শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

হৃদয়ের চোখ দিয়ে সৃষ্টিতে স্রষ্টাকে খোঁজা

মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ   |   রবিবার, ২১ জুন ২০২০

হৃদয়ের চোখ দিয়ে সৃষ্টিতে স্রষ্টাকে খোঁজা

সৃষ্টির আদি থেকে মানুষ স্রষ্টার সন্ধান করে চলেছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা, মাজার, কবরস্থান, শ্মশান, পাহাড়, জঙ্গল, মরুভূমি যার যেখানে মন চায়- ধর্ম সাধনা করে চলেছে যুগের পর যুগ। সবার একটাই আরাধনা বিধাতা আল্লাহ, প্রভু, পরমেশ্বর বা জগদেশ্বরের সন্ধান লাভ, যিনি মহাজগতের মহান স্রষ্টা ও বিধাতা। কিন্তু জগৎ জননী যিনি, তিনি কি আসলেই তার সৃষ্টি থেকে অনেক দূরে থাকেন? মালিকে খুঁজতে কি কেউ তার বাগান থেকে বহুদূরে কোথাও যায়? না। মালিকে তার ফুল বাগানেই খুঁজে পাওয়া যায়, স্রষ্টাকে তার সৃষ্টির ভেতরেই সন্ধান করা যায়, অন্য কোথাও নয়। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন, পূর্ব ও পশ্চিম সবই আল্লাহর। অতএব, তুমি যেদিকেই চোখ ফিরাবে, সেখানেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ। (পারা : ১, সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১১৫)

সমগ্র সৃষ্টিতে রয়েছে স্রষ্টার উজ্জ্বল নিদর্শন। এরশাদ হয়েছে, নভোমণ্ডল আর ভূমণ্ডলের সৃষ্টিতে, দিন ও রাতের বিবর্তনে, সমুদ্রের বুকে চলমান নৌযানে, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য সমূহ কল্যাণ, আর আকাশ থেকে আল্লাহ যে বারি বর্ষণ করে মৃত ধরিত্রীকে জীবিত করে তোলেন, আর ধরা পৃষ্ঠে ছড়িয়ে দিয়েছেন সব ধরনের জীবজন্তু আর বাতাসের গতি পরিবর্তনে এবং আকাশ ও জমিনের মাঝে ভাসমান মেঘমালাতে নিশ্চয়ই জ্ঞানবানদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (পারা : ২, সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৬৪)


সুতরাং সৃষ্টির মাঝেই খুঁজতে হবে স্রষ্টাকে। সৃষ্টিকে অবজ্ঞা করে স্রষ্টার ভজনা, সমাজ ছেড়ে বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে-মরুভূমিতে, মাজারে, শ্মশানে আরাধনা করে তাপস বা সাধক উপাধি পাওয়া যেতে পারে কিন্তু প্রভুর সন্ধান পাওয়া যাবে কি? আল্লাহ সীমাহীন ভালোবাসা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এই জগৎটাকে। সৃষ্টির প্রত্যেকটি অংশ মহান স্রষ্টার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। মহাবিশ্বের অতি ক্ষুদ্র ও নগণ্য একটি জিনিসকেও আল্লাহ প্রতিপালন করেন পরম মমতায়। নিজ সন্তানের প্রতি পৃথিবীর সব মায়ের সম্মিলিত ভালোবাসার চেয়েও সৃষ্টির ওপর স্রষ্টার ভালোবাসা অনেক বেশি। সন্তানকে ভালোবাসলে যেমন বাবা-মা খুশি হন, তেমনি সৃষ্টিকে ভালোবাসলে খুশি হন আমাদের সৃষ্টিকর্তা। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিবারভুক্ত। সুতরাং আল্লাহর কাছে সব থেকে প্রিয় ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহর পরিবারের সদস্যদের (সৃষ্টির) সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। (আল মুজামুল আওসাত, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৩৫৬, হাদিস : ৫৫৪১, হুল্লিয়্যাতুল আওলিয়া, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১০২, শুআবুল ঈমান, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ৫২৩, হাদিস : ৭০৪৮, মুসনাদে শাফি, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৪১৯, হাদিস : ৪৩৫, তাফসিরে মাজহারি, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৪০৯)
সৃষ্টির প্রতি করুণা নিজের প্রতি স্রষ্টার করুণাকে আকৃষ্ট করে। স্রষ্টার সৃষ্টিকে যে যত বেশি ভালোবাসবে স্রষ্টাও তাকে ততবেশি ভালোবাসবেন।

আল্লাহর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত ও মর্যাদাবান হলো মানুষ। মানুষকে আল্লাহ সবার চেয়ে সুন্দর অবয়ব দিয়ে নিজের প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে, তিনিই আল্লাহ, যে পৃথিবীকে তোমাদের বসবাসের উপযোগী করে তৈরি করেছেন আর আকাশকে করেছেন ছাদস্বরূপ এবং তিনি তোমাদের আকৃতি দান করেছেন আর সব থেকে সুন্দর আকৃতিতে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি তোমাদের পবিত্র রিজিক দান করেছেন। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। কতই না সুন্দর সমগ্র জগতের প্রতিপালক, আল্লাহ (পারা : ২৪, সূরা, আল-মুমিন, আয়াত : ৬৪)


জগতের সৃষ্টিরাজির শ্রেষ্ঠ হিসেবে আল্লাহ অন্য সব সৃষ্টিকে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। এরশাদ হয়েছে, তিনিই সেই মহান সত্তা যে পৃথিবীর বুকে যা কিছু আছে সব তোমাদের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আকাশের প্রতি মনযোগ দিয়েছেন। আর তৈরি করেছেন সপ্তাকাশ। তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ। (পারা : ১, সূরা, আল-বাকারা, আয়াত : ২৯)
আরও এরশাদ হয়েছে, তিনিই আল্লাহ, যে সমুদ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। যাতে তার নির্দেশে নৌযান চলতে পারে আর তোমরা সেখানে তার অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার। (পারা : ২৫, সূরা আল-জাসিয়া, আয়াত : ১২)

আল্লাহ মহাবিশ্বের বুকে সৃষ্টির সেরা মানুষের প্রয়োজনে যাবতীয় আয়োজন করে রেখেছেন। প্রত্যেকটি জনপদকে সেখানে বসবাসকারী মানুষের উপযোগী জলবায়ু ও আবহাওয়ায় সমৃদ্ধ করেছেন। সেখানকার বৃক্ষ-তরুলতা আর ফল-ফসলকে করেছেন তার অধিবাসীদের খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী স্বাদে-গন্ধে সমৃদ্ধ। আর প্রতি ভূখণ্ডকে করেছেন সেখানকার অধিবাসীদের প্রয়োজনীয় সম্পদের আধার। সুতরাং খোদার সৃষ্টিতে কোনো মানুষ অন্নে-বস্ত্রে কষ্ট পাওয়ার কথা নয়। অর্থ দৈন্যে কারও জীবন সংকটাপন্ন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তার পরও মানুষ কষ্ট পায়, অর্থের অভাবে জীবনের যাতনায় পিষ্ট হয়। হে আল্লাহ মানুষকে প্রকৃতি দেখার চোখ দিন। তখন হয় তারা তোমাকে চিনবেন।


লেখক : পেশ ইমাম, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ

advertisement

Posted ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২১ জুন ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(680 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.