বাংলাদেশ ডেস্ক : | শনিবার, ২০ জুন ২০২০
নতুন বছর থেকে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও আইমেসেজের মতো বেশ কিছু সুবিধা নিয়ে চালু হতে যাচ্ছে আগামী প্রজন্মের মেসেজিংয়ের মানদণ্ড ‘রিচ কমিউনিকেশন সার্ভিসেস’ (আরসিএস)। একে সবার কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের চার টেলিকম প্রতিষ্ঠান এবং গুগল! বিস্তারিত কাজী ফারহান হোসেন পূর্বের কাছে ১৯৯২ সালে নেইল পাপওর্থের ‘মেরি ক্রিস্টমাস’ বার্তাটির মাধ্যমে ‘এসএমএস’ (শর্ট মেসেজ সিস্টেম)-এর যাত্রা বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়। কিন্তু দীর্ঘ ২৭ বছরে এই সিস্টেমটির তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। সেই ১৬০ বর্ণেই আটকে আছে এসএমএসের গণ্ডি। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে রিচ কমিউনিকেশন সার্ভিস (আরসিএস)। এটি চালু হলে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিংয়ের মতো সুবিধা পাওয়া যাবে। একটি টেক্সট মেসেজ তখন আর ১৬০ বর্ণে সীমাবদ্ধ থাকবে না। শুধু তা-ই নয়, ফেসবুক মেসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপে ও আইমেসেজের মতো গ্রুপ চ্যাট, হাই রেজল্যুশনের ছবি ও অডিও-ভিডিও পাঠানো যাবে।
এসএমএসের সীমাবদ্ধতা
মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান ‘জিএসএমএ’-এর তথ্যমতে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৪০০ কোটি মানুষের পছন্দের বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম হলো ‘এসএমএস’। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর ৯৭ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এটির ওপর নির্ভরশীল। তবে এসএমএসের একটা বড় অসুবিধা হচ্ছে, অপর প্রান্তে প্রাপক বার্তাটি দেখলেন কি না তা জানার কোনো নিশ্চয়তা নেই। উপায় নেই গ্রুপ চ্যাটের মতো কোনো সেবা পাওয়ার। তা ছাড়া আপনি যদি অ্যানিমেটেড স্টিকার ব্যবহার করে আপনার বার্তাটাকে আরেকটু সরস কিংবা আরো কার্যকর করতে চান, তারও কোনো সুযোগ নেই এতে। এসএমএসের মাধ্যমে পাঠাতে পারবেন না হাই রেজল্যুশনের ছবি কিংবা অডিও-ভিডিও। আবার দেশের বাইরে গেলে কিংবা মোবাইল সিগনাল না থাকলে টেক্সট মেসেজ আদান-প্রদানে চলে আসে বাড়তি ঝামেলা। আর ১৬০ বর্ণের সীমাবদ্ধতা তো আছেই!
আরসিএসের জন্ম
‘আরসিএস’ (রিচ কমিউনিকেশন সার্ভিসেস)-এর জন্ম কিন্তু বহু বছর আগেই। ২০০৭ সালে এটির উদ্ভাবন এবং এর পরের বছরই একে জিএসএম (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন) মানদণ্ডের আওতায় আনা হলেও সেলফোন ক্যারিয়ারের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং অন্যান্য বিভিন্ন বাধার কারণে তা মানুষের হাতে পৌঁছাতে পারেনি। এরপর আরসিএস নীরব ছিল প্রায় এক দশক ধরে। দীর্ঘ বিরতি শেষে ২০১৮ সালে গুগল ঘোষণা করে যে তারা আরসিএসকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে বিশ্বের সব গুরুত্বপূর্ণ সেলফোন ক্যারিয়ারের সঙ্গে কাজ করছে। আর এখান থেকেই জন্ম নিয়েছে আরসিএসভিত্তিক বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম ‘চ্যাট’, যা কি না শিগগিরই এসএমএসের স্থান দখল করতে যাচ্ছে!
কী আছে আরসিএসে?
‘আরসিএস’ অর্থাৎ ‘চ্যাট’ অনেকটা অ্যাপলের ‘আইমেসেজ’ এবং অন্যান মেসেজিং অ্যাপের মতো কাজ করলেও গুগল এতে রাখছে বেশ কিছু চমক, যেগুলো তারা এখনো খোলাসা করেনি। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ডিজিটাল ট্রেন্ডস থেকে জানা যায়, আরসিএসের মাধ্যমে আরো স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে গ্রুপ চ্যাট করা যাবে এবং সেই সঙ্গে পাঠানো যাবে ভালো মানের অডিও, ভিডিও মেসেজ, জানা যাবে প্রাপক মেসেজ দেখেছে কি না তার খবর। তা ছাড়া কেউ মেসেজের কী উত্তর দিচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে তাও দেখা যাবে এই সুবিধায়। এর মাধ্যমে নতুন কোনো ভ্রমণ সুবিধার খবর, টিকিট এবং বোর্ডিং পাসের লাইভ হালনাগাদও পাওয়া যাবে।
তা ছাড়া আরসিএস দিয়ে সিট বুকিং দেওয়া যাবে অবলীলায়। ব্যবসায়ীদের জন্যও এই মাধ্যমটিতে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় ফিচার। এতে থাকবে কোম্পানির লোগো এবং ভিডিওযুক্ত বার্তা পাঠিয়ে খুব সহজেই নির্দিষ্ট খদ্দেরদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ।
কিভাবে কাজ করবে?
প্রাথমিকভাবে আরসিএস অ্যানড্রয়েড মেসেজেস এবং স্যামসাং মেসেজেসে চালানো যাবে। এতে কিন্তু হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ প্রায় সব স্মার্টফোনেই থাকে অ্যানড্রয়েডের ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপ! তা ছাড়া আরসিএস-বান্ধব সফটওয়্যার প্রস্তুতিতে এলজিও শিগগিরই এগিয়ে আসছে। সফলভাবে আরসিএস পাঠানোর জন্য আরো কিছু শর্ত আছে। যেমনÑ বার্তা পাঠানোর জন্য আরসিএস সমর্থন করে এমন মোবাইল অপারেটর থাকতে হবে। যাকে পাঠাবেন তারও সে রকম একটা মোবাইল অপারেটরের সদস্য হতে হবে। অন্যথায় বার্তাটা সাধারণ এসএমএস হিসেবেই যাবে।
কবে আসছে?
গুগল এর মধ্যেই ৫৫টি ক্যারিয়ার এবং ১২টি স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সমর্থন পেয়ে গেছে। এমনকি তাদের সমর্থন তালিকায় মাইক্রোসফটের নামও আছে! প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘জেডডিনেট.কম’ থেকে জানা যায়, অ্যাপল এখনো আরসিএসকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন না জানালেও গুগলের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি প্রধান সেলফোন প্রতিষ্ঠান এটিএন্ডটি, টি-মোবাইল, স্প্রিন্ট এবং ভেরিজন ঘোষণা করেছে, তারা ২০২০ সালের মধ্যেই এসএমএসের বদলে ‘আরসিএস’ নিয়ে আসবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে শিগগিরই আরসিএস হতে যাচ্ছে আগামী প্রজন্মের মেসেজিংয়ের মানদণ্ড!
Posted ৭:৫৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২০ জুন ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh