বাংলাদেশ ডেস্ক : | বুধবার, ২৪ জুন ২০২০
করোনাভাইরাসের প্রভাবে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিগ অ্যাপল’খ্যাত শহর নিউইয়র্কেও তার প্রভাব পড়েছে। কাজ নেই। বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। কোম্পানিগুলোয় হরহামেশাই হচ্ছে কর্মী ছাঁটাই। কিছু কিছু কর্মীবান্ধব প্রতিষ্ঠান আবার এর মধ্যেই অনলাইনে চাকরির সুযোগ তৈরি করেছে। এতে বিকল্প পন্থা খুঁজছেন নিউইয়র্কবাসী। বিলাসবহুল এ শহরের খরচ কুলিয়ে উঠতে না পেরে নিউইয়র্ক ছাড়ছে মানুষ।
রয়টার্স জানায়, রেবেকা রোসলার ও তার স্বামী মার্চ মাসে চিরতরে ম্যানহাটন ছাড়ার চিন্তা করেননি। তিন সন্তান নিয়ে তারা নিউইয়র্কের ৫০ মাইল উত্তরে বাবা-মায়ের শূন্যবাড়িতে উঠেছিলেন। মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত ৪০ বছর বয়সী রোসলার বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ পর আমরা আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার বাচ্চারা সবাই পাজামা পরেছিল। খাবার ও মালামাল দিয়ে গাড়ি বোঝাই করেছিলাম। কিন্তু আর ফেরা হল না।’
দু-এক সপ্তাহ এভাবে কয়েক মাস নিউইয়র্ক করোনা প্রকোপের বিশ্বকেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হল। রোসলাররা মে মাসেও ফিরতে পারেননি। তারা এখানে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে তাদের অ্যাপার্টমেন্টের ইজারা ভেঙে দেয়। রোসলার বলেন, তিনি ম্যানহাটনের প্রতিবেশীদের ভালোবাসতেন। কিন্তু ছোট ছোট দুই বেডরুমের একটি অ্যাপার্টমেন্টে তার ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনা করা প্রায় অপ্রতিরোধ্য ছিল। তার স্বামী অলাভজনক একটি সংস্থায় দূরে থেকে চাকরি করেন। রোসলারদের মতো আরও বহু মানুষ নিউইয়র্কের মতো বৃহত্তম মেট্রোপলিসে থাকবেন কি না, তা বিবেচনা করছেন। উচ্চ ব্যয়, ছোট থাকার জায়গা, জনঘনত্ব ও গণপরিবহনের ওপর নির্ভরতায় সামাজিক দূরত্ব মানা খুবই কঠিন। রিয়েল এস্টেট ফার্ম ব্রাউন হ্যারিস স্টিভেনসের প্রধান নির্বাহী বেস ফ্রিডম্যান বলেন, কিছু নিউইয়র্কবাসী বিকল্প বিবেচনা করছেন। কিছু আবার নিউইয়র্ক ছাড়ছেন। কারণ, তারা অন্য লোকের সঙ্গে লিফট ভাগাভাগি করতে চায় না। তারা এখানে তাদের বাচ্চাদের বড় করতে চায় না।’
শহরের অনেক ব্যবসায়ী তাদের কর্মীদের ঘরে বসে অনলাইনে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। ফলে কেউ কেউ অফিসে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ৩৩ বছর বয়সী মা স্টেফানি এলিস বলেন, ‘আমি যদি বাড়ি থেকে কাজ করতে পারি, তবে আমার কি এখানে (নিউইয়র্ক) থাকার দরকার আছে?’ এলিস তার স্বামী-সন্তানদের নিয়ে গত মার্চে ম্যানহাটন থেকে নিউজার্সির মার্লবোরো শহরে চলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘সেখানে বসবাসের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ গুনতে হয়। শহরটি আমরা যেমন চাই বাস্তবে তেমন আর নেই। আমরা আর ফিরে যাচ্ছি না।’
কাজ না থাকায় অনেকের হাতে নগদ অর্থও নেই। ফলে তাদের ইচ্ছা থাকলেও তারা শহর ছাড়তে পারছেন না। ম্যানহাটনে বসবাসকারী অভিনেতা ও পরিচালক জুডি ডড বলেন, সংহতির এক
অনুভূতি তাকে অস্থির এ শহরে থাকতে বাধ্য করেছিল। সাম্প্রতিক নাগরিক অস্থিরতায় তিনি মন পরিবর্তন করেছিলেন। কিন্তু তিনি এখনই শহর ছাড়ার সামর্থ্য রাখেন না। কারণ, তার কাছে নগদ টাকা নেই। কাজও নেই। মহামারীতে কতজন নিউইয়র্ক শহর ছেড়েছেন বা যারা ছেড়েছিলেন তারা ফিরে আসবেন কি না, তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। নিউইয়র্ক সিটির জনসংখ্যা মহামারীর আগেও হ্রাস পাচ্ছিল। ২০১৯ সালের ১ জুলাই মার্কিন জনগণনা ব্যুরো অনুসারে, গত ১২ মাসে প্রায় ৮০ লাখ জনসংখ্যার এ শহর থেকে ৫৩ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা পালিয়েছেন।
Posted ২:৫০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৪ জুন ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh