বাংলাদেশ অনলাইন : | সোমবার, ২৯ আগস্ট ২০২২
মিয়ানমার থেকে গোপনে ভারতের মিজোরাম যাচ্ছেন হাজার হাজার শরণার্থী। গত বছরের পয়লা ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর ফের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দলে দলে আতঙ্কিত মানুষজন টিয়াউ নদী পেরিয়ে গোপনে মিজোরামে চলে যাচ্ছেন, আর সেই যাওয়া যেন থামছেই না। এই শরণার্থীরা মূলত মিয়ানমারের চিন স্টেটের (প্রদেশ) বাসিন্দা, সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতেই তারা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ২৯ আগস্ট (সোমবার) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবিসি জানায়, সবশেষ সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী-মিজোরামে এই শরণার্থীদের সংখ্যা প্রায় ৩১ হাজার, যদিও বিভিন্ন এনজিও বলছে আসলে সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। মিয়ানমারে ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জিতে সে দেশের পার্লামেন্টের সদস্য হয়েছিলেন, এমন অন্তত ১৪জন এমপি-ও এই দলে আছেন।
ভারত সরকার তাদের শরণার্থীর মর্যাদা না দিলেও মিজোরামের রাজ্য সরকার ও স্থানীয় মানুষজন তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে মিজোরামের প্রশাসন, বিভিন্ন এনজিও ও চার্চের সক্রিয় উদ্যোগে রাজ্য জুড়ে তাদের জন্য বহু আশ্রয় শিবির চালু করা হয়েছে।
মিজোরামের প্রত্যন্ত ও দুর্গম চাম্পাই হিলস এলাকার একটি শরণার্থী শিবিরে থাকেন মোয়েত অ্যালো শোয়ে সিন। তিনি মিয়ানমারের একটি প্রাইমারি স্কুলে বাচ্চাদের ইংরেজি পড়াতেন। বাবাসহ তার পরিবারের বেশ কয়েকজনকে যখন সৈন্যরা ধরে নিয়ে যায়, বাধ্য হয়ে পাঁচ মাস আগে তিনি ভারতে চলে যান।
জোখাওথর শরণার্থী ক্যাম্পের উঠোনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবারের বাকিদের ফেলে এভাবে চলে আসাটা মোটেই সহজ ছিল না। ঘন জঙ্গল আর পাহাড়ের ভেতর দিয়ে পুরো দশদিন লেগেছে ভারতে আসতে। দুদিন পথ চলার পরই হয়তো কোথাও সংঘর্ষ বা গণ্ডগোল, তখন আবার গা ঢাকা দেওয়া- আবার হয়তো টানা চব্বিশ ঘণ্টা পথ চলা, এভাবেই কোনওমতে সীমান্ত পেরিয়েছি আমি।’
চিন স্টেটের আরেক চাষী পরিবারের গৃহবধূ ছিলেন এস্থার। তিনি, মিয়ানমারের ‘সেপয়াঁ’, অর্থাৎ সিপাইরা যখন তাদের ক্ষেত আর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় তারও ভারতে চলে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।
তিন বাচ্চা মেয়ে আর সবচেয়ে ছোট দুই বছরের কোলের ছেলেকে নিয়ে অন্য গ্রামবাসীদের সঙ্গে মিলেই ভারতের দিকে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। তার স্বামী সেই দলে আসতে পারেননি, তিনি এখনও মিয়ানমারে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। এস্থার মিজোরামে বসে মাঝে মাঝে তার খবর পান, কখনও দু-তিনদিন পর পর, কখনও বা দুতিন সপ্তাহ কেটে যায়!
চিন স্টেটে অন্তত দুটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী-চিন ডিফেন্স ফোর্স ও চিন ন্যাশনাল আর্মি সে দেশের সেনা ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন চালাচ্ছে বহু দিন ধরেই। গত বছর থেকে সে দেশের গণতন্ত্রকামীরাও আর্মির বিরুদ্ধে নিয়মিত বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সেই সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউন ও নির্যাতন।
তবে চাম্পাইয়ের কাছে জোটে শরণার্থী শিবিরে বছর তিরিশের যুবক কোহ্ কোহ্ বলছিলেন, যে চিন বিদ্রোহীরা মিয়ানমারের সেনার বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে, তাদের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্কই ছিল না- তারপরও একদিন আর্মি এসে তাদের পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে যায়। মোবাইলে নিজের দোতলা মাটির বাড়ির ছবি দেখাচ্ছিলেন তিনি, যেটা এখন পুরোপুরি ছাই হয়ে গেছে। মাত্র দুই মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে সীমান্ত পেরিয়েছিলেন কোহ্ কোহ্-র স্ত্রী মেরেম, এখন তাদের বাচ্চার বয়স সবে এক বছর।
Posted ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৯ আগস্ট ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh