রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৬ পৌষ ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

ভারতের ‘অবিচার’: মা-বিচ্ছিন্ন বহু নিষ্পাপ কাশ্মীরি শিশু

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

ভারতের ‘অবিচার’: মা-বিচ্ছিন্ন বহু নিষ্পাপ কাশ্মীরি শিশু

ছবি : সংগৃহীত

ভারত শাসিত কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরের একটি সরু গলির নীরবতা ভেঙে যাচ্ছে রাস্তার বিক্রেতাদের অভ্যাসগত হাঁকডাক আর দুই ছোট শিশুর অস্থির কান্নায়। কিন্তু শিশুদের এই কান্না কেনো? এই একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বেরিয়ে আসে ভয়ংকর নির্মম বাস্তবতা আর রাষ্ট্র ভারতের নিষ্ঠুর অবিচারের চিত্র।

তিন বছরের হুসেন চিৎকার করে বলছে, ‌‘খালা, আমাকে আমার মায়ের কাছে নিয়ে যাও; পুলিশ তাকে নিয়ে গেছে।’ এসময় সে আর তার চেয়ে এক বছরের ছোট বোন নূরী তাদের এক-ঘরের বাড়ির জানালার মরচে পড়া লোহার গরাদের সাথে মুখ চেপে ধরে আছে।

তাদের বাবা মজিদ জানান, সাত মাসেরও বেশি আগে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের মা পাকিস্তানি নাগরিক সামিনাকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। তারপর থেকে তারা প্রায় প্রত্যেক পথচারীর কাছে এভাবেই আর্জি জানায়।

কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পর থেকেই হুসেনের পরিবারের যন্ত্রণা শুরু হয়। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন পাকিস্তানি নাগরিক বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। এই ঘটনার পর ভারত থেকে প্রায় ৮০০ পাকিস্তানিকে বহিষ্কার করা হয়।

পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীই কাশ্মীরের পুরো অঞ্চলটির দাবি করে। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকে দুই দেশ কাশ্মীর নিয়ে তাদের তিনটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের মধ্যে দুটি চালিয়েছে।

পেহেলগাম হামলার পর ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং দ্রুত সব কূটনৈতিক সম্পর্কের হ্রাস টানে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিত করে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ পানি চুক্তি স্থগিত রাখে। এপ্রিলের শেষের দিকে, ভারত দেশে বসবাসকারী পাকিস্তানি নাগরিকদের দেওয়া সমস্ত ভিসা বাতিল করে দেয়, যার মধ্যে মেডিকেল এবং কূটনৈতিক ভিসাও ছিল। তাদের ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ এর মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং ১ মে ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।

প্রায় ৮০০ পাকিস্তানি, যাদের অনেকে কাশ্মীর এবং ভারতের অন্যান্য অংশে ভারতীয় নাগরিকদের বিয়ে করেছিলেন; তাদেরকে নির্বাসিত করা হয়। কর্তৃপক্ষ পরিবারগুলো আবার কবে একত্রিত হবে, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বার্তা না দেওয়ায় সীমান্তের উভয় দিকের আত্মীয়দের অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

মজিদ ২০১৮ সালে তার ৩৮ বছর বয়সী পাকিস্তানি আত্মীয় সামিনাকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু ২৮ এপ্রিল সামিনাকে শ্রীনগরের স্থানীয় থানায় তলব করা হয়। বাচ্চারা ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখতে পায় তাদের বাবা তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছেন, কিন্তু মা আর নেই। সামিনাকে আটক করে পরদিনই পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানানো হয়।

ঘরে বসে মজিদ জানান, তিনি এখনও এই ঘটনাগুলো সামলে উঠতে পারছেন না। একসময় তিনি মাসে প্রায় ৭০ ডলার আয় করতেন, কিন্তু স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি ছোট বাচ্চাদের একা ফেলে যেতে পারেননি। এখন তিনি কর্মহীন। মজিদ বলেন, আমি গত ছয় মাস ধরে ভালোভাবে ঘুমাইনি। সব সময় বাচ্চাদের দেখাশোনায় যায়। আমি অন্য কিছু করার কথা ভাবতে পারি না। কখনও কখনও, আমি নিজের জীবন শেষ করার কথা ভাবি। কিন্তু আমি নিজেকে থামিয়ে দিই, ভাবি আমি চলে গেলে তাদের যত্ন কে নেবে।

এদিকে, সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সামিনাও পাকিস্তানে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। মানসিক চাপের কারণে তার রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত।

বহিষ্কারের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মুখপাত্র শাজিয়া ইলমি বলেন এই পদক্ষেপগুলো জাতীয় নিরাপত্তার কারণে নেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, যারা নির্বাসিত হয়েছেন তারা পাকিস্তানি নাগরিক এবং প্রায়শই তারা এমন কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ যারা সন্ত্রাসবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সাথে জড়িত বলে প্রমাণিত হয়েছে।

পুরান দিল্লির ৩২ বছর বয়সী বাসিন্দা মুহাম্মদ শাহবাজ। তিনি ২০১৪ সালে তার ২৭ বছর বয়সী পাকিস্তানি খালাতো বোন এরুমকে বিয়ে করেন। এরুম দীর্ঘমেয়াদী ভিসায় ভারতে থাকতেন। তিনি তাদের তিন বছরের ছেলে আলমিরকে পরিবারের সাথে পরিচিত করাতে পাকিস্তানে যান। সেটি ছিল ২০২০ সালের মার্চ মাসের ঘটনা। ঠিক ১০ দিন আগে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে লকডাউন এবং ভ্রমণের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এরুম পাকিস্তানে থেকে যেতে বাধ্য হন এবং এই সময়ে তার ভারতীয় ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

পাঁচ বছর ধরে বারবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর অবশেষে এই বছরের এপ্রিলে তাকে ভিসা দেওয়া হয়। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পর শাহবাজ তার পরিবারের সাথে পুনরায় মিলিত হতে যাচ্ছিলেন। এরুম ১৭ এপ্রিল নয়াদিল্লি পৌঁছান। এর মাত্র ১২ দিন পর পেহেলগাম হামলা হয়। ২৯ এপ্রিল তাকে আবার পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়।

শাহবাজ বলেন, এত বছর বিচ্ছেদ, কঠোর পরিশ্রম আর আকাঙ্ক্ষার পর সে অবশেষে বাড়ি ফিরেছিল। আমার দুনিয়া আলোকিত হয়ে উঠেছিল এবং আমি সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম। আর তারপর, চোখের পলকে, সবকিছু আবার ভেঙে গেল। তাকে নিয়ে যাওয়া হলো, আমাকে অসহায় এবং হতাশায় ডুবিয়ে।

ভারতীয়-শাসিত কাশ্মীরের ৬২ বছর বয়সী ফজল-উ-রহমান জানেন না যে তিনি তার স্ত্রী পারভীনাকে আর দেখতে পাবেন কিনা। তাকে এপ্রিলে পাকিস্তানে নির্বাসিত করা হয়েছিল। তিনি গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানে যাননি।

পারভীনা (৬৫) পাকিস্তানের করাচিতে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি ১৯৮২ সালে রেহমানকে বিয়ে করার পর আর ফিরে যাননি। বারামুল্লা জেলায় তার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে জীবন গড়ে তুলেছিলেন।

রেহমান এখন ভয় পান যে তিনি তাকে না দেখেই হয়তো মারা যাবেন। বলেন, আমাদের বাড়িটা ভাগ হয়ে গেছে। সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি জানি না আর কত বছর বাঁচব!

আবদুল্লাহ জানান, তার ২৫ বছর বয়সী স্ত্রী তামারাহকে ২৯ এপ্রিল নির্বাসিত করার পর তিনি ভেঙে পড়েছেন। ১৮ মাস বয়সী জমজ ছেলে আয়ান এবং আতিফ এখন আর আগের মতো খেলে না, হাসে না বা খায় না। তামারাহ যখন নির্বাসিত হন, তখন এক জমজ এখনও বুকের দুধ পান করত।

কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার একটি পাবলিক ব্যাংক ম্যানেজার আবদুল্লাহ (৩৮) ২০১৮ সালে তামারাহকে বিয়ে করেন। তাকে নির্বাসনের জন্য আটারি-ওয়াঘা সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় আবদুল্লাহ তার বাচ্চাদের নিয়ে পুলিশের ভ্যানটিকে কুপওয়ারা থেকে অমৃতসর পর্যন্ত ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ অনুসরণ করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি রাস্তায় কেঁদেছিলাম, অসহায়ভাবে পুলিশের কাছে অনুরোধ করেছিলাম যে অন্তত বাচ্চাদের তাদের মাকে শেষবারের মতো দেখতে দিক। কিন্তু তারা আমাদের ঠিকমতো বিদায় জানাতেও দেয়নি।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার কারণে নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের শাস্তি দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং অধিকার কর্মী কলিন গনসালভেস বলেন, পাকিস্তানি নাগরিকদের বহিষ্কারের সাথে পেহেলগাম হামলার কোনো বৈধ সংযোগ নেই।তিনি বলেন, তাদের পেহেলগামের সাথে যুক্ত করা কেবল একটি অজুহাত এবং একটি গুরুতর ত্রুটিপূর্ণ অজুহাত… সরকার দাবি করতে পারে যে এটি পাহালগামের ফল, কিন্তু সেই দাবি কেবল বিভ্রান্তিকর নয়, বিপজ্জনকও,” তিনি বলেন।

কুপওয়ারার আবদুল্লাহ চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, ভারত সরকার আমাদের সাথে যা করেছে, তা পাহালগামের আক্রমণকারীরা যা করেছিল তার থেকে ভিন্ন নয়। তারাও আমাদের পরিবার এবং ঘর ধ্বংস করেছে,” তিনি বলেন। “কেন আমাদের নিরীহ শিশুদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে? তাদের কী দোষ?

সূত্র : আল জাজিরা

Posted ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.