আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
আমাদের নবী মুহম্মদ (সঃ)সকল ধর্মের সকল বর্ণের সকল জাতির জন্য নেয়ামত স্বরূপ প্রেরিত মহামানব। তিনি সঠিক নির্ভূল ও একমাত্র শান্তির ধর্মের পথ পদর্শক। তাঁর জীবন শান্তির জীবন তাঁর নির্দেশিত পথ সহজ সরল ও সঠিক পথ। তাঁর গাইড লাইন মহান আল্লাহর প্রেরিত অপরিবর্তিত সংবিধান আল কুরআন। এছাড়াও আমরা আমাদের নবী মুহম্মদ (সঃ)কে প্রাণ প্রিয় ভালোবাসার আরো বহু কারণ বিদ্যমান। তিনি শুধু মক্কা নগরীর জনমানবের মুক্তির জন্য আবির্ভূত হননি, কিংবা মদিনা নগরীকে শান্তিময় করার জন্য তাঁর আগমন ঘটেনি। তাঁর জন্ম হয়েছে পৃথিবীতে যত মানুষ এসেছে এবং আসবে সকল ধর্মের সকল বর্ণের সকল জাতি গোষ্ঠীর নারী পুরুষ সকলের ইহকাল ও পরকালের মুক্তির জন্য। তাঁর পথ সহজ সরল ও সঠিক পথ। একজন মুসলমানের চুল কাটা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত যিনি শিক্ষা দিয়েছেন তিনি বিশ্বনবী মুহম্মদ (সঃ)। আমাদের প্রিয় নবীর মর্যাদা আরো কত কারণে বেশি তার মধ্যে কিছু বিষয় এখানে উল্লেখ করলাম। মিরাজের রাতে সত্তর হাজার ফেরেস্তা তাঁর পেছনে নামায পড়েছিলেন, সেই কারণে তিনিই ইমামুল মুরসালিন। এছাড়াও এক লাখ মতান্তরে দুই লাখ চব্বিশ হাজার পয়গম্বর সেখানে তাঁর মুসুল্লী ছিলেন। তিনিই বলেছেন, এমন কোনো নবী নেই যিনি আমার হাতের ব্যনারের কাতার ছাড়া জান্নাতে যেতে পারবে। অর্থাৎ তিনি জান্নাতের পুরুষদের, সকল নবীদেরও অভিভাবক তিনিই।
পৃথিবীতে এমন কোনো লোকের আগমন ঘটেছে? যার জন্মকে কেন্দ্র করে অলৌকিক ঘটনাগুলো ঘটেছে? তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহর সাথে আমেনার বিয়ে হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আবদুল্লাহর কপালে নূরের চমক ছিলো। ফলে তৎকালীন ধনাঢ্য ব্যক্তির কন্যারা গোটা আরবের সুন্দরীরাসহ আরবের জ্ঞানী গুনী নারীরা আবদুল্লাহকে বিয়ে করতে পাগলপারা ছিলো। তখনকার গনকরা বলতো আবদুল্লাহর কপালে নাকি চাঁদ ছিলো। মরু ভূমির উত্তপ্ত অঞ্চল মক্কায় নবী মুহম্মদের জন্ম। কিন্তু তাঁর জন্মের পূর্বে তাঁর মাতা আমেনা ঘর থেকে বের হলে আকাশের একগুচ্ছ মেঘ এসে তাঁকে ছায়া দিতো। তাঁর মা আমেনা এবং দুধ মা হালিমা কুয়া থেকে পানি ওঠাতে গেলে দেখতেন পানিতে পরিপূর্ণ কুয়ার মুখ পর্যন্ত। প্রত্যেক মানুষের জন্মের পর নাড়ি কাটতে হয় কিন্তু তাঁর জন্মের পর তাঁর নাড়ির মাথা কাটতে হয়নি, নাড়িটা কাটাই ছিলো। নবী মুহম্মদের জন্মে মা আমেনার যেমন কষ্ট হয়নি তেমনি মায়ের পেট থেকে কোন রক্ত নিয়েও তিনি ভূমিষ্ট হননি বরং সবাই অবাক হলো কেউ যেন তাঁকে গোসল করিয়ে দিয়েছে। জন্মের সময় সেই ঘরটি সুগন্ধিময় হয়েছিলো। আছে কি কারো জীবনের সাথে এমন মিল? এই নবীর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের ধর্মের পূর্নাঙ্গতা দিয়েছেন তিনি বলেছেন- “আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম ওআতমামতু আলাইকুম নেমাতি ওরাজিতু লাকুমুল ইসলামা দ্বীনা”। তাই তিনি পনেরশত বছর আগে যা বলে গেছেন সবই সত্য হচ্ছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত সব সত্য হবে। এই বিশ্বাসের কারণে আমরা তাঁকে সম্মান করি।
মাইকেল এইচ হার্ট একজন অমুসলিম হয়েও তাঁর দি হান্ড্রেড নামক বইতে একশো জন শ্রেষ্ঠ মানুষের জীবনী লিখে আমাদের নবী মুহম্মদকে সর্বাধিক সম্মানিত ও বিজ্ঞ বিচক্ষণ হিসেবে তাঁর নাম সবার প্রথমে ব্যবহার করে স্বীকৃতি দিয়েছেন। গোটা দুনিয়ায় তাঁর মতো আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমাদের মহানবী তিনিই যিনি চারিত্রিক মাধুর্যেও উঁচু স্তরের। মহানবীর বয়স যখন পঞ্চাশ বছর তখন পর্যন্ত হযরত খাদিজা রাঃ ইন্তেকালের আগে মহানবী (সঃ) দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। অথচ মুহম্মদ (সঃ)কে আল্লাহ চল্লিশজন পুরুষের শক্তি এক সাথে দিয়েছেন। তবু এই বয়স্কা নারীই তাঁর অন্তরঙ্গ সঙ্গী ছিলেন। কোন কোন কোন অজ্ঞরা বলে থাকেন তিনি বহু বিবাহ করেছেন নারীর আকর্ষণে। বরং আল্লাহ বিবাহ করিয়ে দিলেন সমাজের বহু সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে। এজন্য আল্লাহ নিজেই ঘোষনা দিলেন “ইন্নাকালা আলা খুলুকিন আযীম” আপনাকে দেয়া হয়েছে উত্তম চরিত্র।
আল্লাহ নিজেই মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে তাঁকে সৃষ্টি করেছেন। হযরত আদম (আঃ) থেকে মুহম্মদ (সঃ) পর্যন্ত সব নবীই তাঁর নাম নিয়ে দোয়া করতেন। আল্লাহ নিজেই নবীর নাম ধরে ডাকেননি। তিনিই সম্মান করেছেন সর্বোচ্চ। তিনি জগতের শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়ার পরও তিনি ঘোষনা করেছেন আমি তোমাদের মতই মানুষ। তাঁর শানেই রচিত হয়েছে বিশ্বের সর্ব শ্রেষ্ঠ কবিতা “বালাগাল উলা বেকামালিহি
কাশাফাদ্দুজা বেজামালিহি
হাসানাত জামিউ খেছালিহি
সাল্লু আলাইহে ও আলিহি”,,,
তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি নিজের স্বার্থের জন্য কিছুই করেননি। পৃথিবীতে বহু মহামানবের আগমন ঘটেছে আবার পতনও হয়েছে, কিন্তু আমাদের মহানবী (সঃ) এর পতন হয়নি। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যার গুনাগুন সকল মহামানবের গুনেরও বেশি। এরচেয়ে আর বেশি গুনের লোক আমরা খুঁজে পাইনি। আমাদের মহানবীর দোষ খুঁজতে, তাকে হত্যা করতে বহুজন গিয়েছিলো। সবাই নতজানু হয়েছে, নিজের মস্তক অবনত করেছে। আজো বড় বড় জ্ঞানীরা তাঁর কথার উদৃতি দিয়ে নিজেদেরকে ধন্য করে। পৃথিবী সৃষ্টির আগেও তাঁর মর্যাদা ছিলো, পৃথিবীতে আছে, পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত থাকবে। পরকালেও তাঁর নেতৃত্ব কর্তৃত্ব থাকবে এই বিশ্বাসে আমরা তাঁকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। তাঁর মতো বা তার চেয়ে বেশি মর্যাদাবান কেউ থাকলে বা কারো কাছে সন্ধান থাকলে বিশ্ববাসীকে জানান। বরং সবাই নবী মুহম্মদ (সঃ) কেই বলতে হবে শ্রেষ্ঠ।
শুধু তাই নয় আরো জেনে রাখুন- আল্লাহ নিজেই করআনের সূরা আলে ইমরানের ৩১ নং আয়াতে বলেছেন – ইনকুনতুম তুহেব্বুনাল্লাহা ফাত্তাবেউনি ইউহবেবকুমুল্লাহ। আল্লাহকে ভালোবাসলে নবীকে ভালো বাসতেই হবে। সুরা নিসার ৫৯ নং আয়াতে বলেছেন “ওয়াআতিউল্লাহা ওয়াআতিউর রাসূল উলিল আমরে মিনকুম” তোমরা আল্লাহকে অনুস্বরণ করো তারপর নবীর অনুস্বরণ তরো তারপর তোমাদের মধ্যে যে কর্তা তার অনুস্বরণ করো”। আল্লাহ আরো বলেছেন, “লাকাদ কানা লাকুম ফি রাসূলিল্লাহে উসওয়াতুন হাসানা” অর্থাৎ “তোমাদের জন্য রাসূল এর জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” এই যে ডিসিপ্লিন সেটা আপনি কোথায় পাবেন?
আমরা জানি সাধারন জনগন আমাদের নবীর ধর্ম আদর্শ খুব পছন্দ করে এবং মেনে চলতে চায় কিন্তু কিছু ক্ষমতালোভী ও স্বার্থান্বেষী ইসলামের আদর্শ চলতে চালাতে দিতে চায়না। অথচ আমাদের নবী বিশ্বের দূঃখী মানবতার জন্য শান্তির পয়গাম নিয়ে আসা মহামানব নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ)। পৃথিবীর সকল প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীগণ এবং সকল পর্যায়ের শাসকগণের নিকট আকুল আবেদন করছি তাঁর জীবনীটা পড়ুন তাহলে বুঝতে পারবেন সকল মুসলিম কেন তাঁর অসম্মানে নিজেদের জীবন দিতেও প্রস্তুত। কেন এত ভালোবাসা। কেন তাঁর জীবিতাবস্থায় সাথীগণ জীবন দিয়েও তাঁর কথা পালনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। একটি সূর্য যেমন বহু দূর থেকে দেখে ছোট মনে হয় কিন্তু তা পৃথিবী থেকে তের লক্ষ গুন বড়, যতই কাছে যাবেন আপনি হারিয়ে যাবেন। তেমনি আমাদের নবী মুহম্মদের জীবনী যতই খুঁজতে যাবেন আপনিও তার প্রেমে হারিয়ে যাবেন। এটি হেরার পরশে স্বর্গীয় ছোঁয়া। একজন মানুষ কত বছরই আর বেঁচে থাকে? মৃত্যু যেমন সত্যি তেমনি মুহম্মদের পথও সত্যের পথ শান্তির পথ। আসুন বিশ্বের সকল মানুষ তাঁর নির্দেশিত পথ অনুস্বরণ করে বিশ্বে শান্তির পতাকা উড়িয়ে দেই।
Posted ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh