বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০
নিউইয়র্কের রেস্টুরেন্টগুলোর ইনডোর ডাইনিং সার্ভিস ভেতরে বসে খাবার খাওয়ার ওপর দ্বিতীয়বারের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ায় নতুন করে কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণা দেন ১১ ডিসেম্বর। অর্থাৎ রেস্টুরেন্টগুলোর বাইরে খাবার গ্রহণ বা বেচা-কেনার ব্যবস্থা থাকলেও ভেতরে বসে একেবারেই খাবার খাওয়া যাবে না। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ইনডোর ডাইনিংয়ের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে। করোনা সংক্রমণের শুরুর ধাপে নয় মাস আগে নগরের অন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ হয়ে যায় রেস্টুরেন্ট ও বার। পরে রেস্টুরেন্টগুলোর ইনডোর ডাইনিং বন্ধ রেখে শুধু ক্যাটারিং বা টেক আউট ব্যবস্থা চালু রাখে। জুনের শেষে সীমিত আকারে আবার চালু করা হয় আউটডোর ডাইনিং সার্ভিস। শীতের আগে আগেই যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে। নিউইয়র্কের পরিস্থিতি ক্রমে খারাপ হতে থাকে গত অক্টোবর মাসের শেষ থেকে। নভেম্বরে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনমন হতে থাকে।
ফলে নতুন করে এই কড়াকড়ি আরোপ করা হলো। তবে নতুন করে এই কড়াকড়ি আরোপকে নিজেদের ব্যবসার জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে মনে করছেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে অ্যান্ড্রু কুমো বলেন, ‘যদি কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এই পরিস্থিতির কারণে ভাড়া দিতে না পারে, তবে তাদের উচ্ছেদ করা হবে না।’ এদিকে নিউইয়র্ক মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বলেছেন, ‘করোনা রোগীর হাসপাতালে ভর্তির হার দেখে এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, আমরা এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রবেশ করেছি। নগরের কিছু কিছু এলাকায় অপ্রত্যাশিতভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।’ নিউইয়র্ক স্টেটের অন্যান্য এলাকায় সংক্রমন বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে সেসব এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা হবে। সেক্ষেত্রে ইনডোর ডাইনিং সার্ভিস ৫০শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
এদিকে ইনডোর ডাইনিং সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার গভর্নরের ঘোষণায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে রেস্টুরেন্ট মালিকদের মাঝে। নিউইয়র্ক স্টেট রেস্টুরেন্ট এসোসিয়েশন এবং নিউইয়র্ক সিটি হসপিটালিটি এ্যালায়েন্স পৃথক প্রতিক্রিয়ায় গভর্নর ক্যুমোর সমালোচনা করেছে। তারা এধরণের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেন। তারা বলেন, করোনা মহামারিতে বিগত অভিজ্ঞতা বলে ইনডোর ডাইনিং নয় বড় “প্রাইভেট লিভিং রুম” থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমনের প্রসার ঘটে। করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধিতে রেস্টুরেন্ট সম্পূর্নভাবে বন্ধ করে দেয়ায় গভর্নরের পরিকল্পনারও সমালোচনা করে সংগঠন দু’টো। তারা বলেন, ম্যানহাটান বা সিটির অন্যান্য কাউন্টিতে মহামারির এমন কোন বিস্তার ঘটেনি যে এখনই ইনডোর ডাইনিং বন্ধ করতে হবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমনের শুরুতে ৯মাস পূর্বে সিটির অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ হয়ে যায় রেস্টুরেন্ট ও বার সমূহ। পরবর্তীতে রেস্টুরেন্টগুলো ইনডোর ডাইনিং বন্ধ রেখে শুধু ক্যাটারিং বা টেক আউট ব্যবস্থা চালু রাখে। জুনের শেষে সীমিত আকারে চালু করা হয় আউটডোর ডাইনিং সার্ভিস। এ পর্যায়ে সিটির প্রায় ২৬ হাজার রেস্টুরেন্টের মধ্যে ৭হাজার রেস্টুরেন্ট আবেদন করে আউটডোর ডাইনিং সার্ভিসের জন্য। লকডাউন শেষে স্বাভাবিকতায় ফিরে আসার তৃতীয় ধাপে সেপ্টেম্বর মাসে অনুমতি মিলে সীমিত আকারে ইনডোর ডাইনিং সার্ভিস চালু করার।
করোনাভাইরাসে নিউইয়র্কে ব্যাপক প্রাণহানির তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং ভীতিকর স্মৃতি এখনো তাড়া করছে মানুষকে। বিষয়টি বিচলিত করে তুলেছে সিটি ও রাজ্য প্রশাসন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই অনিচ্ছাসত্বে ব্যবসায় ক্ষেত্রে নানাবিধ জরুরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হচ্ছে গভর্নর কুম্যোর সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিওকে। গভর্নর ক্যুমো গত ৭ ডিসেম্বর সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রয়োজনে পুনরায় রেস্টুরেন্টের ইনডোর ডাইনিং সার্ভিস বন্ধের কথা জানান। অপরদিকে কোন এলাকায় আগামী ৩ সপ্তাহে হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার মধ্যে ৯০ শতাংশ রোগী ভর্তি হলে সেসব এলাকার রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ক্যুমো বলেন, ফেডারেল সরকারের নির্দেশনা বর্ণিত আছে রেস্টুরেন্টের অভ্যন্তরে বসে খাবার গ্রহণের মধ্যে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি অত্যন্ত প্রবল। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা এধরণের নির্দেশনাকে ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় ধরণের হুমকি বলে মনে করছেন। এমতাবস্থায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদেরকে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া না হলে রেস্টুরেন্ট মালিক ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জীবন ভয়াবহ সংকটে পড়বে। এদিকে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর অবস্থান বেছে নেয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। গভর্নর বলেন, শুধু নিউইয়র্কই নয় অন্যান্য স্টেটেও করোনার হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে এ ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কর্তৃপক্ষ। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বাঁচিয়ে রাখতে ফেডারেল সরকারের আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন গভর্নর। মানুষের জীবনকে নিরাপদ করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরণের মহামারি থেকে নিরাপদে থাকা সম্ভব নয়।
Posted ৩:৪০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh