রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচুন

জাফর আহমাদ   |   বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচুন

প্রচন্ড তাপদাহে সারাদেশের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত, চারদিকে মানুষের হা-হুতাশ শুরু হয়ে গেছে। আসলে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি ও অসহনীয় তাপমাত্রাসহ দুর্ভিক্ষ, বন্যা, ভুমিকম্প, মহামারী, দাঙ্গা, যুদ্ধ-বিগ্রহ আল্লাহ তা’আলার ক্রোধের বহি:প্রকাশ। মানুষের অপকর্ম, অপরাধ ও গুনাহের শাস্তির সতর্ক সংকেত। এগুলো আল্লাহ দেন যাতে মানুষ সর্বপ্রকার গোনাহের কাজ পরিহার করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং বড় শাস্তি থেকে নিস্কৃতি পায়।সুতরাং বড় শাস্তি আসার আগেই এবং বিরাজমান অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও অনাবৃষ্টির বিপর্যয় থেকে মুক্তির জন্য তাওবা ইস্তেগফার করে আল্লাহর আনুগত্যের সীমানায় ফিরে আসুন। আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করুন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, সেই বড় শাস্তির পূর্বে আমি এ দুনিয়াতেই(কোন না কোন) ছোট শাস্তির স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করাতে থাকবো, হয়তো তারা (নিজেদের বিদ্রোহাত্মক নীতি থেকে) বিরত হবে।”

(সুরা আস সেজদা:২১) বড় শাস্তি বলতে আখিরাতের শাস্তিকে বুঝানো হয়েছে। কুফরী ও ফাসেকীর অপরাধে এ শাস্তি দেয়া হবে। এর মোকাবেলায় ছোট শাস্তি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে এ দুনিয়ায় মানুষ যেসব কষ্ট পায় সেগুলো। যেমন ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন রোগ, নিজের প্রিয়তম লোকদের মৃত্যু, ভয়াবহ দুর্ঘটনা,মারাত্মক ক্ষতি, ব্যর্থতা ইত্যাদি। সামাজিক জীবনে ঝড়-তুফান,ভূমিকম্প, বন্যা, মহামারী, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, যুদ্ধ এবং আরো বহু আপদ-বিপদ, যা লাখো লাখো কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে। এসব বিপদ অবতীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন ও কল্যাণকর দিক বর্ণনা করে বলা হয়েছে, এর ফলে বড় শাস্তি ভোগ করার আগেই যেন মানুষ সচেতন হয়ে যায় এবং এমন চিন্তা ও অন্যকথায় এর অর্থ হবে দুনিয়ায় আল্লাহ মানুষকে একেবারেই পরামানন্দে রাখেননি। নিশ্চিন্তে ও আরামে জীবনের গাড়ি চলতে থাকলে মানুষ এ ভুল ধারণায় লিপ্ত হয়ে পড়বে যে, তার চেয়ে বড় আর কোন শক্তি নেই যে, তার কোন ক্ষতি করতে পারে।


বরং আল্লাহ এমন ব্যবস্থা করে রেখেছেন যার ফলে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি, জাতি ও দেশের ওপর এমন সব আপদ-বিপদ পাঠাতে থাকেন, যা তাদেরকে একদিকে নিজেদের অসহায়তা এবং অন্যদিকে নিজেদের চেয়ে বড় ও উর্ধ্বে একটি মহাপরাক্রমশালী সর্বব্যাপী শাসন ব্যবস্থার অনুভূতি দান করে। এ বিপদ প্রত্যেকটি ব্যক্তি,দল ও জাতিকে একথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তোমাদের ভাগ্য যে, তোমাদের ভাগ্য ওপরে অন্য এক সত্তা নিয়šত্রণ করছেন। সবকিছু তোমাদের হাতে দিয়ে দেয়া হয়নি। আসল ক্ষমতা রয়েছে তার হাতে যিনি কর্তৃত্ব সহকারে এসব কিছু করে চলেছেন। তার পক্ষ থেকে যখনই কোন বিপদ তোমাদের ওপর আসে, তার বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধ তোমরা গড়ে তুলতে পারো না ।

বর্তমান তাপমাত্রা বিচার করলে এ বিপদ নিছক বিপদ নয় বরং আল্লাহর সতর্ক সংকেত। সত্য জানাবার এবং আমাদের বিভ্রান্তি দূর করার জন্যই পাঠানো হয়েছে। এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদেরকে খুব দ্রুত নিজেদের বিশ^াস ও কর্ম শুধরে নিতে হবে। তাহলে আল্লাহর বড় শাস্তির মুখোমুখি হবার কোন প্রয়োজনই দেখা দিবে না। আমাদের ঈমানের দুর্বলতা ও পার্থিব জীবনের লোভ-লালসার কারণে বিপদ-আপদ দিয়ে আমরা অসহায়ের সাগরে ভাসছি। আমরা যদি আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করি তাহলে এ বিপদ আল্লাহ তুলে নিবেন। সাম্প্রতিক বাংলাদেশে মারাত্মক কতগুলো বড় বড় গোনাহের ব্যাপকতা লাভ করেছে। বড় কোন বিপর্যয় নেমে আসার আগেই আমাদেরকে সতর্ক হতে হবে। যারা এ গোনাহগুলোর সাথে জড়িত আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ অবিলম্বে এগুলো পরিত্যাগ করুন। নিজে বাঁচুন, দেশ ও দেশের জনগণকে বাঁচান। কারণ বিপদ যখন আসে দোষী-নির্দোষী সকলকে সমভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।


১.জুলুম-নির্যাতন: সাম্প্রতিক জুলুম-নির্যাতনের হার যে কোন সময়ের চেয়ে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন যাই থাকুক, বিবেকের নূন্যতম নৈতিক চাহিদাটুকুও যদি অবশিষ্ট না থাকে। ক্ষমতাবান হয়েছে বলে নূন্যতম মানবিক মূল্যবোধের ডাকটাও না শুনেন, তাহলে মানুষ জুলুম-নির্যাতনের শিকার হবেই। অহরহ হচ্ছেও তাই। দেশের প্রতি সেক্টরে এই জুলুম ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের নিজস্ব আইন-কানুন ও রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন ক্ষমতার কাছে ইদানিং বার বার হেরে যাচ্ছে। বার বার পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হওয়ার পরও তার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। ফলে দুর্বলেরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। কোন তরফ থেকে এ জুলুম অবসানের কোন কার্যকর উদ্যেগ নেয়া হচ্ছে না। বিশাল কোন বিপর্যয় নিমে আসার আগেই জুলুমবাজদের হাত গুটিয়ে নিতে হবে। সরকারকে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।

২. শিরকের প্রসার: মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ জনপদে ইদানিং শিরকের প্রচার ও প্রসার ব্যাপকতা লাভ করেছে। মুসলিম প্রধান দেশে মুসলমানরা নিজেদের কৃষ্টি-কালচারের পরিবর্তে অন্য জাতি-গোষ্ঠীরচাপিয়ে দেয়া কৃষ্টি পালন করতে হচ্ছে। ইসলামী অনুশাসন মানা ও চর্চার ওপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ইসলাম মানা, কুরআন চর্চা ও সালাত আদায় করতে পারছে না। অথচ ইসলাম ছাড়া অন্যান্য সকল ধর্মের লোকেরা তাদের ধর্মচর্চা স্বাধীনভাবে পালন করতে পারছে। পহেলা বৈশাখের নামে শিরকের বিশাল মহড়া চালানো হয়েছে। পূজা-অর্চনা সবই চলতে পারে কিন্তু মুসলমানদের কুরআন শিক্ষা ও সালাত আদায়ের অনুমতি পাওয়া যায় না। সারাদেশে প্রচন্ড তাপমাত্রা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মুসলমানরা স্বতস্ফুর্ত ইস্তেস্কার সালাত আদায় করছে। তারই অংশ হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম সন্তানেরা সালাতুল ইস্তেস্কার সালাত আদায়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায় নাই। এই পরিস্থিতিতে আল্লাহর গযব তো আসবেই। বর্তমান তাপদাহ থেকে আরো কঠিন বিপর্যয় নেমে আসার আগেই এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে।


৩.দুর্নীতি ও লুটপাট: দুর্নীতি ও লুটপাট অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় অধিকহারে বেড়ে গেছে। যাকে যেখানেই ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে, সেখানেইসে দুর্নীতি ও লুটপাটের রেকর্ড গড়ছে ও ভাঙ্গছে। যা রীতিমতো রূপকতার কল্পকাহিনীকেও হার মানাচ্ছে। সাপ্্রতিক কালে এ রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়ার প্রতিযোগীতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষমতা থেকে অব্যাহতি লাভ করার সাথে সাথে দুর্নীতির সিরিজ প্রকাশ হতে থাকে। কানাডার বেগমপাড়া, আমেরিকার বাড়ী-গাড়ি ও সে দেশের ব্যাংক ব্যালেন্স, সুইজ ব্যাংকের জমা হিসাবের স্থিতি ও টাকা পাচারের কাহিনী পত্রিকাগুলোর উপাদেয় হয়। দেশের মানুষের দুর্দশা ও দুর্ভোগের খবর ভাইরাল হয় না, কিন্তু দুর্নীতিবাজদের অপরিমিত বিলাসী জীবন কাহিনী ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। অবৈধ আয়-উপার্জন বন্ধ করতে হবে। একজন মানুষ বেঁচে থাকার জন্য কতটুকু সম্পদ প্রয়োজন হয়। আপনি তো আর কয়েক শ’ বছর বেঁেচ থাকতে পারবেন না। বৈধ হোক আর অবৈধ হোক সম্পদ তো সাথে করে নিতে পারবেন না। সুতরাং কেন আপনি দেশের কোটি কোটি মানুষের সম্পদ লুট করবেন? নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ রাষ্ট্রকে ফেরত দিন। মরণের আগে এই ধরণের একটি রেকর্ড সৃষ্টি করুন। সকল দুর্নীতিবাজরা আপনার কাছ থেকে শিখবে।

৪. অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা প্রসার: বেহায়াপনা ইদানিং গা সহায় হয়ে পড়েছে। চরম লজ্জাস্কর বিষয়কেও এখন লজ্জা মনে হয় না। যিনা-ব্যভিচার প্রসার লাভ করেছে। ইবনে মাযাহর একটি হাদীসের মূল বক্তব্য হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সা: বলেন, হে মুহাজিরগণ! পাঁচ কারণে যমীনে বিপর্যয় নেমে আসে, আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হয় না। তাহলো, মানুষের গোনাহ যিনা-ব্যাভিচার, দুর্নীতি-দুশাসন, অংগীকার ভঙ্গ, মাপে কম দেয়া ও সঠিকভাবে যাকাত আদায় না করা। তিনি আরো বলেন, যদি পৃথিবীতে অবলা জন্তু ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুরা না থাকতো তাহলে আল্লাহ তা’আলা কখনো আসমান থেকে বৃষ্টি নাযিল করতেন না।বর্তমান এই পরিস্থিতির জন্য আমরাই দায়ী। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যার ফলে তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করানো যায়, হয়তো তারা বিরত হবে।”(সুরা রুম:৪১) তাফসীরকারকগণ লোকদের ‘স্বহস্তের উপার্জন’ বাক্যাংশের অর্থ করেছেন, ফাসেকী, অশ্লীলতা, জুলুম ও নিপীড়নের এমন একটি ধারা যা শিরক ও নস্তিক্যবাদেরআকীদা-বিশ্বাস অবলম্বন ও আখেরাতকে উপেক্ষা করার ফলে অনিবার্যভাবে মানবিক নৈতিক গুণাবলী ও চরিত্রের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে থাকে।

সুতরাং আল্লাহকে ভয় করুন, সকল পাপকাজ পরিত্যাগ করুন। মনে রাখবেন, যদি আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতে পারেন, তাহলে এ জনপদে আল্লাহর রহমত একটার একটা নেমে আসবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“জনপদের লোকেরা যদি ঈমান আনতো ও তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতো তাহলে আমি আসমান-যমীনের বরকতের ভাণ্ডার খুলে দিতাম।”(সুরা আরাফ: ৯৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,“আর নিজের রহমতের আগেভাগে বাতাসকে সুসংবাদাতারূপে পাঠান। তারপর আকাশ থেকে বর্ষন করেন বিশুদ্ধ পানি।”(সুরা ফুরকান:৪৮) সুতরাং আল্লাহকে ভয় করুন, গোনাহ পরিত্যাগ করুন, আল্লাহর ক্রোধ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।

Posted ২:২২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(693 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.