বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০
নিউইয়র্ক ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে ইউএস কংগ্রেস গ্রেস মেম্বার পদে পুণরায় নির্বাচিত হয়েছেন গ্রেস মেং, গ্রেগরি মিক্স ও আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও। গত ২৩ জুন বিভিন্ন কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্টে অনুষ্ঠিত প্রাইমারিতে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এসব প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। প্রতি দু’বছর অন্তর অনুষ্ঠিত ইউএস হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩ নভেম্বর। তার আগে নিজ দলের অভ্যন্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হন অনেক প্রার্থী। উল্লেখ্য, ডেমক্র্যাটিক অধ্যুষিত নিউইয়র্কে কংগ্রেশনাল এসব ডিস্ট্রিক্ট থেকে যারা প্রাইমারিতে বিজয়ী হয়েছেন ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে তারা রিপাবলিকান প্রার্থীর সাথে লড়াই করলেন। তারাই চূড়ান্তভাবে জয় লাভ করবেন।
এবারের ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে কংগ্রেস মেম্বার, নিউইয়র্ক স্টেট এসেম্বলি ও অন্যান্য পদে ডজন খানেক বাংলাদেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তাদের কেউ কামিয়াবি হতে পারেননি। নিউইয়র্কের অনেকগুলো কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্টে প্রাইমারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশিদের দৃষ্টি ছিলো গ্রেস মেং, গ্রেগরি মিক্স ও আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিওর দিকে। বাংলাদেশি কমিউনিটির সাথে এসব প্রার্থীদের রয়েছে চমৎকার সম্পর্ক। কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং পুনরায় প্রার্থী হন তার নিজ কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৬ থেকে। প্রাইমারিতে দু’জন প্রার্থী তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও পুননির্বাচিত হয়েছেন গ্রেস মেং। তিনি পেয়েছেন ৬২ শতাংশ ভোট। অপর দিকে তার নিকটতম প্রার্থী মি. গ্যাগারিন পেয়েছেন ২১ শতাংশ ভোট। কংগ্রেসম্যান দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৫ এর প্রতিনিধিত্ব করছেন।
২৩ জুন মঙ্গলবারের প্রাইমারিতে ৭৮ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনঃনির্বাচিত হন কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিক্স। তার প্রতিদ্বন্দ্বি বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সানিয়াত চৌধুরী পেয়েছেন ২২ শতাংশ ভোট। অপর দিকে এ সময়ের আলোচিত কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ দ্বিতীয়বারের মতো প্রার্থী হয়ে প্রাইমারিতে বিজয়ী হয়েছেন। নিউইয়র্ক কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট ১৪ থেকে ৭৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি এনএবিসি টিভির এ্যাঙ্কর মিশেল কারবেরা পেয়েছেন ১৯.৫ শতাংশ ভোট। এই আসনে বাংলাদেশি প্রার্থী বদরুন খান পেয়েছেন ৫.৪ শতাংশ ভোট। কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৯ থেকে পুণরায় নির্বাচিত হয়েছেন ইভেন্ট ক্লার্ক।
জিততে পারেনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত প্রার্থীরা
এদিকে বার্তা সংস্থা ইউএনএ জানায়, ২৩ জুন প্রাইমারি নির্বাচনে হেরে যান বদরুন খান মিতা, সানিয়াত চৌধুরী, মেরী জোবায়দা, মাহফুজ ইসলাম, জয় চৌধুরীসহ বাংলাদেশী প্রার্থীরা। যদিও চুড়ান্ত ফলাফল পেতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে। কেননা অ্যাবসেন্টি ভোট গণনা এখনো বাকি রয়েছে। তবে মঙ্গলবারের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রার্থীদের মধ্যে কমিটিওম্যান পদে জামিলা আক্তার উদ্দিন এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তার জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই। এদিকে নির্বাচনে বরাবরের মতো ভোটার উপস্থিতির সংখ্যা কম থাকলেও এবার বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রার্থীর সংখ্যা অংশ নেয়ায় কমিউনিটির অংশগ্রহণ ছিলো লক্ষ্যণীয়। নির্বাচনে ইউএস কংগ্রেসে ২জন, স্টেট অ্যাসেম্বলিতে ৩জন বাংলাদেশী-আমেরিকান এবং ডিস্ট্রিক্ট লিডারসহ বিভিন্ন পদে অন্তত ১৫জন অংশ নেন। এর আগে নিউইয়র্ক থেকে এতো সংখ্যক বাংলাদেশী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি এবং নতুন প্রজন্মের এতো প্রার্থীও দেখা যায়নি।
এদিকে করোনাভাইরাস জনিত প্রেক্ষাপটে ভিন্ন পরিস্থিতিতে এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় বোর্ড অব ইলেকশন অফিস অ্যাবসেন্টি ব্যালটের উপর গুরুত্বারোপ করে বলে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে। ফলে বোর্ড অব ইলেকশন অফিস নিউইয়র্কের ৭ লক্ষাধিক ভোটারের নামে তাদের বাসা-বাড়ির ঠিকানায় ব্যালট পেপার প্রেরণ করে বলে সূত্র জানায়।
মঙ্গলবার ২৩ জুনের প্রাইমারী নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশদ্ভুত প্রার্থীদের মধ্যে ইউএস কংগ্রেসওম্যান পদে নিউইয়র্কের কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট-১৪ থেকে বদরুন্নাহার মিতা এবং কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট-৫ থেকে সানিয়াত চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নিউইয়র্ক স্টেটের অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ (কুইন্স ব্রীজ, লং আইল্যান্ড সিটি, সানি সাইড, উডসাইড, ম্যাসপাথ ও রিজউড) থেকে অ্যাসেম্বলিওম্যান পদে মেরী জোবায়দা, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-২৪ থেকে মাহফুজুল ইসলাম এবং অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৪ থেকে জয় চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এয়াড়াও ডেমোক্র্যাট দলীয় ডিস্ট্রিক্ট লীডার পদে অ্যাসেম্বলী ডিস্ট্রিক্ট-২৪ থেকে ফিমেল লীডার পদে মৌমিতা আহমেদ, মেল লীডার পদে মাহতাব খান ও ইশতিয়াক চৌধুরী, অ্যাসেম্বলী ডিস্ট্রিক্ট-৩২ থেকে মেল লীডার পদে মোহাম্মদ চৌধুরী ও ফিমেল লিডার পদে মোবাসসেরা বেগম, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে ফিমেল লিডার পদে সাঈদা আক্তার, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৫৪ থেকে মেল লিডার পদে নাফিজ আই চৌধুরী, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৮৭ থেকে মেল লীডার পদে এন মজুমদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অপরদিকে অ্যাসেম্বলী ডিস্ট্রিক্ট-২৪ থেকে জুডিলিয়াল ডেলিগেট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোহাম্মদ এম রহমান। এয়াড়াও নিউইয়র্কের স্টেট অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্র্রিক্ট-২৪ থেকে কমিটিওম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জামিলা আক্তার উদ্দিন।
এদিকে বাংলাদেশী অধ্যুষিত নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৩২ থেকে পুন: নির্বাচিত হলেন বর্তমান সিনেটর লুইস সেপুলভেদা। যিনি বাংলাদেশী কমিউনিটিতে ‘লুইস ভাই’ নামে সমধিক পরিচিত। এই আসনে লুইস সেপুলভেদা পেয়েছেন ৭,০৫৫ অর্থাৎ ৫৩ দশমিক ৭% ভোট। অপর প্রার্থীদের মধ্যে পামেলা স্টেওয়ার্ট-মার্টিনেজ পেয়েছেন ৪,৫০৩ অর্থাৎ ৩৪ দশমিক ৩% ভোট। আর জন পেরেজ পেয়েছেন ১,৫৪০ অর্থাৎ ১১ দশমিক ৭% ভোট।
অপরদিকে এবারের নির্বাচনে নিউইয়র্ক ষ্টেটের অ্যাসেম্বলী ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ আসনের আলোচিত প্রার্থী মেরী জোবায়দা পেয়েছেন ৩৩% অর্থাৎ ২,৭১১ ভোট। এই আসনে বিজয়ী বর্তমান অ্যাসেম্বলীওমান ক্যাথেরিন নোলান পেয়েছেন ৫২ দশমিক ৫% অর্থাৎ ৪,৩১৪ ভোট। এই আসনের ৩জন প্রার্থীর মধ্যে মেরী জোবায়দার আসন দ্বিতীয়।
অ্যাসেম্বলী ডিস্ট্রিক্ট-৩৪ আসনে জয় চৌধুরী পেয়েছেন ১৫ দশমিক ১% অর্থাৎ ৯৪৩ ভোট। তার এই আসনে বিজয়ী জেসিকা গঞ্জালেজ-রোজাস পেয়েছেন ৪০ দশমিক ৪% অর্থাৎ ২,৫১৪ ভোট। এই আসনের ৫জন প্রার্থীর মধ্যে জয়ের আসন তৃতীয়।
কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট পদে ডনোভান রিচার্ড এগিয়ে : বাংলাদেশী অধ্যুষিত নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট পদে ডনোভান রিচার্ড ৩৯,৮৬১ অর্থাৎ ৩৬ দশমিক ৮% ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এই পদের অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে এলিজাবেথ ক্রাউলী পেয়েছেন ৩০,৭০৪ অর্থাৎ ২৮ দশমিক ৪% ভোট, কস্টা কন্সটানটিনিডিস পেয়েছেন ১৬,০৩৬ অর্থাৎ ১৫ দশমিক ৫% ভোট, এন্থনী মিরান্ডা পেয়েছেন ১৬,০৩৬ অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৮% ভোট আর দাও ইয়াইন পেয়েছেন ৪,৮৪১ অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫% ভোট।
Posted ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh