলিউডের চিত্রনাট্যকেও হার মানানো এমন কয়েকটি রোমাঞ্চকর ঘটনা নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন, যেখানে রাষ্ট্রক্ষমতার জাঁকজমকের মধ্যেই বেজে উঠেছিল বিয়ের সানাই। জানাচ্ছেন শামস বিশ্বাস
বরিস জনসন
ব্রিটিশ রাজনীতিতে বরিস জনসন বরাবরই এক বর্ণিল চরিত্র। ব্রেক্সিট থেকে শুরু করে করোনা মহামারী- সবকিছুতেই তিনি ছিলেন খবরের শিরোনামে। তবে ২০২১ সালে তিনি বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন এক শনিবারের দুপুরে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বসবাসকালে তিনি বিয়ে করেন তার প্রেমিকা ক্যারি সিমন্ডসকে। এই ঘটনাটি ছিল প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ ইতিহাসে বিরল। ১৮২২ সালে লর্ড লিভারপুলের পর বরিসই প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যিনি ক্ষমতায় থাকাকালে বিয়ে করলেন। তবে এই বিয়ে কোনো রাজকীয় জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান ছিল না। করোনার সময়কাল হওয়ায় এবং গোপনীয়তা বজায় রাখতে ওয়েস্টমিনস্টার ক্যাথেড্রেলে মাত্র ৩০ জন অতিথির উপস্থিতিতে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। কনের পরনে ছিল ভাড়ায় নেওয়া একটি ডিজাইনার গাউন, আর বরের পরনে চিরাচরিত স্যুট। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলোর জন্য এটি ছিল এক বিশাল ‘স্কুপ’, কিন্তু জনসন দম্পতি অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিষয়টি গোপন রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
নিকোলা সারকোজি ও কার্লা ব্রুনি
ফরাসিরা তাদের রোমান্টিকতার জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। আর সেই রোমান্টিকতার চূড়ান্ত নিদর্শন যদি কোনো রাষ্ট্রপ্রধান দেখান, তবে তা তো ইতিহাসের অংশ হবেই। ২০০৭ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক মাস পরেই নিকোলা সারকোজি তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান। এর কিছুদিন পরেই তার জীবনে আসেন ইতালিয়ান সুপারমডেল ও গায়িকা কার্লা ব্রুনি।
তাদের প্রেমকাহিনি ছিল ঝড়ের গতিতে। প্যারিসের এক ডিনার পার্টিতে পরিচয়, আর তার মাত্র তিন মাসের মাথায় বিয়ে! ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এলিসি প্রাসাদে অত্যন্ত গোপনে তারা বিয়ে করেন। এটি ছিল ফরাসি প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে বসে বিয়ের প্রথম ঘটনা। কার্লা ব্রুনির গ্ল্যামার আর সারকোজির রাজনৈতিক ক্ষমতা- এই দুইয়ের মিশেল ফ্রান্সের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। মিডিয়া তাদের নাম দিয়েছিল ‘পাওয়ার কাপল’। সারকোজির জনপ্রিয়তা তখন কিছুটা পড়তির দিকে থাকলেও এই বিয়ে তাকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে আসে এবং ফরাসিদের মধ্যে এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
পিয়েরে ট্রুডো
কানাডার বর্তমান রাজনীতির অন্যতম আলোচিত মুখ জাস্টিন ট্রুডোর বাবা পিয়েরে ট্রুডো ছিলেন কানাডার রাজনীতির এক রকস্টার। ‘ট্রুডোমেনিয়া’ বা ট্রুডো-উন্মাদনা যখন তুঙ্গে, তখন ১৯৭১ সালে তিনি জাতিকে অবাক করে দিয়ে বিয়ে করেন মার্গারেট সিনক্লেয়ারকে।
এই বিয়ের ঘটনাটি ছিল বেশ চমকপ্রদ। কারণ পিয়েরে ট্রুডোর বয়স তখন ৫১, আর মার্গারেটের বয়স মাত্র ২২! বয়সের এই বিশাল ব্যবধান এবং মার্গারেটের বোহেমিয়ান জীবনযাপন নিয়ে তখন কানাডায় তুমুল আলোচনা হতো। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি গোপনে ভ্যাংকুভারে গিয়ে বিয়েটি সারেন। কানাডার ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি ক্ষমতায় থাকাকালে বিয়ে করেছিলেন। তাদের এই সম্পর্ক ছিল আবেগে ভরপুর এবং একই সঙ্গে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। যদিও পরবর্তীতে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে, তবু সেই সময় এই বিয়েটি ছিল উত্তর আমেরিকার রাজনীতির অন্যতম বড় গ্ল্যামারাস ইভেন্ট।
মেটে ফ্রেডেরিকসেন
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের বিয়ের গল্পটি আধুনিক সময়ের এক অনন্য উদাহরণ। তার বিয়ের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল রাজনীতি নয়, বরং বিশ্ব মহামারী করোনা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামিট!
চলচ্চিত্র পরিচালক বো টেনবার্গের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ২০২০ সালে তারা বিয়ের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে প্রথমবার বিয়ে স্থগিত করতে হয়। এরপর যখন নতুন তারিখ ঠিক করা হলো, তখন হঠাৎ করেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক জরুরি বৈঠক বা সামিট পড়ে যায়, যেখানে মেটের উপস্থিতি ছিল অপরিহার্য। ফলে আবারও বিয়ে পেছাতে হয়। শেষমেশ, ২০২০ সালের জুলাই মাসে অত্যন্ত সাদামাটা আয়োজনে, মাস্ক পরা অতিথিদের উপস্থিতিতে তারা বিয়ে করেন। নিজের বিয়ের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি লিখেছিলেন, ‘অবশেষে আমরা এটি করতে পারলাম।’ একজন রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যে কতটা নমনীয় এবং দায়িত্বশীল, তার প্রমাণ ছিল এই বারবার বিয়ে পিছিয়ে দেওয়া।
সানা মারিন
বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রীদের একজন হিসেবে সানা মারিন যখন ফিনল্যান্ডের দায়িত্ব নেন, তখন থেকেই তিনি ছিলেন তরুণ প্রজন্মের আইকন। ২০২০ সালে, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই তিনি তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী এবং সন্তানের বাবা মার্কাস রাইকোনেনকে বিয়ে করেন। হেলসিংকির সরকারি বাসভবন ‘কেসারান্তা’য় অনুষ্ঠিত এই বিয়ে ছিল আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের মিশেল। ইনস্টাগ্রামে তাদের বিয়ের ছবিগুলো ভাইরাল হয়েছিল মুহূর্তেই। সানা মারিন প্রমাণ করেছিলেন যে, একজন নারী একই সঙ্গে কঠোর হাতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেন এবং নিজের ব্যক্তিগত জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলোও উপভোগ করতে পারেন। যদিও ২০২৩ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার সেই বিয়ের অনুষ্ঠানটি ছিল নর্ডিক অঞ্চলের রাজনীতির একটি উজ্জ্বল মুহূর্ত।
গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড
আমেরিকার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, হোয়াইট হাউসে বিয়ে হওয়াটা খুব একটা বিরল নয়, তবে তা সাধারণত প্রেসিডেন্টদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ঘটে। কিন্তু খোদ প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে বিয়ে করছেন- এমন ঘটনা ইতিহাসে মাত্র একবারই ঘটেছে। তিনি হলেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড। ১৮৮৬ সাল। ৪৯ বছর বয়সী ব্যাচেলর প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড বিয়ে করেন ২১ বছর বয়সী ফ্রান্সেস ফলসমকে। ফ্রান্সেস ছিলেন ক্লিভল্যান্ডের প্রয়াত আইন ব্যবসার অংশীদারের মেয়ে। ক্লিভল্যান্ড ছোটবেলা থেকেই ফ্রান্সেসকে চিনতেন এবং তার অভিভাবকতুল্য ছিলেন, যা নিয়ে তৎকালীন সময়ে বেশ কানাঘুষাও হয়েছিল। হোয়াইট হাউসের ব্লু রুমে অনুষ্ঠিত এই বিয়ে ছিল মিডিয়ার জন্য এক বিশাল উৎসব। জন ফিলিপ সুসা নিজে মেরিন ব্যান্ড নিয়ে বাজিয়েছিলেন। ফ্রান্সেস ক্লিভল্যান্ড হয়ে ওঠেন আমেরিকার ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ফার্স্ট লেডি এবং তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। তার ফ্যাশন সেন্স এবং ব্যক্তিত্ব তৎকালীন আমেরিকান নারীদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।
উড্রো উইলসন
আমেরিকার ২৮তম প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন যখন ক্ষমতায়, তখন তার জীবনে নেমে আসে এক ঘোর অন্ধকার। ১৯১৪ সালে হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন তার প্রথম স্ত্রী অ্যালেন উইলসন মারা যান। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ব্যস্ত, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা তখন বাজতে শুরু করেছে। ব্যক্তিগত শোক আর জাতীয় দায়িত্বের চাপে উইলসন যখন বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই তার জীবনে বসন্তের বাতাস হয়ে আসেন এডিথ বোলিং গাল্ট।
এডিথ ছিলেন একজন বিধবা নারী। তাদের পরিচয় হয় আকস্মিকভাবেই। উইলসনের শোক কাটতে না কাটতেই এডিথের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা তৎকালীন ওয়াশিংটনের রক্ষণশীল সমাজে বেশ গুঞ্জনের জন্ম দেয়। উপদেষ্টারা সতর্ক করেছিলেন যে, স্ত্রী বিয়োগের এত অল্প সময়ের মধ্যে পুনরায় বিয়ে করলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু উইলসন ছিলেন নাছোড়বান্দা। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে ভালোবাসার অধিকার রাখি।’
১৯১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে, প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার মাত্র ১৬ মাস পর, উইলসন এডিথকে বিয়ে করেন। এই বিয়েটি ছিল ঘরোয়া, ভার্জিনিয়ায় কনের বাড়িতে অনুষ্ঠিত। তবে এই বিয়ের গুরুত্ব কেবল রোমান্টিকতাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বিয়ের পর এডিথ উইলসন হয়ে ওঠেন আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী ফার্স্ট লেডি। ১৯১৯ সালে যখন প্রেসিডেন্ট উইলসন স্ট্রোক করে আংশিক প্যারালাইজড হয়ে যান, তখন এডিথ কার্যত প্রেসিডেন্টের হয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নিতেন। ইতিহাসবিদেরা তাকে প্রায়শই ‘সিক্রেট প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে অভিহিত করেন। ভালোবাসার মানুষ থেকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন রাষ্ট্র পরিচালনার অদৃশ্য শক্তি।
নেলসন ম্যান্ডেলা
নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনটাই একটা মহাকাব্য। ২৭ বছরের কারাবাস, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হওয়া- সবই ইতিহাস। কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবনের শেষ অধ্যায়টি ছিল সিনেমার চেয়েও সুন্দর।
ম্যান্ডেলার ৮০তম জন্মদিন। ১৮ জুলাই, ১৯৯৮। সারাবিশ্ব তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। জোহানেসবার্গে জড়ো হয়েছেন দেশ-বিদেশের হাজারো অতিথি। সবাই জানতেন এটি জন্মদিনের পার্টি। কিন্তু অনুষ্ঠানের মাঝপথে ম্যান্ডেলা ঘোষণা করলেন, আজ কেবল তার জন্মদিন নয়, আজ তার বিয়ের দিনও! উপস্থিত সবাই চমকে গেলেন। পাত্রী গ্রাসা মাচেল।
গ্রাসা মাচেল কোনো সাধারণ নারী ছিলেন না। তিনি ছিলেন মোজাম্বিকের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সামোরা মাচেলের বিধবা স্ত্রী। অর্থাৎ, তিনি ইতিহাসের একমাত্র নারী যিনি দুটি ভিন্ন দেশের ফার্স্ট লেডি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন (মোজাম্বিক ও দক্ষিণ আফ্রিকা)। ম্যান্ডেলা ও গ্রাসার এই বিয়ে প্রমাণ করেছিল যে, ভালোবাসার কোনো বয়স নেই, কোনো সীমানা নেই। ম্যান্ডেলার দীর্ঘ কারাবাস এবং উইনি ম্যান্ডেলার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর, গ্রাসা তার জীবনে এনেছিলেন প্রশান্তি। ম্যান্ডেলা প্রায়ই বলতেন, ‘গ্রাসা আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।’ রাষ্ট্রক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে বসে এই বয়সে বিয়ে করে ম্যান্ডেলা বিশ্বকে দেখিয়েছিলেন যে, একজন বিপ্লবীও দিনশেষে একজন প্রেমিক পুরুষ।
জিগমে খেসার ওয়াংচুক
ভুটানকে বলা হয় বজ্র ড্রাগনের দেশ। আর সেই দেশের রাজা যখন বিয়ের ঘোষণা দেন, তখন তা পুরো এশিয়ায় আলোড়ন তোলে। বর্তমান রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক তখন তরুণ, সুদর্শন এবং অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট। ভুটানের নারীদের হার্টথ্রব। ২০১১ সালে তিনি ঘোষণা করেন যে, তিনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন। পাত্রী জেৎসুন পেমা, যিনি কোনো রাজপরিবারের সদস্য নন, বরং একজন সাধারণ ঘরের মেয়ে (যদিও অভিজাত বংশের সঙ্গে যোগসূত্র ছিল)। এই বিয়েটি ছিল ভুটানের ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক ঘটনা। কারণ, রাজা ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি জেৎসুন পেমা ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবেন না এবং বহুবিবাহের প্রথা থাকা সত্ত্বেও তিনি একগামী থাকবেন।
পুনাখা জং-এর প্রাচীন দুর্গে অনুষ্ঠিত এই বিয়ে ছিল এক জাদুকরী দৃশ্য। বৌদ্ধ মন্ত্রোচ্চারণ, রঙিন পোশাক আর মুখোশ নৃত্যের তালে তালে রাজা তার রানিকে বরণ করে নেন। রাজা যখন জনসমক্ষে রানির হাত ধরে বা গালে চুম্বন করে ভালোবাসা প্রকাশ করতেন, তা রক্ষণশীল ভুটানি সমাজে ছিল এক নতুন বার্তা। এই দম্পতিকে বিশ্বের ‘উইলিয়াম-কেট’ বা রাজকীয় জুটির সঙ্গে তুলনা করা হয়। ক্ষমতার মসনদে থেকেও যে ভালোবাসার সরলতা বজায় রাখা যায়, ভুটানের রাজা-রানি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
জন টাইলার
আমেরিকার ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি ক্ষমতায় থাকাকালে বিয়ে করেন। ঘটনাটি ১৮৪৪ সালের। জন টাইলার তখন আমেরিকার দশম প্রেসিডেন্ট। তার প্রথম স্ত্রী লেটিটিয়া হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন স্ট্রোক করে মারা যান। টাইলার তখন ৫৪ বছর বয়সী। তিনি প্রেমে পড়েন ২৪ বছর বয়সী জুলিয়া গার্ডিনারের। জুলিয়া ছিলেন নিউইয়র্কের এক ধনাঢ্য পরিবারের সুন্দরী কন্যা। বয়সের ব্যবধান ছিল ৩০ বছর! তৎকালীন সমাজে এটি ছিল এক বিশাল স্ক্যান্ডাল। জুলিয়া প্রথমদিকে টাইলারের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও, একটি মর্মান্তিক ঘটনা তাদের এক করে দেয়। ইউএসএস প্রিন্সটন নামক এক যুদ্ধজাহাজে ভ্রমণের সময় এক কামান বিস্ফোরণে জুলিয়ার বাবা মারা যান। সেই শোকের মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট টাইলার জুলিয়ার পাশে দাঁড়ান এবং তাকে সান্ত্বনা দেন। এই শোক থেকেই তাদের সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। ১৮৪৪ সালের জুন মাসে তারা নিউ ইয়র্কে অত্যন্ত গোপনে বিয়ে করেন। বিয়ের খবরটি জানাজানি হওয়ার পর আমেরিকান প্রেসগুলোতে তোলপাড় শুরু হয়। জুলিয়া গার্ডিনার টাইলার ফার্স্ট লেডি হিসেবে হোয়াইট হাউসে অনেক নতুন প্রথা চালু করেন। তিনিই প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল এন্ট্রান্সের সময় ‘হেইল টু দ্য চিফ’ বাজানোর প্রচলন শুরু করেন। বয়সের ব্যবধান নিয়ে সমালোচনা থাকলেও, আমৃত্যু তারা একে অপরের পাশে ছিলেন।
প্রিন্স আলবার্ট দ্বিতীয়
মোনাকো মানেই বিলাসিতা, ক্যাসিনো আর গ্রেস কেলির স্মৃতি। গ্রেস কেলির ছেলে প্রিন্স আলবার্ট দ্বিতীয় দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন বিশ্বের অন্যতম কাক্সিক্ষত ব্যাচেলর। ২০১১ সালে যখন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার অলিম্পিক সাঁতারু চার্লিন উইটস্টককে বিয়ে করেন, তখন মনে হয়েছিল আরেকটি রূপকথা রচিত হতে যাচ্ছে।
কিন্তু এই বিয়ের পেছনে ছিল প্রচুর নাটকীয়তা। ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করেছিল যে, বিয়ের কয়েকদিন আগে চার্লিন মোনাকো ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন! প্রিন্স আলবার্টের ব্যক্তিগত জীবন এবং বিবাহবহির্ভূত সন্তানদের গুঞ্জন নিয়ে চার্লিন নাকি অস্বস্তিতে ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে নাকি তাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল- এমন গুজবও রটেছিল। তবে চার্লিন নিজে ঘটনাটি অস্বীকার করেন। শেষ পর্যন্ত ৮৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। জর্জিও আরমানির ডিজাইনার গাউনে চার্লিনকে দেখতে অপূর্ব লাগছিল, কিন্তু অনেক সাংবাদিক লক্ষ করেছিলেন যে, কনের চোখে জল ছিল এবং তাকে কিছুটা বিষণ্ন দেখাচ্ছিল। যদিও পরবর্তীতে তারা এই গুজব উড়িয়ে দেন এবং বর্তমানে তাদের যমজ সন্তান রয়েছে। তবু রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এই বিয়েটি ছিল একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম আলোচিত এবং বিতর্কিত ঘটনা।
রবার্ট মুগাবে
আফ্রিকার রাজনীতিতে রবার্ট মুগাবে ছিলেন এক জটিল চরিত্র- কেউ তাকে বলত বিপ্লবী, কেউ বলত স্বৈরাচার। তবে তার বিয়ের ঘটনাটিও কম আলোচিত ছিল না।
মুগাবের প্রথম স্ত্রী স্যালি হেফোর্ড ছিলেন ঘানার মেয়ে এবং জিম্বাবুয়ের জনগণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু স্যালি যখন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন, তখনই মুগাবে তার ব্যক্তিগত সচিব গ্রেস মারুফুর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। স্যালি মারা যাওয়ার চার বছর পর, ১৯৯৬ সালে ৭২ বছর বয়সী মুগাবে ৩১ বছর বয়সী গ্রেসকে বিয়ে করেন। এই বিয়ে জিম্বাবুয়ের রাজনীতিতে এক বিশাল পরিবর্তনের সূচনা করে। গ্রেস মুগাবে ছিলেন বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত, যার কারণে তাকে ‘গুচি গ্রেস’ নামে ডাকা হতো। তিনি ধীরে ধীরে মুগাবের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেও প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন। হাজার হাজার অতিথি নিয়ে অনুষ্ঠিত সেই রাজকীয় বিয়েটি জিম্বাবুয়ের অর্থনীতির খারাপ অবস্থার মধ্যে এক দৃষ্টিকটু বিলাসিতা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। একজন রাষ্ট্রনায়ক যখন ব্যক্তিগত মোহ আর ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে যান, তখন রাষ্ট্র কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, মুগাবে-গ্রেসের বিয়ে তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ।
আন্দ্রেয়াস পাপানড্রেও
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেয়াস পাপানড্রেও যখন সত্তরের কোঠায়, তখন তিনি এমন এক কাণ্ড ঘটিয়ে বসলেন যা পুরো ইউরোপে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে লন্ডনে চিকিৎসার জন্য যান। সেখানে তার সেবিকা হিসেবে ছিলেন দিমিত্রা লিয়ানি নামক এক সুন্দরী এয়ার হোস্টেস।
পাপানড্রেও তখন বিবাহিত এবং চার সন্তানের জনক। কিন্তু দিমিত্রার প্রেমে তিনি এতটাই মজে গেলেন যে, দেশে ফিরে তিনি তার ৪০ বছরের স্ত্রী মার্গারেটকে ডিভোর্স দিলেন। ১৯৮৯ সালে, তখনকার বিরোধী নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ৭০ বছর বয়সী পাপানড্রেও ৩৪ বছর বয়সী দিমিত্রাকে বিয়ে করেন। গ্রিসের রক্ষণশীল সমাজ এবং চার্চ এই বিয়েকে সহজভাবে নেয়নি। বিরোধী দলগুলো একে নির্বাচনী ইস্যু বানিয়েছিল। দিমিত্রার টপলেস ছবি ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়া নিয়ে কেলেঙ্কারি আরও উসকে গিয়েছিল। তবু পাপানড্রেও পরোয়া করেননি। এই বিয়ে প্রমাণ করেছিল, একজন শক্তিশালী নেতা জনমতের চেয়ে নিজের আবেগকে কতটা প্রাধান্য দিতে পারেন।
কার্লোস মেনেম
আর্জেন্টিনার রাজনীতি এবং ফুটবল- দুটিই আবেগে ভরপুর। সেই আবেগের পালে হাওয়া লাগিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনেম। তিনি ছিলেন প্লে-বয় ইমেজের রাজনীতিবিদ। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়ার ২ বছর পরে ২০০১ সালে, ৭১ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন চিলির সাবেক মিস ইউনিভার্স, ৩৬ বছর বয়সী সিসিলিয়া বোকোকোকে।
দুই প্রতিবেশী দেশ আর্জেন্টিনা ও চিলির মধ্যে ঐতিহাসিক বৈরিতা থাকলেও, এই বিয়ে দুই দেশের মিডিয়াকে এক করে দিয়েছিল। বিয়ের অনুষ্ঠানটি ছিল তারকাখচিত। সিসিলিয়া ছিলেন টিভি উপস্থাপিকা এবং গ্ল্যামার জগতের মানুষ। প্রেসিডেন্ট মেনেমের সঙ্গে তার বিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার রাজনীতিতে এক নতুন ‘সেলিব্রিটি কালচার’ নিয়ে আসে। যদিও এই বিয়ে বেশিদিন টেকেনি এবং পরবর্তীতে তাদের বিচ্ছেদ হয়, কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে মিস ইউনিভার্সকে বিয়ে করার ঘটনাও দক্ষিণ আমেরিকার রাজনীতিতে বিরল।
টমাস থাবানে
লেসেঙ্গোর প্রধানমন্ত্রী টমাস থাবানের বিয়ের ঘটনাটি কোনো রোমান্টিক গল্প নয়, বরং এটি একটি ‘ক্রাইম থ্রিলার’। ২০১৭ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক দিন পর তার বিচ্ছিন্ন স্ত্রী লিপোলেলো থাবানে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ডের শোকের ছায়া কাটতে না কাটতেই, মাত্র দুই মাস পর প্রধানমন্ত্রী থাবানে বিয়ে করেন তার প্রেমিকা মোসাইয়া থাবানেকে।
৮০ বছর বয়সী থাবানের এই বিয়ে শুরুতে স্বাভাবিক মনে হলেও, পরে পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়ংকর তথ্য। পুলিশ অভিযোগ করে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে নতুন স্ত্রী মোসাইয়ার হাত রয়েছে এবং খোদ প্রধানমন্ত্রীও এতে জড়িত থাকতে পারেন! এই বিয়ের জের ধরেই শেষ পর্যন্ত থাবানেকে পদত্যাগ করতে হয় এবং বিচারের মুখোমুখি হতে হয়।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট
ইতিহাসের পাতায় একটু পেছনে ফিরে তাকালে আমরা পাই ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে। তিনি তার প্রথম স্ত্রী জোসেফাইনকে পাগলের মতো ভালোবাসতেন। কিন্তু জোসেফাইন তাকে কোনো সন্তান বা উত্তরাধিকারী দিতে পারছিলেন না।
নেপোলিয়ন বিশ্বাস করতেন, তার বিশাল সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে একজন রক্তের উত্তরাধিকারী প্রয়োজন। তাই ১৮১০ সালে, হৃদয়ের রক্তক্ষরণ সত্ত্বেও তিনি জোসেফাইনকে ডিভোর্স দেন এবং অস্ট্রিয়ার রাজকন্যা মেরি লুইসকে বিয়ে করেন। এই বিয়েটি ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এবং কৌশলগত। বিয়ের দিন নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘আমি একটি জরায়ু বিয়ে করছি।’ এটি শুনতে নিষ্ঠুর মনে হলেও, রাষ্ট্রনায়কদের জীবনে ব্যক্তিগত সুখের চেয়ে যে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ বা রাজনৈতিক সমীকরণ বড় হয়ে দাঁড়ায়, নেপোলিয়নের এই দ্বিতীয় বিয়ে তার সর্বকালের সেরা উদাহরণ।
জ্যাকব জুমা
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা ছিলেন ঐতিহ্যবাহী জুলু সংস্কৃতির অনুসারী। তিনি একজন বহুবিবাহবাদী নেতা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি একাধিকবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন।
২০১০ সালে তিনি থোবেকা মাদিবাকে এবং ২০১২ সালে গ্লোরিয়া বংগি নগেমাকে বিয়ে করেন। তার মোট স্ত্রীর সংখ্যা ছয় এবং সন্তানের সংখ্যা বিশের অধিক। জুমার এই বিয়েগুলো দক্ষিণ আফ্রিকায় এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি করত। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে কাকে ‘ফার্স্ট লেডি’র মর্যাদা দেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রোটোকল অফিসারদের ঘাম ঝরাতে হতো। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হয়, স্ত্রীরা পালাক্রমে ফার্স্ট লেডির দায়িত্ব পালন করবেন। জুমার এই বিয়েগুলো একদিকে যেমন আফ্রিকান ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন হিসেবে দেখা হতো, অন্যদিকে আধুনিক করদাতাদের টাকায় এত বড় সংসার চালানো নিয়ে প্রচুর সমালোচনাও হতো।
হাসানাল বলকিয়াহ
ব্রুনেইয়ের সুলতান একসময় বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তার জীবনযাপন রূপকথার রাজাদের মতো। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন এবং বিচ্ছেদও ঘটিয়েছেন। ২০০৫ সালে তিনি মালয়েশিয়ার টিভি সাংবাদিক আজরিনাজ মাজহার হাকিমকে বিয়ে করেন। এই বিয়েটি ছিল অত্যন্ত গোপনীয় কিন্তু জাঁকজমকপূর্ণ। সুলতান তার নতুন স্ত্রীকে রাজকীয় সব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন। তবে ২০১০ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে এবং সুলতান একটি বিশেষ ডিক্রি জারি করে স্ত্রীর সমস্ত রাজকীয় উপাধি কেড়ে নেন। ক্ষমতার মসনদে বসে বিয়ে করা এবং প্রয়োজন শেষে সেই সম্পর্ক ছুড়ে ফেলার এক নির্মম উদাহরণ এই ঘটনা।
রাজা তৃতীয় সোয়াতি
আফ্রিকার দেশ ইসওয়াতিনি এর রাজা তৃতীয় সোয়াতি বিশ্বের সর্বশেষ নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের ধারক। তার বিয়ের পদ্ধতিটি বেশ বিচিত্র। প্রতিবছর সেখানে ‘রিড ড্যান্স’ বা ‘উমলাঙ্গা’ উৎসব হয়, যেখানে হাজার হাজার কুমারী মেয়ে নাচে অংশ নেয়। রাজা সেখান থেকে প্রায়শই তার নতুন স্ত্রীকে বেছে নেন। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি বহুবার এই প্রথা মেনে বিয়ে করেছেন। বর্তমানে তার ১৫ জন স্ত্রী রয়েছেন।
কোয়ামে এনক্রুমা
ঘানার অবিসংবাদিত নেতা এবং আফ্রিকার স্বাধীনতার সূর্যসন্তান কোয়ামে এনক্রুমা ১৯৫৭ সালের শেষ দিনে এক অদ্ভুত বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (পরে প্রেসিডেন্ট) এনক্রুমা মিশরের এক কপটিক খ্রিস্টান নারী ফাতিয়া রিজককে বিয়ে করেন। এই বিয়ের আগে এনক্রুমা ফাতিয়াকে কখনও দেখেননি। তিনি কেবল মিশরের প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসেরকে বলেছিলেন যে, তিনি একজন মিশরীয় স্ত্রীকে চান। এটি ছিল মূলত উত্তর আফ্রিকা এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার মধ্যে রাজনৈতিক মেলবন্ধন তৈরির একটি প্রচেষ্টা। ফাতিয়া ঘানায় আসার দিনই তাদের বিয়ে হয়। ঘানার নারীরা প্রথমে বিদেশি বউ মেনে নিতে না চাইলেও পরে ফাতিয়া তাদের আপন করে নেন। এ বিয়ে উপলক্ষে ঘানায় বিশেষ ‘কেন্টে’ কাপড় তৈরি হয়, যার নাম দেওয়া হয় ‘ফাতিয়া এনক্রুমা’। এটি ছিল নিখাদ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা একটি সফল বিয়ে।
ইদি আমিন
উগান্ডার কুখ্যাত স্বৈরাচারী শাসক ইদি আমিনের ব্যক্তিগত জীবন ছিল বিশৃঙ্খল। ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৭৫ সালে তিনি ১৯ বছর বয়সী নৃত্যশিল্পী সারাহ কিওলাবাকে বিয়ে করেন। সারাহর প্রেমিককে হত্যা করার নির্দেশ দিয়ে তিনি সারাহকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে ইদি আমিন তার সামরিক তলোয়ার দিয়ে বিশাল কেক কেটেছিলেন। তার একাধিক স্ত্রী ছিল এবং তাদের অনেকের পরিণতি ছিল মর্মান্তিক। ইদি আমিনের বিয়ে ভালোবাসার ছিল না, ছিল ক্ষমতার জবরদস্তি।
রাজা প্রথম জোগ
আলবেনিয়ার রাজা প্রথম জোগ ছিলেন মুসলিম আর রানি জেরালাইন ছিলেন ক্যাথলিক খ্রিস্টান। তাদের বিয়ে আলবেনিয়ার ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। মুসোলিনির ইতালির হুমকির মুখে থেকেও এই রাজকীয় বিয়ে আলবেনিয়ার জনগণকে সাময়িকভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। হিটলার নিজে এই বিয়েতে উপহার হিসেবে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি পাঠিয়েছিলেন।
ফ্রেডরিক চিলুবা
জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ফ্রেডরিক চিলুবা ক্ষমতায় থাকাকালে তার ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানেন এবং ডিভোর্স দেন। এরপর রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে তিনি বিয়ে করেন রেজিনা চিলুবাকে। রেজিনা ছিলেন তার দলেরই এক নারী নেত্রী। এই বিয়ে নিয়ে জাম্বিয়ার রাজনীতিতে বেশ কাদা ছোড়াছুড়ি হয়েছিল। চার্চ এবং রক্ষণশীল সমাজ প্রেসিডেন্টের এই কাজকে অনৈতিক বলে আখ্যায়িত করেছিল, কিন্তু চিলুবা ক্ষমতা ব্যবহার করে সব সমালোচনা চাপা দিয়ে রেখেছিলেন।
Posted ১০:০১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh