বাংলাদেশ ডেস্ক : | শনিবার, ২০ জুন ২০২০
মহামারি করোনায় শীর্ষ সংক্রমণ ও মৃত্যু, অর্থনীতির বেহাল দশা এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সময়টা ভালো যাচ্ছে না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এর মধ্যেই তার দুঃশ্চিন্তা বাড়িয়েছেন সাবেক ঘনিষ্ঠ সহচর জন বোল্টন। অপ্রকাশিত বইতে বোল্টন ট্রাম্প প্রশাসন বিশেষ করে ট্রাম্পের এমন সব তথ্য প্রকাশ করেছেন—যা রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বইটিতে বোল্টন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তুলে ধরেছেন একজন অজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে, যার সাধারণ ভূ-রাজনৈতিক বিষয়ে জ্ঞানের অভাব রয়েছে এবং যিনি বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই নেন নির্বাচনে আবার জিতে আসতে হবে এই তাড়না থেকে। খবর :সিএনএন ও বিবিসির।
‘দ্য রুম হোয়্যার ইট হ্যাপেনড’ নামের অপ্রকাশিত এই বইয়ের কিছু অংশ মার্কিন সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করেছে। যাতে দেখা যায় বোল্টন প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে মারাত্মক কিছু দাবি করেছেন। এমনকি ট্রাম্পের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কাজে প্রশাসনের অনেকেই তার পেছনে হাসাহাসি করেছেন বলে লিখেছেন তিনি।
বইতে বোল্টন লিখেছেন, বিশ্বের স্বৈরশাসকদের পক্ষেই অবস্থান প্রেসিডেন্ট টাম্পের। দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাহায্য চেয়েছিলেন তিনি। ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করলেও তিনি চেয়েছিলেন চীন মার্কিন কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য কিনুক। মুসলিম উইঘুরদের চীনের বন্দিশিবিরে আটকে রাখার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকরা স্বোচ্চার হলেও এ বিষয়ে ট্রাম্পের কোনো সমস্যা ছিল না। বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকায় তিনি চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপেও রাজি ছিলেন না।
শুধু চীনা নেতাই একমাত্র একনায়ক নন, আরো অনেকের প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সমর্থন দিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১৮ সালে তুরস্কের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমেরিকায় যখন তদন্ত চলে, তখন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ানকে তিনি সাহায্য করার প্রস্তাব দেন। ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের যে অভিযোগ এনেছিল এই বইয়ে তা সমর্থন করেছেন বোল্টন। তবে বইয়ে ডেমোক্র্যাটদের সমালোচনা করে বলেছেন, শুধু ইউক্রেনের বিষয়টি সামনে এনে তারা ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করেছে। তারা তদন্তের পরিসর আরো ব্যাপক করলে ট্রাম্পকে আইনত ক্ষমতা থেকে অপসারণে আরো অনেক বেশি আমেরিকানের সমর্থন পেতেন।
বইতে বোল্টন লিখেছেন, ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে চান। ট্রাম্প চীনা নেতাকে বলেছিলেন যে, তিনি যাতে দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে মার্কিনিরা খুবই আগ্রহী। বোল্টন লিখেছেন, ট্রাম্প জানতেন না যে যুক্তরাজ্য পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র। ২০১৮ সালে ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের সঙ্গে এক বৈঠকে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রিটেনকে পরমাণু শক্তিধর দেশ বলে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প উত্তর দেন, ওহ, আপনার দেশে পরমাণু অস্ত্র আছে বুঝি? বোল্টন লিখছেন, তিনি মজা করে একথা বলেননি।
বোল্টন লিখেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ট্রাম্পের অত্যন্ত বিশ্বস্ত। কিন্তু তিনিও ট্রাম্পকে নিয়ে বাজে কথা বলতে ছাড়েননি। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে কোনো চুক্তি সিনেটে অনুসমর্থিত হবে। এ কথা শুনে পম্পেও বলেছিলেন, তিনি একজন ‘ফুল অব শিট’।
বোল্টন লিখেছেন, রুজভেল্ট রুম কিংবা ওভাল অফিসের সাপ্তাহিক বৈঠকগুলো ছিল সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বদলে কলেজে খাবারের জন্য যুদ্ধ করার মতো। রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ কখনোই পছন্দ করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। হেলসিংকিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে ট্রাম্প প্রশ্ন করেছিলেন যে, ফিনল্যান্ড কি রাশিয়ার অংশ?
ভেনেজুয়েলায় যখন প্রেসিডেন্ট মাদুরোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামে তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলতে থাকেন ভেনেজুয়েলা সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রের অংশ। তিনি বারবার ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের কথা বলেন। গত বছরের মার্চে পেন্টাগনে এক বৈঠকে তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান এবং ইরাকে রয়েছে? তারা কেন ভেনেজুয়েলায় নয়? ২০১৮ সালে ন্যাটোর এক শীর্ষ বৈঠকে ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেন যে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো থেকে বেরিয়ে যাবে। তিনি বলেন, যারা অর্থ দেয় না তাদের পক্ষে আমরা থাকব না।
এমন আরো অনেক ঘটনার তথ্য উঠে এসেছে বোল্টনের বইতে। যে কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বোল্টনকে বিশ্বাসঘাতক বলে মন্তব্য করেছেন। বোল্টনের বইটি ২৩ জুন প্রকাশ হবার কথা রয়েছে। যদিও বইটি যাতে প্রকাশিত না হয় সেজন্য মামলা করেছে মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়। তবে বোল্টন এই মামলা খারিজ করে দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। সরকার এমনটা করতে পারে না, কারণ এতে আমার ‘ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট রাইটস’ লঙ্ঘিত হবে।
Posted ৬:৪৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২০ জুন ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh