সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বাস্তব রূপ নেবে কি?

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৩

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বাস্তব রূপ নেবে কি?

সংঘাত বন্ধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নানা সময়ে স্বাধীন দুটি রাষ্ট্র তৈরির কথা আসলেও বাস্তবে ধরা দেয়নি। ফাইল ছবি

১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েলের যুদ্ধের পর দীর্ঘসময় পেরলেও কূলকিনারা হয়নি ফিলিস্তিন যুদ্ধের। সবশেষ ১৯৭৩ সালে তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর আরব দেশগুলোর সঙ্গে আর কোনো যুদ্ধ না হলেও ৭৫ বছর ধরে চলা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সুরাহা হয়নি এখনো। যদিও সংঘাত বন্ধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নানা সময়ে স্বাধীন দুটি রাষ্ট্র তৈরির কথাও এসেছে কয়েকবার। তবে বাস্তবে ধরা দেয়নি।

জাতিসংঘের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলকে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ সংঘাত অবসানের মধ্যদিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান এসেছিল। ওই সময়ে বলা হয়েছিল, ইসরায়েল হবে ইহুদিদের জন্য আর ফিলিস্তিন আরবদের। তবে মোট ভূখণ্ডের ১০ শতাংশের মালিক হলেও ইহুদিদের মোট ভূমির অর্ধেক দেওয়া হয়। যার বিরোধিতা করে আরবরা। এর ফলশ্রুতিতেই প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পরবর্তীতে একসময় ঠিকই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয় পক্ষই স্বাধীন দুটি রাষ্ট্রের সমাধানেই ঐকমত্য হয়।


স্বাধীন দুটি রাষ্ট্রের ধারণা যেভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছিল

১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের শান্তিচুক্তির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পৃথক স্বাধীন দুটি রাষ্ট্রের ধারণা বাস্তবতার দিকে এগোতে শুরু করে। এই চুক্তি মূলত অ্যাকর্ড নামে পরিচিতি। এই চুক্তিতে পশ্চিম তীর ও গাজায় সরকার পরিচালনার জন্য একটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়। যেটি গঠনের সময়সীমা ছিল পাঁচ বছর। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরাও ইসরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকার করে নেয়।


পরবর্তীতে চুক্তি অনুযায়ী খুব দ্রুতই পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে ‘সম্ভাব্য’ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি কর্তৃপক্ষও গঠন করা হয়। তবে এর পরপরই শান্তি প্রক্রিয়ায় ভাটা পড়ে। সামনে আসতে থাকে নানা বাধা-বিপত্তি।

শান্তি প্রক্রিয়ায় ভাটার কারণ


নরওয়ের অসলোতে পৃথক দুটি রাষ্ট্রকেই একমাত্র সুরাহা মেনে নেওয়া হলেও সে রাষ্ট্র কবে গঠন হবে শান্তিচুক্তিতে তার কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া ছিল না। আবার ইসরায়েলের বাইরে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চারটি বিষয়েরও কোনো সমাধান করা হয়নি। স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ওই চারটি বিষয় ছিল- দুই রাষ্ট্রের সীমান্ত কোথায় এবং কীভাবে নির্ধারণ হবে; জেরুজালেম কার অধীনে থাকবে; ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ভেতরে থাকা ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারীদের কীভাবে সরিয়ে নেওয়া হবে এবং ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের পর থেকে ইসরায়েলের ভেতরে থাকা যেসব ফিলিস্তিনি বাস্তচ্যুত হয়েছেন, তারা কীভাবে ফিরবেন।
যদিও ১৯৯৩ শান্তিচুক্তির সময়ে বলা হয়েছিল, পাঁচ বছরের মধ্যে একটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠনের পর এসব বিষয়গুলো আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক করা হবে। তবে তা আর কখনোই হয়নি। ইতিহাসবিদদের ভাষ্য- এ জন্য উভয় পক্ষেরই দায় ছিল।

ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজের অধ্যাপক মেইর লিটভ্যাকের দাবি, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দুই পক্ষেরই দায় ছিল। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন- দুই পক্ষেই চুক্তি বিরোধী শক্তিশালী দুটি গ্রুপ ছিল, যারা এই ঐক্যমত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কারণ, দুই পক্ষই বলছিল- পুরো এলাকা তাদের এবং শুধু তাদেরই রাষ্ট্র হবে। ফিলিস্তিনে এটা ছিল হামাস এবং ইসলামী জিহাদ। আর ইসরায়েলে ধর্মীয় এবং জাতীয়তাবাদী গ্রুপগুলো। ফলে অসলো অ্যাকর্ড আর বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি।’

এদিকে, আসলোয় শান্তিচুক্তি করা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন ১৯৯৫ সালে এক ইহুদি চরমপন্থীর হামলায় নিহত হন। অন্যদিকে চুক্তির পর থেকে নানা বিষয়ে সুরাহা না হওয়ায় এর বিরোধিতায় হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ ইহুদিদের উপর হামলা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে ইসরায়েলে ডানপন্থীরা ক্ষমতায় এলে দেশটির সরকারও আর শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চায়নি। পরবর্তী বছরগুলোতেও বিভিন্ন সময় দুই পক্ষের একাধিক বৈঠক হলেও কার্যত কোনো সুরাহা হয়নি। এ সময়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের উপর নজর দেয় এবং জেরুজালেমকে দেশটির রাজধানীও ঘোষণা করে।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব?

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য সবার আগে দরকার ভূখণ্ড। কিন্তু পশ্চিম তীর চুক্তি অনুযায়ী যা ফিলিস্তিনের অংশ হবে, সেখানে বর্তমানে কয়েক লাখ ইহুদি বসতিস্থাপনকারী বসবাস করছেন। এছাড়াও জেরুজালেমকেও ইসরায়েল তার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং আমেরিকা এর স্বীকৃতিও দিয়েছে। ফলে ভৌগলিকভাবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন এখন আর বাস্তবসম্মত নয় বলেই মনে করেন অনেকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক শাহিন বেরেনজি মনে করেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। তিনি বলেন, ‘এটা বাস্তবায়ন করা ১৯৯০ এর দশকের তুলনায় খুবই কঠিন। কারণ, পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমের ইহুদি বসতি। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির সময় এটা ছিল এক লাখ ২০ হাজার। গেল তিন দশকে ইহুদি বসতিস্থাপনকারী বেড়ে হয়েছে সাত লাখ। এছাড়া খোদ ইসরায়েলের আইন অনুযায়ীই অবৈধ এরকম ইহুদি বসতিও আছে।’

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক এই গবেষক বলেন, ‘এরকম বসতি সম্প্রসারণ এবং ইসরায়েলের রাজনীতিতে এর প্রবল সমর্থনের কারণে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া দুই রাষ্ট্র সমাধানের প্রতিও এখন আর ইসরায়েলের আগ্রহ নেই। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরাও হামাস এবং ফাতাহ দুই দলে বিভক্ত এবং তাদের মধ্যে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য কথা বলা বা শান্তি প্রক্রিয়া এগোনোর মতো একক এবং বিশ্বস্ত নেতা নেই।’
তবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের এখনো সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেইর লিটভ্যাক। তার দাবি, এখনো সুযোগ আছে। তবে ইসরায়েল দুই রাষ্ট্র সমাধান চায় না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

অধ্যাপক মেইর লিটভ্যাক বলেন, ‘আমি এখানে ইসরায়েলের সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করি। তারা যেটাকে সমাধান মনে করে সেটা হচ্ছে, পরিস্থিতি যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকুক। অর্থাৎ তারা পশ্চিম তীরকে নিয়ন্ত্রণ করবে, যেখানে আবার একটা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও থাকবে, তবে দুর্বল এবং ইসরায়েলের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু চিরদিন ইসরায়েল এভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে- এটা একটা ভুল ধারণা। এটা থেকে বেরিয়ে এলে সমাধান সম্ভব।’

পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতিকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসরায়েল এর আগে গাজা থেকে তাদের সব বসতি সরিয়ে নিয়েছিল এবং নিজেরাও গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়েছে। সুতরাং কঠিন হলেও পশ্চিম তীরে সেটা করা যাবে। এমনকি জেরুজালেম নিয়েও দুই পক্ষ ছাড় দিলে ঐকমত্যে আসা সম্ভব। কিন্তু ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে এখন যে নতুন যুদ্ধাবস্থা সেখানে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা অচলাবস্থার পরিবর্তন কে করবে- সেটা একটা বড় প্রশ্ন।

মার্কিন গবেষক শাহিন বেরেনজি মনে করেন, যুদ্ধাবস্থার অবসানে আমেরিকাকেই এগিয়ে আসতে হবে। তার মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তির উদ্যোগ নিলে সেটা সফল হতে পারে।
মার্কিন এই গবেষক বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে আমেরিকা যখন মধ্যপ্রাচ্যে কিছু করতে চেয়েছে, তখন সেটার বাস্তবায়নও হয়েছে। মিশর-ইসরায়েল শান্তিচুক্তি, জর্ডানের সঙ্গে চুক্তি এমনকি সাম্প্রতিককালে আব্রাহাম অ্যাকর্ড- এর সবগুলোর পেছনে আমেরিকার ভূমিকা আছে।’

তবে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমেরিকার অবস্থান কী- এর জবাবে শাহিন বেরেনজি বলেন, ‘দুই যুগ আগে নাইন-ইলেভেনের পর আমেরিকার চোখ অসলো শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন থেকে সরে যায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। সেটা শেষ হলে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ইরান, রাশিয়া, চীন নিয়ে। কিন্তু এখন আমেরিকাকে আবারও মধ্যপ্রাচ্যে সক্রিয় হতে হচ্ছে। কারণ, এখানে অবহেলা করলে এর ফল সবাইকেই ভোগ করতে হবে, কিছু সময় পর পর সংঘাত সামনে আসবে।’ সূত্র : বিবিসি বাংলা

advertisement

Posted ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৩

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.