বাংলাদেশ অনলাইন : | সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। জারি করা হয়েছে এক বছরের জরুরি অবস্থা। অং সাং সু চি ও প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ট মিন্টসহ ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের আটক হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দেশটি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী বলেছে, তারা কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অং হ্লেইংয়ের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে।
মিয়ানমারের এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা। এ ঘটনায় হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন, ‘মিয়ানমারে সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন অথবা দেশটির গণতান্ত্রিক উত্তরণে বাধা দেওয়ার যেকোনও চেষ্টার বিরোধিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র।’
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইন বলেছেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আবারও দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এবং অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের আটকের ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া সরকার উদ্বিগ্ন।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন,‘আমরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে আইন মেনে চলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে এবং অবৈধভাবে আটক হওয়া সব বেসামরিক নেতাসহ অন্যদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
জাতিসংঘের মহাসচিব এ্যান্তনিও গুতেরেস মিয়ানমারের বেসামরিক নেতাদের আটক রাখার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এ ছাড়া সব আইনি, কার্যনির্বাহী ও বিচারিক ক্ষমতা সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের ঘোষণার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সব পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সিঙ্গাপুর। আমরা নিবিড়ভাবে এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সব পক্ষ ইতিবাচক ও শান্তিপূর্ণ ফলাফলের জন্য কাজ করবে বলে আশা করছি।’
এ ছাড়া অং সান সু চিসহ মিয়ানমারে অবৈধভাবে আটক সবার তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এশিয়ার পরিচালক ব্র্যাড এ্যাডামস। এদিকে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান এবং অং সান সুচিসহ বেসামরিক নেতাদের আটকের ঘটনায় জাপানে থাকা মিয়ানমারের নাগরিকেরা রাজধানী টোকিওতে বিক্ষোভ করছেন।
এর আগে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দলের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নেত্রী অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ শাসক দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে সোমবার ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে আটক করা হয়েছে। এদিকে, এ ঘটনার পর থেকেই মিয়ানমার জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ছাড়া যোগাযোগের মাধ্যমগুলোও ব্যাহত হচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় সৈন্যরা নেমে পড়েছে। রাজধানীসহ প্রধান প্রধান শহরগুলোতে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম এমআরটিভি জানিয়েছে, তারা কিছু কারিগরি সমস্যার মুখে পড়েছে এবং তাদের সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে।
বিবিসি আরও জানায়, সেনা সদস্যেরা বেশ কয়েকটি অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করেছে বলে জানিয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংবাদদাতা জনাথান হেড জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছিল সামরিক বাহিনী। এক দশকেরও বেশি সময় আগে সংবিধান তৈরি করা হয়েছিল। এরপরও এটিকে পুরো মাত্রায় সামরিক অভ্যুত্থান বলেই মনে হচ্ছে।
বিবিসির সংবাদদাতা বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা রয়েছে সামরিক বাহিনীর, যার মাধ্যমে তারা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু অং সান সু চির মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে আটক করার ঘটনা উস্কানিমূলক এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এনএলডির মুখপাত্র মিও নিয়ান্ট বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ফোনে বলেছেন, ‘আমি আমাদের জনগণকে বেপরোয়া কিছু না করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি তাদের আইন মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।’ নিয়ান্ট আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, তিনিও যেকোনও সময় আটক হতে পারেন।
দেশটির সামরিক বাহিনী গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। সেনাবাহিনী নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে সোমবার বসতে যাওয়া সংসদ অধিবেশন বাতিলের দাবি জানায়। অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি নভেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পায়।
সেনাবাহিনী সমর্থিত বিরোধী জোট নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তোলে। তাদের দাবি, নির্বাচনে ভোটার তালিকায় ৮৬ লাখ গরমিল পাওয়া গেছে। নির্বাচনে এনএলডি পার্টি ৮৩ শতাংশ আসন পায়। ২০১১ সালে সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর এটি দ্বিতীয় নির্বাচন ছিল। তবে সামরিক বাহিনী নির্বাচনের ফলকে বাধাগ্রস্ত করে। তারা সুপ্রিম কোর্টে প্রেসিডেন্ট ও ইলেকটোরাল কমিশনের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে।
Posted ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh