ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসলেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বামপন্থী প্রার্থী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে হারিয়ে তিনিই হতে চলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ ধাপের ভোট গণনা শেষে লুলা দা সিলভা পেয়েছেন ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট, আর ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বলসোনারো।

৩০ অক্টোবর (রবিবার) ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট লুলাকে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জানুয়ারিতে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ব্রাজিলের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নেবেন ৭৭ বছর বয়সী এ নেতা। জয়ের পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় লুলা দা সিলভা বলেন, ‘ব্রাজিলের মানুষ ভালো থাকতে চায়, ভালো খেতে চায়, চাকরি করতে চায়। তারা সুযোগ পেতে চায় শিক্ষার। বন্দুকের পরিবর্তে চায় বই। আমরা শান্তি, গণতন্ত্র এবং মর্যাদা চাই। আমরা এখন এক মানুষ।’

লুলা দা সিলভা ও বলসোনারো দুই মেরুর রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। লুলা দা সিলভা বামপন্থী রাজনীতিবিদ আর বলসোনারোকে কট্টর ডানপন্থী বলে মনে করা হয়। বলসোনারো আগে সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন ছিলেন। গত ২ অক্টোবর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই ভোটে লুলা পান ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট। বলসোনারো পান ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ায়।

দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণের আগে ডেটাফোলহা ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ জরিপে লুলা এগিয়ে ছিলেন। তবে ব্যবধান অনেক কম ছিল। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫২ শতাংশ লুলাকে ও ৪৮ শতাংশ বলসোনারোকে সমর্থন দিয়েছিলেন। জরিপের চেয়েও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা গেছে ভোটের মাঠে। ব্রাজিলের দ্বিতীয় দফার নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা চলছিল। দুই পক্ষ থেকে পরস্পরকে দোষারোপ ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়।

এদিকে নির্বাচনে জয় পাওয়ার পরপরই লুলা দা সিলভাকে অভিনন্দন জানান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। টুইটারে এক পোস্টে তিনি বলেন, দুই নেতা দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নতুন করে ঠিক করবেন। নির্বাচনে ফল ঘোষণার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লুলাকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, মুক্ত ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও লুলাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচনের পরিবেশের কথা তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন লুলা। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও নির্বাচনে জিতে তিনি রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়েছিলেন। অন্যদিকে ২০১৯ সালে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও লাগামহীন কথাবার্তার জন্য সমালোচিত ছিলেন বলসোনারো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর তিনি ব্রাজিলকে রক্ষায় তেমন কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে মহামারির সময় অব্যবস্থাপনার অভিযোগও রয়েছে। তবে আমাজন বন উজাড় করার কথা বলে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত ছিলেন বলসোনারো। সব মিলিয়ে তলানিতে ছিল তার জনপ্রিয়তা।