বাংলাদেশ অনলাইন : | রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) জানিয়েছে, বিদায়ী বছর ২০২৩ সালে সারাদেশে ৪০০টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ৪২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এবং এসব ঘটনায় ৪ হাজার ৭৭১ জন আহত ও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ৩১ ডিসেম্বর (রবিবার) সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৩: এমএসএফ-র পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। মানবাধিকারের কথা তুললে সরকার বিরক্ত হচ্ছে। যারা মানবাধিকারের কথা বলছেন, তাদের বৈরিতার জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র ও মানবাধিকারকর্মীদের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানবাধিকারের প্রতি সম্মান করা, সুরক্ষা দেয়া এবং মানবাধিকার বোধ বাস্তবায়ন করা। গত এক বছরে এসব ব্যাপারে রাষ্ট্র মনোযোগী ছিল না। যখনই মানবাধিকারের কথা উঠেছে, তারা আত্মরক্ষামূলক কথা বলেছে।
তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। মানবাধিকারের প্রতি সম্মান করা হয়নি। মানবাধিকার বোধ সঞ্চারে সরকার বুদ্ধিবৃত্তিক পদক্ষেপ নেয়নি। সরকারের আচরণ দেখলে মনে হয়, মানবাধিকারের বিষয়গুলো তারা গুরুত্বপূর্ণভাবে নিচ্ছে না। সরকার মনে করছে, শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন হলেই যথেষ্ট। মানুষের মনমানসিকতা, মানবাধিকার বোধ উন্নয়নে যেন তাদের দায়িত্ব নেই।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আইনজীবী সাঈদুর রহমান। এ সময় সংস্থাটির সমন্বয়ক মো. টিপু সুলতানও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার সুরক্ষায় ১৫ দফা সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে।
Advertisement
প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের দমনে ও সহিংস কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ না করা, কথিত গায়েবি মামলা দায়ের ও এ সংক্রান্ত মামলায় গণগ্রেপ্তার করা থেকে বিরত থাকা ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা, পুলিশই বাদী, পুলিশই সাক্ষী, পুলিশই তদন্তকারী এ ধরনের মামলায় সাজা দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা; রাজনীতিবিদদের অপরাধী হিসেবে গণ্য না করে রাজনীতিবিদ হিসেবে গণ্য করা।
এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা বা সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে পুনরায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা, নির্বাচনী সহিংসতা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
এছাড়া সব প্রকার গুম, অপহরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগসমূহ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করা, কারাগারসমূহের অভ্যন্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাসমূহের যথাযথ তদন্ত করে বিচারিক ব্যবস্থা গ্রহণ, শিশু ও নারীদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আরও জোরদার করা; ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার চর্চায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ।
এবং সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার রোধে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা, পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, সংস্কৃতি ও শিক্ষাব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করাসহ সমাজে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা আরও কার্যকর করা, দেশের নাগরিকদের সম-অধিকার ও সমমর্যাদা রক্ষা ও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সরকার উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করবে বলে প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে।
Posted ১০:৫০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh