শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪ | ১৬ কার্তিক ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি বীর মুক্তিযোদ্ধারাও

মুজিবুলের ‘পেটুয়া বাহিনী’র হাতে ২০ বছরে ১৯ খুন

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

মুজিবুলের ‘পেটুয়া বাহিনী’র হাতে ২০ বছরে ১৯ খুন

মুজিবুল হক মুজিব

কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মুজিবুল হক মুজিব। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৮৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আটবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচবার। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো এমপি হন মুজিবুল হক। এরপর থেকে তিনি নির্বাচনী এলাকায় বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের দমন শুরু করেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। তাঁর ‘পেটুয়া বাহিনী’র হাত থেকে রক্ষা পাননি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নিজ দলের কর্মীরাও। এই বাহিনীর হাতে গত ২০ বছরে বিরোধী ও নিজ দলের অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন দল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

একাধিক সূত্র বলছে, ২০১৪ সালে রেলপথমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন মুজিবুল হক। পছন্দের ব্যক্তিদের তিনি কাজ পাইয়ে দিতেন। বিনিময়ে ১০ শতাংশ করে কমিশন নিতেন। এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীরাও বলছেন, পকেট কমিটি তৈরি করে দলের সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন এই নেতা। দলের স্থানীয় মনোনয়ন-বাণিজ্য এবং চাকরিতে নিয়োগ ও বদলিও ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সাবেক এই এমপি সপরিবারে আত্মগোপনে। এরই মধ্যে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার ধানমন্ডি ও কুমিল্লার কোতোয়ালিতে দুটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঘুমন্ত আট বাস যাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়।

পেটুয়া বাহিনীর হাতে নিহত

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে কথা বললে তাঁর ‘পেটুয়া বাহিনী’ দিয়ে তাঁদেরকে শায়েস্তা করতেন। ওই বাহিনীর হাতে নিহত হন জামায়াতের নেতা নাইম উদ্দিন মুরাদ, সাহাবউদ্দিন পাটোয়ারী, রুহুল আমিন দুলাল, আবদুল আজিজ, আলাউদ্দিন, আবদুল কাইয়ুম বাচ্চু মিয়া, ইব্রাহিম চৌধুরী মঞ্জু, মো. গিয়াসউদ্দিন, ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, হাফেজ কুতুবউদ্দিন ও হাজী সুরুজ মিয়া। এমনকি নির্যাতনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগের নেতা জামালউদ্দিন ওরফে বাক্কা জামাল, ইউপি সদস্য নুরুল আলম, ছাত্রলীগ নেতা শাকিল, যুবলীগ নেতা আলমগীর, আবুর হোসেন, জসিম উদ্দিন ও আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে রানা মারা যান।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, একসময়ে মুজিবুল হকের বিরোধিতা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস ছোবহান ভূইয়া হাছান, পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান এবং উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শাহ জালাল মজুমদার। এর জেরে ২০২৩ সালের ৬ জুন চৌদ্দগ্রামে তাঁর বাহিনী দলের প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ জালাল মজুমদার বলেন, ‘২০২১ সালে ইউপি নির্বাচনে মুজিবুল হকের পছন্দের ইউপি সদস্যকে যেকোনোভাবে বিজয়ী করতে না পরায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার ওপরে কয়েকবার হামলা চালান। ইউপি কার্যালয়ে তাঁরই নির্দেশে পেটুয়া বাহিনী তালা ঝুলিয়ে দেয়। দুই বছর আমাকে চৌদ্দগ্রামে প্রবেশ করতে দেননি।’

ওই যুবলীগ নেতা আরও বলেন, মুজিবুল হক নিজ হাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। প্রতিটি টেন্ডার থেকে তিনি ১০ শতাংশ হারে কমিশন নিতেন। তাঁর কথার অবাধ্য হলে নির্যাতন করা হতো।

পেটুয়া বাহিনীর দায়িত্বে যাঁরা

মুজিবুল হকের পেটুয়া বাহিনীতে ছিলেন উপজেলার কাশিনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, তাঁরই আত্মীয় লোকমান হোসেন রুবেল, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আরশ মজুমদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মতিউর রহমান জালাল, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আহাম্মদ খোকন ও গুণবতী ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা।

বিরোধীদের দমন ও নির্যাতন

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৬ জুন দলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। প্রতিপক্ষকে দমনে মুজিবুল হকের বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চড়াও হয় বিরোধীদের ওপর। ওই অস্ত্রধারীদের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও মুজিবুল হকের প্রভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি পুলিশ। বীর প্রতীক বাহার রেজা বলেন, ‘২০২৩ সালের ৬ জুন প্রতিপক্ষের সমাবেশ উপলক্ষে কুমিল্লা থেকে চৌদ্দগ্রামে যাওয়ার পথে আমাকে তাঁর সশস্ত্র ক্যাডাররা ধরে নিয়ে মারধর করে। পানি খাইতে চাইলে তারা আমাকে জোর করে প্রস্রাব খাওয়ায়।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু বলেন, ‘আমি মুজিবুল হকের বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় কায়েকবার আমার বাড়িঘরে হামলা করেছে। আমাকেও মারধর করেছে তার পেটুয়া বাহিনী।’

দলের পকেট কমিটি

চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, ‘মুজিবুল হক কখনো দলীয় ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করতেন না। রাজনীতিতে জুনিয়র ও পছন্দের লোকজনকে তিনি দলীয় পদে বসাতেন। আমি এর প্রতিবাদ করলে তিনি আমাকে দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন এবং আমাকে দলের কোনো পদেই রাখেননি।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস ছোবহান ভূইয়া হাছান বলেন, সাবেক এমপি মুজিবুল হক মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে অনেক বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। দলীয় বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন। সম্মেলন না করেই তিনি তাঁর ঘরে বসে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন করে, সেখানে তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদেরকে বসাতেন।

স্থানীয় নির্বাচনে মনোনয়ন-বাণিজ্য

চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারলে তাঁদেরকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন দিতেন না মুজিবুল হক। ২০১৬ ও ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। আবার মনোনয়নবঞ্চিতরা তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললে পেটুয়া বাহিনী দিয়ে দমন করতেন বলে দলের নেতারাই বলছেন।

মুজিবুল হক ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদ

মন্ত্রী থাকাকালে ২০১৮ সালে মুজিবুল হকের বার্ষিক আয়সহ সম্পদ ছিল ২ কোটি ৮৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৭ টাকার। আর স্ত্রী হনুফা আক্তার রিক্তার ছিল ২ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৩ টাকার সম্পদ। ২০২৩ সালে মুজিবুলের সম্পদ দাঁড়ায় ৪ কোটি ৬৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৯ টাকায়। স্ত্রীর সম্পদ হয় ৪ কোটি ৬৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৯ টাকা। সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র : আজকের পত্রিকা

Posted ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: weeklybangladesh@yahoo.com

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.