বাংলাদেশ অনলাইন : | রবিবার, ১৮ আগস্ট ২০২৪
ছবি : সংগৃহীত
সংক্রামক রোগ এমপক্স (মাঙ্কিপক্স) নিয়ে বাংলাদেশে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যদিও এখনও দেশে এই রোগে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি। তারপরও মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ দেখা গেলে সন্দেহভাজনদের দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হটলাইন ১৬২৬৩ ও ১০৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
মাঙ্কিপক্স আসলে কী এবং এর লক্ষণগুলো কী?
গুটিবসন্তের একই গোত্রীয় ভাইরাস হলেও মাঙ্কিপক্স সাধারণত অনেক কম ক্ষতিকারক। প্রথমে এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়। এই রোগে আক্রান্তদের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ফোলা, পিঠে এবং পেশিতে ব্যথা। আক্রান্ত ব্যক্তির একবার জ্বর উঠলে গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। সাধারণত মুখ থেকে শুরু হয়ে পরে হাতের তালু এবং পায়ের তলদেশসহ শরীরের অন্যান্য অংশে তা ছড়িয়ে পড়ে।
অত্যন্ত চুলকানো বা ব্যথাদায়ক এই ফুসকুড়িগুলো পরিবর্তন হয় এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে স্ক্যাব বা গোল গোল পুরু আস্তরে পরিণত হয়ে শেষে পড়ে যায়। এর ফলে দাগ সৃষ্টি হতে পারে। সংক্রমণের ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এটি নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যেতে পারে। তবে ছোট শিশুসহ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য কিছু ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত মারাত্মক। এর আক্রমণের কারণে গুরুতর ক্ষেত্রে মুখ, চোখ এবং যৌনাঙ্গসহ পুরো শরীরে ক্ষত তৈরি হতে পারে।
কোন কোন দেশে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়েছে?
গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের মতো পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট সমৃদ্ধ দেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে মাঙ্কিপক্স সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই অঞ্চলগুলোতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এতে আক্রান্ত হয় আর শত শত মানুষের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা।
বর্তমানে অনেকগুলো দেশে বিভিন্ন প্রাদুর্ভাব একইসঙ্গে দেখা যাচ্ছে- বিশেষ করে কঙ্গো এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলোতে।
রোগটি সম্প্রতি বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, উগান্ডা এবং কেনিয়াতে দেখা গেছে, যা সাধারণত সেখানে দেখা যায় না। মোটাদাগে মাঙ্কিপক্সের দুটি ধরন রয়েছে – ক্লেড ১, যা সাধারণত আরও গুরুতর হয় এবং ক্লেড ২। ক্লেড ১ ভাইরাস– কয়েক দশক ধরে কঙ্গোতে বিক্ষিপ্ত প্রাদুর্ভাবের কারণ ছিল এবং এখন ছড়িয়ে পড়া ধরনটিও এটি। ক্লেড ১’র কিছু ধরনে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হবার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
গত বছরে সংক্রামিত অনেকের তুলনামূলকভাবে নতুন ও আরও গুরুতর ধরনের মাঙ্কিপক্স ক্লেড ১বি হওয়ায় এ নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্লেড ১বি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা বাকি। তবে ধারণা করা হচ্ছে- এটি সম্ভবত আগের ধরনের চেয়ে আরও সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে, একইসঙ্গে আরও গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে।
আফ্রিকা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে ২০২৪ সালের শুরু থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ এমপক্সে আক্রান্ত হয়েছে আর এতে ৪৫০’রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এই সংখ্যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় সংক্রমণের ক্ষেত্রে ১৬০ শতাংশ এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২২ সালে মাঙ্কিপক্সের মৃদু ধরন ক্লেড ২’র কারণে জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল।
এশিয়া এবং আফ্রিকার মতো যে দেশগুলোতে সাধারণত এই ভাইরাস দেখা যায় না- এমন প্রায় ১০০টি দেশে এটি ছড়িয়ে পড়ে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
মাঙ্কিপক্স কীভাবে ছড়ায়?
মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, সরাসরি সংস্পর্শ কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি এসে কথা বলা বা শ্বাস নেওয়ার মতো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে এটি একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটি ফাটা চামড়া, শ্বাসতন্ত্র বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ভাইরাসে দূষিত হয়েছে এমন জিনিস যেমন বিছানা, পোশাক এবং তোয়ালে স্পর্শের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে।
বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালির মতো কোনও প্রাণী যদি এতে সংক্রমিত হয় আর কেউ যদি ওই সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে বেশি কাছাকাছি আসে তবে তিনি এতে আক্রান্ত হতে পারেন। ২০২২ সালের বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। কঙ্গোর বর্তমান প্রাদুর্ভাবের বড় একটি কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। ছোট শিশুসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের মধ্যে মাঙ্কিপক্স পাওয়া গেছে।
এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার গত ২৫ জুলাই সোমবার দেওয়া সতর্কবাণীতে মাঙ্কিপক্স মহামারী সমকামী ও উভকামীদের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
মার্কিন স্বাস্থ্যসেবীরা এ নিয়ে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করছেন। মহামারী হিসেবে এ রোগ ছড়িয়ে পড়া রোদে সতর্ক চলাফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। মাঙ্কিপক্স রোগের প্রাদুর্ভাব সমকামী এবং উভকামীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে বলে বলা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২৩ জুলাই শনিবার মাঙ্কিপক্স রোগটি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকায় জরুরি জনস্বাস্থ্য সতর্কতা ঘোষণা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র জরুরি কর্মকর্তা ডা. ক্যাথারিন স্মল ওয়ার্ল্ড সিএনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেন, এ পর্যন্ত মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের যে ক’টি কেস পাওয়া গেছে তাদের অধিকাংশ রোগে আক্রান্ত সমকামী ছিলেন। এটা খুবই সাধারণ বিষয়, এধরনের জীবাণুবাহিত মহামারী সংক্রমণ নির্দিষ্ট একটি মানবগোষ্ঠী থেকে শুরু হয়।
ডা. স্মল ওয়ার্ড বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই সংক্রমণ ছডানো রোধে জরুরি কার্যক্রম শুরু করেছে। মাঙ্কিপক্স রোগের সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক জরুরি জনস্বাস্থ্য সতর্কতা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করছে। পাশাপাশি আলোচ্য এই রোগ নিরাময় ও সংক্রমণ থেকে জনসাধারণকে রক্ষা করতে দেশে দেশে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সূত্র : বিবিসি, সিএনবিসি
Posted ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৮ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh