মাওলানা আবদুল হক | শুক্রবার, ০২ জুলাই ২০২১
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘মুমিনরা তওবাকারী, ইবাদতকারী, (আল্লাহর) প্রশংসাকারী, রোজা পালনকারী, আল্লাহর পথে ভ্রমণকারী, রুকুকারী, সেজদাকারী, সৎকাজের নির্দেশদাতা, অসৎকাজে নিষেধকারী ও আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী। এই মুমিনদের শুভ সংবাদ দাও।’সুরা তাওবা : ১১২
একজন ইমানদার মানুষ কেবল মহান আল্লাহর অস্তিত্ব বিশ্বাস করেই পার পাবে না। মহান আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ ইমানদার হিসেবে বিবেচিত হতে তাকে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও ধর্মীয় আরও বহু দায়িত্ব পালন করতে হয়। কোরআনে কারিমের বিভিন্ন স্থানে উল্লিখিত আয়াতে এসব দায়িত্ব, কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ওই সব আয়াতে ফরজ ইবাদতসমূহ পালনের পাশাপাশি নিজেদের জীবন ও সম্পদ আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করার কথা বলা হয়েছে। এই আয়াতে মুমিনদের আরও কয়েকটি গুণ উল্লেখ করে, এসব গুণ অর্জনকারী মুমিনের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। গুণগুলো হলো
এক. ইমানদার নিজের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করে।
দুই. ইমানদার নিজের পাপাচার থেকে তওবা করে। মুমিনের জীবনে বারবার এমন সময় আসতে পারে, যখন সে সাময়িকভাবে আল্লাহর সঙ্গে করা তার ইমানি চুক্তির কথা ভুলে যায়। কিন্তু প্রকৃত ইমানদারের বৈশিষ্ট্য হলো এ সাময়িক ভুলে যাওয়ার হাত থেকে যখনই সে রেহাই পায় তখনই নিজের গাফিলতির পর্দা ছিঁড়ে সে বেরিয়ে আসে। তীব্র অনুশোচনা করে সে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, ক্ষমা চায়। প্রতিটি পদস্খলনের পর আল্লাহর পথে ফিরে আসা ইমানের স্থিতি ও স্থায়িত্বের জানান দেয়।
তিন. ইমানদার একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করে। ধারাবাহিক আমল ও আনুগত্যের মাধ্যমে সে তার বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটায়।
চার. ইমানদার সুখে-দুঃখে আল্লাহর প্রশংসা করে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, সুখ ও আনন্দঘন বিষয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি বিনিয়মাতিহি তাতিম্মুস সালিহাত। অর্থাৎ সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যার মাধ্যমে সব ভালো কাজ পূর্ণতা লাভ করে।’ আর দুঃখ ও বেদনাময় বিষয়ে তিনি বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি আলা কুল্লি হাল। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা।’
পাঁচ. মুমিন ব্যক্তি রোজা পালন করে এবং আল্লাহর পথে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করে। বিষয়টি বোঝাতে আয়াতে ‘আস-সায়েহুন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। হাদিসের আলোকে বেশির ভাগ তাফসিরবিদ এর অর্থ করেছেন রোজা রাখা। তবে শব্দটির মূল অর্থ ভ্রমণ করা। সে হিসেবে এই অর্থও এখানে সংগত যে ইমানদাররা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দেশ-বিদেশে পরিভ্রমণ করে। ধর্মীয় প্রয়োজনে হিজরত করা, দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া, পরিচ্ছন্ন ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন করা, আল্লাহর নিদর্শনগুলো পর্যবেক্ষণ করা এবং হালাল জীবিকা উপার্জন করা সবই এই পুণ্যময় ভ্রমণের আওতাধীন।
ছয়. ইমানদাররা রুকু করে। সাত. তারা সেজদা করে। রুকু সেজদা বলতে এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা বোঝানো হয়েছে। আট. তারা ইমান ও আনুগত্যের পথে মানুষকে আহ্বান করে। সৎকাজের নির্দেশ দেয়।
নয়. তারা অসৎকাজে নিষেধ করে। শিরক ও পাপাচার থেকে মানুষকে বাধা দেয়।
দশ. মহান আল্লাহ শরিয়তের যে সীমারেখা নির্ধারণ করেছেন তারা তা পুরোপুরি মেনে চলে। নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক কর্মকাণ্ড এ সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ রাখে। এই শেষোক্ত গুণটিতে আগের সব গুণের সমাবেশ ঘটেছে।
Posted ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh