শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ | ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন এনেছে কানাডা, বিপদে অস্থায়ী অনুমতি পাওয়া অভিবাসীরা

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন এনেছে কানাডা, বিপদে অস্থায়ী অনুমতি পাওয়া অভিবাসীরা

ছবি : সংগৃহীত

টরন্টোর পিয়ারসন বিমানবন্দর থেকে শহরে গেলে একজন উবারচালক ভালোই আয় করতে পারেন। কিন্তু ১৯ সেপ্টেম্বর সাচিনদীপ সিংয়ের ভাগ্যটাই খারাপ ছিল। কয়েক মাইল যাওয়ার পরই তাঁর উবার অ্যাপ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ওই দিন মধ্যরাতেই সাচিনদীপ সিংয়ের কাজের অনুমতি শেষ হয়ে যায়। কানাডার কর্তৃপক্ষ যেমন তাঁকে নোটিশ দিয়েছিল, উবারও তেমনি তাঁকে নোটিশ দিয়ে দেয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত থেকে ২৩ বছর বয়স্ক সাচিনদীপ সিং কানাডায় এসেছিলেন শিক্ষার্থী ভিসায়। এখন তাঁর বয়স ২৩। যে ভিসায় তিনি এসেছিলেন, তার আওতায় তিনি কাজ খোঁজার সুযোগ পেয়েছেন। কাজ পেলে স্থায়ীভাবে থাকারও সুযোগ আছে। ‘পড়াশোনা-কাজ-বসবাস’ নামে এ অভিবাসনসুবিধা পরিচিত।

কিন্তু অর্থনীতি চাঙা করতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লাখ লাখ মানুষকে কানাডায় স্বাগত জানিয়ে সরকার এখন নতুন পথে হাঁটতে চাইছে। দেশটিতে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ, এই অভিবাসন বিভিন্ন ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে আবাসন, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য খাতে নতুন অভিবাসীদের জন্য সুযোগ-সুবিধার সংস্থান রাখতে হচ্ছে। কানাডায় অস্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি–সংক্রান্ত যে বিশাল কর্মসূচি রয়েছে, চলতি বছর তাতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে সাচিনদীপ সিংয়ের মতো হাজারো অভিবাসী আইনি ঝামেলায় পড়ে গেছে।

নীতিতে পরিবর্তন

কানাডায় স্থায়ী হওয়ার একটি পথ ছিল শিক্ষার্থী হিসেবে এসে গ্র্যাজুয়েশনের পর কাজ খুঁজে নেওয়া। অন্য একটি পথ হলো চাকরি নিয়ে দেশটিতে আসা। এই দুই পথেই সবচেয়ে বেশি অভিবাসী কানাডায় এসেছেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তাঁরা স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পেয়েছেন। আর সর্বশেষ পথটি হলো আশ্রয়প্রার্থী হয়ে দেশটিতে থাকা।

করোনাভাইরাস মহামারির পর কানাডায় শ্রমিকসংকটের কারণে দেশটির কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের অস্থায়ীভাবে দেশটিতে থাকার অনুমতি দেয়। দেশটিতে যে ৩০ লাখ মানুষের কোনো না কোনো ধরনের অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি আছে, তাদের ২২ লাখই এসেছেন গত দুই বছরে। কানাডার জনসংখ্যা ৪ কোটি ১৩ লাখ। এর ৬ দশমিক ৮ শতাংশই অস্থায়ী বসবাসকারী, যে হার ২০২২ সালে ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

কানাডায় এখনো যথেষ্ট কর্মসংস্থান হচ্ছে না। দেশটিতে বেকারত্বের হার ৬ শতাংশ। এ হার কমাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। আর অস্থায়ী ভিত্তিতে যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁদের মধ্যে বেকারত্বের হার আরও বেশি—১৪ শতাংশ। বেশির ভাগ শহরে আবাসনের সংকট রয়েছে। আর স্বাস্থ্যসুবিধাও অনেক প্রদেশে চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

সমালোচকেরা বলছেন, অস্থায়ী ভিত্তিতে বসবাসকারীরা পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন করে তুলেছেন। অভিবাসনের প্রতি জনমতও দিনে দিনে তেতো হচ্ছে। এর ফলাফল হিসেবে অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার চলতি বছরের শুরুতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর একটি হলো, শিক্ষার্থী ভিসার সংখ্যা কমিয়ে আনা। আরেকটি পদক্ষেপ হলো, একটি কোম্পানি সর্বোচ্চ কতজন অস্থায়ী বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ করতে পারবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া। এসব পদক্ষেপের মূল লক্ষ্যই হলো অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনা। সরকারি এসব পদক্ষেপের ফলে যেসব অস্থায়ী শ্রমিকের কাজের অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়েছে বা শেষ হতে চলেছে, তাঁদের সেই অনুমতির নবায়ন না–ও হতে পারে। এরাই সবাই সাচিনদীপ সিংয়ের মতো অস্থায়ীভাবে কানাডায় বাস করছেন। অভিবাসনে বিধিনিষেধ আরোপ করে আগামী মাসে সরকার আরও কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করবে বলে কথা রয়েছে।

কানাডার প্রতি ৫ জন বাসিন্দার ১ জন বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। বেশ অনেক দিন ধরেই বিদেশি অভিবাসীদের জন্য কানাডার দরজা খোলা। শ্রমের সংকট কাটিয়ে ওঠা ও জনসংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দেশটি অভিবাসনকে উৎসাহিত করেছে। তবে পরিস্থিতি এখন পাল্টাচ্ছে।

জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ কানাডিয়ান মনে করেন, সরকার খুব অল্প দিনের মধ্যে খুব বেশিসংখ্যক অভিবাসীকে সে দেশে আসার অনুমতি দিয়েছে। আগস্টে পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে, দুই-তৃতীয়াংশ কানাডিয়ানই মনে করেন যে সরকার বর্তমান অভিবাসন নীতিমালার কারণেই বিপুলসংখ্যক মানুষ কানাডায় আসার সুযোগ পাচ্ছেন।

অনেক অভিবাসী অবশ্য মনে করেন, তাঁদের অন্যায্যভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, তাঁদের কানাডায় ডেকে আনা হয়েছে, কিন্তু কাজের অনুমতির নবায়ন না হলে তাঁদের চলে যেতে হবে—এমন পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।

কানাডায় অভিবাসন নিয়ে এখন যা চলছে, তা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অভিবাসনের চিত্র তুলে ধরছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কমলা হ্যারিসও তাঁর পার্টির আগের অবস্থানের চেয়ে কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন। ইউরোপের অনেক দেশে অভিবাসনবিরোধী কট্টর রাজনৈতিক দল, এমনকি বর্ণবাদী দলের উত্থান হচ্ছে। কানাডায় অনেক বিশেষজ্ঞ অবশ্য মনে করেন, দেশটিতে আবাসন ও স্বাস্থ্য সুবিধার যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তার জন্য অভিবাসীদের দায়ী না করে বরং এই দুই খাতে সরকারের স্বল্প বিনিয়োগের দিকে নজর ফেরানো দরকার।

পড়াশোনা-কাজ

কানাডার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা অভিবাসনের ক্ষেত্রে আরও বেশি নমনীয় নীতি নিতে চায়। এর মানে হলো, যখন শ্রমিক দরকার হবে, তখন অভিবাসী আসার সুযোগ দেওয়া হবে। দেশটির কর্মসংস্থানমন্ত্রী র‍্যান্ডি বয়সোনল্ট বলেন, ‘এটা অনেকটা অ্যাকর্ডিয়নের মতো কাজ করবে। যখন অনেক বেশি কর্ম খালি থাকবে, তখন আমরা বেশি করে মানুষ আনব। আর অর্থনীতির অবস্থা ভালো না থাকলে লোক আসা কঠিন হবে।’

কিন্তু সাচিনদীপ সিংয়ের মতো ভারতীয়রা কাজের অনুমতি হারিয়ে এখন বেশ বিপদে রয়েছেন। তিনি ও তাঁর পরিবার ৩০ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় করেছেন অফিস ব্যবস্থাপনা ও অতিথিসেবা বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়ার জন্য। ভেবেছিলেন, এই ডিগ্রি তাঁকে কানাডায় একটি ভালো অবস্থান গড়তে সাহায্য করবে। কিন্তু এখন তাঁকে অন্য বিকল্পের কথা ভাবতে হচ্ছে।

সাচিনদীপ আবার কলেজে ফিরে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে আরও বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। কিছু মানুষ বেআইনিভাবে বাস করছেন, আর ক্লিনার বা রেস্তোরাঁয় কাজ করে খুব অল্প বেতন নিয়ে জীবন চালাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার অপরাধীদের খপ্পরে পড়েন। অনেকে যোগ্য না হলেও আশ্রয় প্রার্থনা করেন।

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ১৩ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। গত বছরের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল এর অর্ধেক। অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ঘটনা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে বলে দেখা গেছে।

Posted ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.