বাংলাদেশ রিপোর্ট | বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪
বাংলাদেশ রিপোর্ট: নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান ও স্থায়ী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ক্ষুধার্ত লোকদের সারি প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে। গত রোববার সিটির বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা জ্যামাইকার হিলসাইডে নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবিক সাহায্য সংস্থা ‘ভালো’ নামের একটি নন-প্রফিট সংগঠনের দেওয়া বিনামূল্যে খাদ্য সংগ্রহকারীদের দীর্ঘ সারি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বেশ কয়েকটি ব্লক দীর্ঘ ছিল এই সারি এবং বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে জানার পর অনেকে বিতরণ শুরু হওয়ার ১৪ ঘন্টা আগে থেকে অপেক্ষা করছিল সারিতে । নিউইয়র্কের অনেক গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে খবরটি । স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘পিক্স ১১ নিউজ’ তাদের খবরে বলেছে যে, খাদ্য সংগ্রহের জন্য ক্ষুধার্ত মানুষের এই ভিড় প্রমাণ করে যে, নিউইয়র্ক সিটি জুড়ে আশেপাশের এলাকায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও ক্ষুধা বিরাজ করছে। ‘ভালো’র স্বেচ্ছাসেবী সামিরা তাহসিন চ্যানেল পিক্স ১১ নিউজকে বলেছেন, “সকলে ভাবে যে, আমেরিকা একটি বিশাল ও ধনী দেশ। অতএব, তাদের খাদ্য সহায়তার কোনো আবশ্যকতা নেই। কিন্তু আমি মনে করি, এটা সত্য নয়।” এলাকাটি যেহেতু মুসলিম অধ্যুষিত, সেজন্য রমজান মাস শেষে ১০ এপ্রিল বুধবার অনুষ্ঠিতব্য ঈদের আগে যেসব মুসলিমের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন তাদের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণের জন্য ‘ভালো’ এই উদ্যোগ নিয়েছিল।
বিনামূল্যে খাদ্য সংগ্রহের জন্য সারিতে অপেক্ষমান ছিল আনুমানিক ১,৫০০ লোক। তাদের একজন ছিলেন কুইন্সের বাসিন্দা রাজ্জাক মোহাম্মদ। দোভাষীর মাধ্যমে তিনি পিক্স ১১ নিউজকে বলেন যে, তার আয় খুব সামান্য এবং বিনামূল্যে বিতরণ করা খাদ্য সংগ্রহ করতে পারলে তার এবং তার পরিবারের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে। চ্যানেল পিক্স ১১ নিউজ বলেছে, নিউইয়র্ক সিটিতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার রূঢ় বাস্তবতা হলো যে, আগে যেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সিটির বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হতো, এখন অনেক স্থানে তা প্রাত্যহিক বিতরণে প্রসারিত হয়েছে। ‘ভালো’ হেরাল্ড স্কোয়ারে প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনেরও বেশি হোমলেস লোক এবং অন্যদের খাদ্য সহায়তাসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করে। এ সংগঠনটি নন-প্রফিট সংস্থাগুলোর ক্রমবর্ধমান নেটওয়ার্কের অংশ, যারা করদাতাদের অর্থে দরিদ্র মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে। ‘ভালো’র অপারেশন ডাইরেক্টর জে, রহমান বলেছেন, ‘ভালো’র মত আরো বেশ কিছ ু কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠন প্রায়ই স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা মূল্যায়ন করে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য বিতরণ করে থাকে, যেসব খাদ্য তারা খেতে অভ্যস্ত। জে, রহমান আরো বলেছেন, ‘“আমাদের কমিউনিটির লোকজন নির্দিষ্ট ধরণের খাবার খেতে অভ্যস্ত। সেজন্য তারা টিনজাত কোনো খাবার নিচ্ছে না। আমাদের এমন ধরণের খাবার প্রয়োজন, যা আমাদের কমিউনিটির সদস্যদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। আমাদের লোকজন যেসব খাবার খেয়ে অভ্যস্ত নয়, সেগুলো বিতরণ করা হলে তা অপচয় হবে ভেবে, যাতে অপচয় রোধ করা যায়, আমরা সেদিকে খেয়াল রাখি। নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানে উইলিয়ামস, যিনি খাদ্য বিতরণ উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বলেছেন যে, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে তিনি খাদ্য সংগ্রহকারীদের দীর্ঘ লাইনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তিনি বলেন, আমি বলতে চাই যে, সিটিতে এসাইলাম আবেদনকারীরা আসার আগে থেকেই এটি একটি সমস্যা ছিল। মানুষের দীর্ঘ সারি দেখাটা বিরক্তিকর। প্রতি উইকএন্ডে আমরা সিটিজুড়ে মানুষের এমন লাইন দেখতে পাই।সংগৃহী
ঈদের আগে ‘ভালো’র খাদ্য বিতরণ
নিউইয়র্ক ভিত্তিক অলাভজনক সামাজিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশী আমেরিকান হিউম্যানেটেরিয়ান এইড লিডারশাপ আউটরিচ- “ভালো” ঈদুল ফিতরের আগে অতীতের ধারাবাহিকতায় প্রায় আটশ’ লোকের মাঝে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করেছে। জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউয়ে ‘ভালো’ অফিসের সামনে গত ৬ এপ্রিল দুপুরে খাবার সংগ্রহ করতে ভিড় জমায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী। ১৬৮ স্ট্রিট থেকে ১৭৩ স্ট্রিট পর্যন্ত গোটা সাইডওয়াক চলে যায় খাদ্য সংগ্রহকারীদের দখলে। খাবার বিতরণের খবর স্থানীয় কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়লে পূর্বরাত ১০টা থেকে মানুষ লাইনে দাঁড়াতে শুরু করে এবং অব্যাহত থাকে বেলা ২টা পর্যন্ত। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে দীর্ঘ ১৪/১৫ ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে খাদ্য সংগ্রহ করেন বাংলাদেশীরা। নিউইয়র্ক সিটির উর্ধতন জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে সংগঠনটির প্রায় অর্ধশত স্বেচ্ছাসেবক বিতরণ কাজে অংশ নেন। এসময় ‘ভালো’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি তদারক করেন। ভালো’র খাদ্য তালিকায় ছিল চাল, তেল, পিয়াজ, চা, চিনি, সেমাই, নুডুলস, বিস্কুট, চিপস প্রভৃতি। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এর উদ্বোধন করেন নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক এডভোকেট জুমানী উইলিয়াম। এসময় সিটি কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান, সিটির মেয়র অফিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর বাসার সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা ভালো পরিচালিত সিনিয়র সিটিজেন সেন্টারে সংগঠনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। ভালো’র প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার রহমানের নেতৃত্বে সংগঠনের কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবীরা উল্লেখিত মানুষের মাঝে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করেন।
উল্লেখ্য নিউইয়র্ক সিটিতে করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে দেখা দিলে সাধারণ মানুষের মাঝে খাবার ও স্বাস্থ্য রক্ষা সামগ্রী পৌছে দিতে রাস্তায় নামেন ভালো’র একদল তরুণ। করোনাকালে একদিনও ঘরে বসে থাকেনি তারা। “মানুষ মানুষের জন্য” এ শ্লোগান সামনে রেখে জীবনের মায়া পেছনে ফেলে রাস্তায় নেমে আসেন। এজন্য একটি খাবারের ট্রাকও ক্রয় করা হয়। ভালো’র মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচী অব্যাহত রাখা হয়েছে। নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন কমিউনিটির এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোই অলাভজনক এ সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য।
Posted ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh